তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটে কড়া সতর্কীকরণ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিলেন গোটা দেশের ৬৫৩ জন চিকিৎসক৷ তাঁদের বক্তব্য , সিগারেট -বিড়ির প্যাকেটে ছবি সম্বলিত সতর্কতা অনেকটা জায়গা জুড়ে ছাপা হলে , তামাকের ব্যবহার কিছুটা হলেও কমতে পারে৷ দেশের ক্রমবর্ধমান ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা ও এর পিছনে তামাকের দায় যথেষ্ট বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন তাঁরা৷
২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে সিগারেটের প্যাকেটের দু’দিকে ৮৫ % জায়গা জুড়ে ছবি সম্বলিত সতর্কীকরণের সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রক৷ বর্তমানে প্যাকেটের একদিকে ৪০ % জুড়ে ছবি থাকে৷ তামাক সেবনে কেমন ক্ষতি হয় , ছবিতে সেই সতর্কতাই দেওয়া হয়৷ মন্ত্রকের এই সুপারিশের তীব্র বিরোধিতা করে তামাক লবি৷ এই পরিবর্তন হলে তামাকশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে মন্তব্য করে সুপারিশ বাক্সে তুলে রাখে সংসদীয় কমিটি৷ মার্চের মাঝামাঝি এই সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির লোকসভায় রিপোর্ট পেশ করে জানায় , ৮৫ % নয় , ৫০ % জায়গা ছবির জন্য যথেষ্ট৷ ৮৫ % জায়গা জুড়ে সতর্কীকরণ বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে , এর ফলে সিগারেটের কালোবাজারি বেড়ে যেতে পারে৷ বিড়ির প্যাকেটের ক্ষেত্রে সতর্কীকরণ একদিকে ছাপা হলেই যথেষ্ট৷ চেবানো তামাকের ক্ষেত্রেও একই নিদান দেয় কমিটি৷ তাঁদের যুক্তি , সতর্কীকরণ নিয়ে ‘বাড়াবাড়ি ’ করা হলে শিল্পের যুক্ত মানুষজন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন৷ তামাকচাষি ও কর্মীদের স্বার্থ রক্ষা করতেই এই সুপারিশ৷ চিকিৎসকরা ঠিক এই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতেই মোদীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন৷ স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সুপারিশ ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল৷ চিকিৎসকরা মোদীর কাছে আবেদন রেখেছেন , সংসদীয় কমিটির নতুন সুপারিশ বাতিল করে পুরোনো সুপারিশই যেন ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর করা হয়৷ প্রধানমন্ত্রী যাতে দ্রুত পদক্ষেপ করেন , তার জন্য তাঁরই একটি ফেসবুক পোস্টে ভরসা রেখেছেন চিকিৎসকরা৷ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর পরই মোদী ফেসবুকে লিখেছিলেন , যিনি সেবন করছেন , তামাক শুধু তারই ক্ষতি করে না , তার আশপাশের লোকজনকেও করে৷ স্বাস্থ্যবান ভারতের জন্য সকলকেই তামাককে না বলতে হবে৷ চিঠিতে সেই উল্লেখ করে চিকিৎসকরা বলেছেন , ‘আপনার ফেসবুক পোস্ট দেশের ও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যমহলে কড়া বার্তা পাঠিয়েছিল৷ কিন্তু এর পর নানা ঘটনা তামাক লবির হাতই শক্ত করেছে৷ সংসদীয় কমিটির সুপারিশে আসল উদ্দেশ্যই মাঠে মারা যাচ্ছে৷ ’ পরিসংখ্যান দিয়ে তাঁরা বলেছেন , প্রতি বছর তামাকের কারণে ১০ লক্ষ ভারতীয়ের মৃত্যু হয়৷ ৫০ % ক্যান্সারের পিছনে দায়ী তামাক৷ তামাকের ক্ষতি সামলাতে দেশের যা খরচ হয় , তামাক থেকে রাজস্ব আদায় তার মাত্র ১২%৷ তাই চিকিৎসকরা বলেছেন , তামাকে কড়া চিত্র সতর্কীকরণ ব্যবহার করা হলে বিশেষ করে কিশোর -কিশোরীদের আসক্তি হওয়া থেকে দূরে রাখা যাবে৷ যারা নিয়মিত তামাক সেবন করেন , প্যাকেটে সম্ভাব্য ক্ষতির ছবি দেখে তাঁরাও সরে আসতে পারেন৷ অথচ , তামাকের প্যাকেটে সতর্কীকরণ করার ক্ষেত্রে ভারত রয়েছে ১৩৬ নম্বরে৷ দেশের এই পিছিয়ে থাকা ঠেকাতে ৮৫ % জায়গা জুড়ে ছবি সতর্কীকরণ বাধ্যতামূলক করতে হবে৷ মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের অধ্যাপক ও সার্জেন পঙ্কজ চতুর্বেদী বলেন, ‘চিকিৎসা বিদ্যা বারবার প্রমাণ করে দেখিয়েছে, তামাকের কোনও সুফল নেই৷ বরং এটি বিভিন্ন রোগ, প্রতিবন্ধকতা এবং মৃত্যুর কারণ৷ আমরা আশা রাখি, প্রধানমন্ত্রী দেশের ভালোর জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন৷’ পঙ্কজবাবুর মতো আরও ৬৫২ জন চিকিৎসক মোদীকে পাঠানো পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন৷ এর মধ্যে বাংলারও বেশ কয়েকজন চিকিৎসক রয়েছেন৷ ৷
সুত্র ঃ এই সময়
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020