অ্যান্টিবায়োটিক অ্যামক্সিসিলিনের একগুচ্ছ কম্বিনেশন নিষিদ্ধ হলে ভারতীয় ওষুধ বাজার আগামী দিনে অন্তত ৩,৫০০ কোটি টাকার ধাক্কা খেতে চলেছে। ভারতীয় বাজারে অ্যামক্সিসিলিন আত্মপ্রকাশ করে প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে। আর প্রায় দু’ দশক ধরে নিরাপদ অথচ কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক হিসেবে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অ্যামক্সিসিলিন ও তার নানা কম্বিনেশন। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে অধিকাংশ ব্যাকটিরিয়াঘটিত সংক্রমণকে বাগে আনতে চিকিত্সকদের নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার অ্যামক্সিসিন-ক্লোক্সাসিলিন, অ্যামক্সিসিলিন-ক্ল্যাভালেনিক অ্যাসিড যৌগের ওষুধ। গত এক দশকে সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে অ্যামক্সিসিলিন-ডাইক্লোক্সাসিলিন, অ্যামক্সিসিলিন-ক্লোক্সাসিলিন-সেরাশিওপেপটিডেজ, অ্যামক্সিসিলিন-টিনিডাজোল কম্বিনেশনের ওষুধ। কিন্তু সিডিএসসিও-র সাম্প্রতিক ফরমানে অ্যামক্সিসিলিন-ক্ল্যাভালেনিক অ্যাসিড বাদ দিয়ে বাকি সব ক’টি কম্বিনেশনকেই কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে। মূলত এই কম্বিনেশনের পেডিয়াট্রিক প্রিপারেশনগুলিকেই (ড্রপ, সিরাপ, সাসপেনশন, ডিসপার্সেবল ট্যাবলেট ইত্যাদি) ভুলভাল মিশ্রণ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এক্সপার্ট কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘কোম্পানিগুলি যুক্তি দেয়, কিছু ব্যাকটেরিয়া থেকে নিঃসৃত বিটা-ল্যাকটামেজ নামের একটি উৎসেচক অ্যামক্সিসিলিনকে নষ্ট করে দেয়। কিন্তু ক্লোক্সাসিলিন, ডাইক্লোক্সাসিলিনকে অ্যামক্সিসিলিনের সঙ্গে মিশিয়ে দিলে সে আশঙ্কা নির্মূল হয়। কিন্তু আমরা দেখেছি, ক্লোক্সাসিলিন গোত্রের যৌগ সিরাপ, ড্রপ ইত্যাদি ওষুধে আদৌ কার্যকর থাকে না। তা হলে বেশি দাম দিয়ে ওই ওষুধ রোগী কিনবে কেন?’ এক্সপার্ট কমিটির আর এক সদস্য জানান, ‘দিনে তিন বার’ ডোজের অ্যামক্সিসিলিনের সঙ্গে যে ভাবে ‘দিনে দু’বার’ ডোজের টিনিডাজোল যৌগকে মিশিয়ে দেওয়া হয়, তা অত্যন্ত ক্ষতিকারক। ‘এতে অ্যামক্সিসিলিনের আন্ডার-ডোজিং আর টিনিডাজোলের ওভার-ডোজিং হওয়ার জেরে বিষক্রিয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষ করে শিশুশরীরে এর প্রভাব মারাত্মক হতে পারে,’ মন্তব্য ওই বিশেষজ্ঞের। ফার্মাকোলজির প্রবীণ অধ্যাপক তাপস ভট্টাচার্য বলেন, ‘ওষুধবিজ্ঞান এমন কম্বিনেশনকে সমর্থন করে না। এই সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের আরও আগে নেওয়া উচিত ছিল।’ ওষুধের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত এক সংগঠনের কর্তা অমিত দাস বলেন, ‘জেনেরিক ও ব্র্যান্ড মিলিয়ে অ্যামক্সিসিলিন ও তার কম্বিনেশনযুক্ত অন্তত ৩১০ ওষুধ এ দেশে চলে যার বার্ষিক ব্যবসার অঙ্ক প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। এর ৭০ শতাংশ বাজার সিঙ্গল অ্যামক্সিসিলিন এবং অ্যামক্সিসিলিন-ক্ল্যাভালেনিক অ্যাসিড কম্বিনেশনের দখলে। বাকি ৩০ শতাংশ (টাকার অঙ্কে প্রায় ৩,৫০০ কোটি) ব্যবসার মূলে রয়েছে এই সব অযৌক্তিক কম্বিনেশনের ওষুধ।’
সূত্র : অনির্বাণ ঘোষ, এই সময়, ২ এপ্রিল ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020