গত বছর এনসেফ্যালাইটিসে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ১৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল উত্তরবঙ্গে। সময় মতো তথ্য না-দেওয়ার অভিযোগে সাসপেন্ড করা হয়েছিল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের তৎকালীন সুপার, অধ্যক্ষ এবং জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে। এ বার তাই কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না দার্জিলিং জেলা স্বাস্থ্য দফতর। আগাম ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বুধবার বৈঠক হল শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদে। কৃষি দফতর, প্রাণীসম্পদ বিকাশ দফতর, জনস্বাস্থ্য, পূর্ত এবং সেচ দফতরের আধিকারিকরা এবং জেলার ৪টি মহকুমার সমস্ত ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকরা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতর এবং বিভাগগুলিকে এনসেফ্যালাইটিস প্রতিরোধে নিজেদের মতো করে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করে জমা দিতে বলা হয়েছে। সমস্ত পরিকল্পনা জমা পড়লে এনসেফ্যালাইটিস প্রতিরোধে এ বছর আগাম কর্মসূচি ঠিক করতে চায় জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলেন, “বিভিন্ন দফতরের পরিকল্পনাগুলি নিয়ে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে এনসেফ্যালাইটিস প্রতিরোধে আগাম কর্মসূচি নেওয়া হবে।’ স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত কয়েক বছর ধরেই এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ দেখা দিচ্ছে উত্তরবঙ্গে। কিন্তু তা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর সচেতন না হওয়ায় গত বছর ১৬৫ জনেরও বেশি মানুষ ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে কীটের অভাব থাকায় যথা সময়ে রক্ত পরীক্ষা করা নিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয় রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের। একের পর এক মৃত্যুর মিছিলে বিপাকে পড়ে রাজ্য সরকার। রাজ্য জুড়ে এনসেফ্যালাইটিস প্রতিরোধে শুয়োর ধরতে অভিযানের নির্দেশ দেয় সরকার। কয়েক দিন তৎপরতার পর সেই প্রচেষ্টাও অবশ্য থিতিয়ে পড়ে। জেলার অতিরিক্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তুলসী প্রামাণিক জানান, এ দিন বিভিন্ন দফতর থেকে আধিকারিকরা আসায় সবাইকে পরিকল্পনা রূপায়ণে সামিল করা সম্ভব হবে বলে তাদের বিশ্বাস। তিনি বলেন,“মশার মাধ্যমে রোগ সংক্রমণের পাশাপাশি জল বাহিত হয়েও এই রোগ ছড়িয়েছিল বলে পুনের ইন্ডিয়ান ইন্সস্টিটিউ অব ভাইরোলজির জীবাণু বিজ্ঞানীরাও জানিয়েছিলেন। সে কথা মাথায় রেখে তাই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তা ছাড়া কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফে এনসেফ্যালাইটিস প্রতিরোধে বয়স্কদের প্রতিষেধক দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরীক্ষা মূলকভাবে অসমে গত বছরই তা চালু হয়েছে। তবে এ রাজ্যে এখনও হয়নি।”
গত বছর গোড়ার দিকে উত্তরবঙ্গে বিভিন্ন জেলা হাসপাতালে এনসেফ্যালাইটিস রোগ নির্ধারণের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। বিভিন্ন জেলা হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাই নিরুপায় হয়ে জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। পরে জলপাইগুড়ি, বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল, মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষার কিট পাঠানোর ব্যবস্থা করে সরকার। পুনের ইন্ডিয়ান ইন্সস্টিটিউট অব ভাইরোলজি থেকে বিশেষজ্ঞরা আসেন। ভিন রাজ্য থেকে পতঙ্গবিদদের এনেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট হয় রাজ্য সরকার। জুন মাস থেকেই রোগের প্রকোপ এবং মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সে কারণে এ বার আগাম ব্যবস্থা নিতে তৎপর দার্জিলিং জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
সূত্র : নিজস্ব সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি, আনন্দবাজার পত্রিকা, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020