ডাঃ সুদীপ চ্যাটারজি (এন্ডোক্রিনোলজিস্ট)
একটা উদাহরণ দিয়ে বক্তব্যটাকে স্পষ্ট করা যাক। এক জন লোক কুড়ি বছর ধরে লাগাতার অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, ধূমপান ইত্যাদি করে গেছেন। সাবধানবাণী শুনেছেন এক কান দিয়ে, বার করে দিয়েছেন অন্য কান দিয়ে। আকাশ ছোঁয়ার নেশায় কার্যত ভুলে গেছেন শরীর বলে একটি বস্তু আছে । কুড়ি বছর বাদে হঠাৎ এক দিন বুকে ব্যথা শুরু হল। ডাক্তারবাবুর কাছে যেতেই তিনি পরীক্ষা করে জানিয়ে দিলেন হৃদযন্ত্রে গণ্ডগোল। বাইপাস সার্জারি করতে হবে। তার পর বাকিটা তো জানা। আকাশ ছোঁয়ার নেশায় যে শরীরকে ভুলে গিয়েছিলেন আজ তাকেই টিকিয়ে রাখতে আকাশ ছোঁয়া খরচ। বেনিয়মের বাড়বাড়ন্তে অভ্যস্ত ব্যক্তিটিকে ফিরতে হল বাধ্যতামূলক নিয়মের গণ্ডিতে। এটা খাবেন না, ওটা করবেন না – এরকম একগুচ্ছ না-এর জেরে জীবন জেরবার।
অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না, যদি ব্যক্তিটি সুনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতেন। আকাশ ছোঁয়ার রেসে নেমেও সতর্ক থাকতেন যে, শরীর নামে একটি ‘মহাশয়’ রয়েছে, যাকে সব কিছু সওয়ালে সে সব সময় সয় না। অর্থাৎ প্রতিকারের রাস্তায় হাঁটার আগেই তিনি যদি প্রতিরোধের পথে হাঁটতেন, তবে সুস্থ সবল হৃদযন্ত্র নিয়ে গোটা জীবনটা কাটিয়ে দিতেন।
প্রতিরোধের পথে হেঁটেই সাফল্য এসেছে পোলিও ও স্মলপক্সের ক্ষেত্রে। আজ দেশ পোলিও মুক্ত। এ ভাবে ১০০ শতাংশ না হলেও, সাফল্য আসতে পারে ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া, গয়টার, এডসের মতো রোগের ক্ষেত্রে।
তিনটি পদ্ধতিতে রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে, গোষ্ঠী উদ্যোগে এবং ব্যক্তি উদ্যোগে। প্রতিরোধের শুরুটায় আমি ব্যক্তি উদ্যোগের উপরই জোর দেব। কারণ, পরিশুদ্ধ জল খেলে ডায়রিয়া প্রতিরোধ সম্ভব। তাই গোড়াতেই ব্যক্তির ইচ্ছা থাকতে হবে পরিশুদ্ধ পানীয় জল খাওয়ার। তবেই সরকারের কাছে সে দাবি করবে পরিশুদ্ধ পানীয় জলের।
মানুষকে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের নিয়ম-নীতি সম্পর্কে সচেতন করার জন্য প্রয়োজন লাগাতার প্রচারের। এ ক্ষেত্রে বিকাশপিডিয়ার গুরুত্ব রয়েছে। ইতিমধ্যেই রোগ প্রতিরোধের বেশ কিছু পদ্ধতি নিয়ে মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সেগুলিকে আরও বিজ্ঞানসম্মত করে পৌঁছে দিতে হবে। প্রচার যাতে কার্যকর হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন, ম্যালেরিয়ার মশা জন্মায় জমা জলে। যে হেতু নির্মাণকর্মীরা তাঁদের কাজের প্রয়োজনে জল জমিয়ে রাখেন তাই তাঁদের সচেতন করতে হবে।
আমাদের দেশে বহু মানুষ সাপের কামড়ে মারা যান। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় সাপে কামড়ালে কোথায় যেতে হবে, কোথায় গেলে অ্যান্টিভেনাম মিলবে তা অনেকই জানেন না। এই অজ্ঞতার কারণে রোগীকে ওষুধ দিতে অনেক দেরি হয়ে যায়। ফলে রোগী মারা যায়। কুকুর কামড়ের ক্ষেত্রে একই সমস্যা চোখে পড়ে। তাই কোথায় গেলে সাপে কাটা বা কুকুর কামড়ের ওষুধ মিলবে তার তথ্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে প্রতিষেধক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে। প্রতিষেধক দু’রকমের হয়। বাধ্যতামূলক এবং ঐচ্ছিক। বাধ্যতামূলক প্রতিষেধকের মধ্যে পড়ে হাম, হেপাটাটিস বি ইত্যাদি। এগুলি নেওয়া জরুরি। পাশাপাশি ঐচ্ছিক প্রতিষেধকগুলির ক্ষেত্রে পড়ে হেপাটাইটিস এ, চিকেনপক্স ইত্যাদি। জরুরি প্রতিষেধকের অধিকাংশই সরকার বিনামূল্যে দিয়ে থাকেন। সেগুলি অবশ্যই নেওয়া উচিত।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/11/2020
কী ভাবে ঠেকানো যায় সাপের কামড় তা নিয়ে কিছু পরামর্শ...
কোন ধরনের পোকা কী ভাবে ঠেকানো যায় সে সম্পর্কে আলোচ...
শিশুর কৃমি ও প্রতিকার
কেন মাছের রোগ হয় তা নিয়ে দু-একটি কথা।