প্রায় তিন দশক পরে বিজ্ঞানীরা একটি নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছেন। বিজ্ঞান জগতে এই আবিষ্কারটি বিরাট সাড়া ফেলে দিয়েছে। টেইক্সোব্যাকটিন নামের এই অ্যান্টিবায়োটিকটির সাহায্যে ব্যাকটেরিয়াজাত অনেকগুলি সাধারণ অসুখবিসুখ, যেমন, টিবি, সেপটিসেমিয়া, সি ডিফ্ কোলাইটিস, ইত্যাদির চিকিৎসা করা যাবে। এই ওষুধটি এক দিকে যেমন রোগসৃষ্টিকারী জীবাণুদের ধবংস করবে, অন্য দিকে ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুদের ওষুধটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধা দেবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর সাম্প্রতিক প্রকাশিত একটি সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে এই আবিষ্কার আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যে হারে অ্যান্টিবায়টিকের ব্যবহার চলছে তাতে পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক জয়াগায় যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে যে সারা বিশ্বে এমন এক অবস্থার সৃষ্টি হতে চলেছে যখন সাধারণ রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রেও অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করবে না। ফলে অ্যান্টিবায়টিকের বিকল্প ভাবার প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে।
১৯২৮ সালে প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক পেনিসিলিন আবিষ্কার রোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। কিন্তু ১৯৮৭-এর পর থেকে আর নতুন কোনও অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হয়নি। অন্য দিকে সারা পৃথিবীতেই অ্যান্টিবায়োটিকের বেহিসেবি ব্যবহারের ফলে অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধক হয়ে উঠেছে। সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার প্রোটিনকে আঘাত করে ধবংস করে। কিন্তু লাগাম ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে ক্রমেই দেখা যাচ্ছিল যে ব্যাকটেরিয়া আবার নতুন ধরনের প্রটিন তৈরি করে অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। তাই এমন অ্যান্টিবায়টিকের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে যেটি জীবাণুর এই প্রতিরোধ তৈরির ক্ষমতা আটকে দেয়। টেইক্সোব্যাকটিন-এর বিশেষত্ব হল এটি এক দিকে জীবাণুদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার ক্ষমতায় আঘাত করবে, অন্য দিকে কোনও রকম পার্শপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই রোগ সারিয়ে তুলবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন নর্থ ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বৈজ্ঞানিকদের এই আবিষ্কার নতুন প্রজন্মের অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পথ খুলে দিল। এটি পরীক্ষামূলক ভাবে ব্যবহারের পর আশা করা যাচ্ছে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই টেইক্সোব্যাকটিন বাজারে ছাড়া হবে।
সূত্র : দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, ৯ জানুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 3/2/2020