হৃদরোগের চিকিৎসায় ডাক্তারেরা উন্নতি ঘটালেও, হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে চিকিৎসক সম্প্রদায়কে আরও ভালো কিছু করতে হবে। কারণ, যে সমস্ত রোগী হার্টের জটিল অসুখে ভুগছেন তাঁদের বেশিরভাগই কমবয়সি এবং চেহারায় স্থূল। আমেরিকার ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের প্রায় চার হাজার রোগীদের উপর পরীক্ষা চালিয়ে এমনই দাবি করেছে একদল গবেষক। যাঁদের মধ্যে রয়েছেন একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত। একইসঙ্গে গবেষক দলটি জানিয়েছে, ধূমপায়ী, সুগার ও উচ্চরক্তচাপযুক্ত রোগীদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, তা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
১৯৯৫ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কুড়ি বছরে ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকে ৩,৯০০-এর বেশি চিকিৎসাধীন রোগীর উপর গবেষণা চালিয়েছে গবেষক দলটি। চিকিৎসাধীন সকলেই ‘এসটি এলিভেশন মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন’ বা ‘এসটি সেগমেন্ট মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন (স্টেমি)’-এর রোগী। প্রসঙ্গত, সবথেকে জটিল ও কঠিন হার্টের অসুখ হল এই স্টেমি। গত ২০ বছরে এই বিপুল সংখ্যক হৃদরোগীদের আশঙ্কা (রিস্ক ফ্যাক্টর) নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছে গবেষক দলটি।
গবেষক দলের প্রধান তথা ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের সমীর কাপাডিয়া জানিয়েছেন, মানুষ যখন আমাদের কাছে রুটিন পরীক্ষার জন্য আসে, তখন ওজন কমানো, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া এবং শারীরিকভাবে কর্মক্ষম থাকার মাধ্যমে রিস্ক ফ্যাক্টর কমানোর উপর গুরুত্ব আরোপের প্রস্তাব নিয়ে সমস্যার দেখা দেয়। একাধিক বিষয় মানুষের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তাদের মধ্যে কিছু আবার ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণের বাইরে। যেমন, বয়স, পারিবারিক ইতিহাস ইত্যাদি। যদিও, জীবনযাত্রার বদল, শরীরচর্চা, ধূমপান ত্যাগ এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমিয়ে ফেলা যায়। তবে, কাপাডিয়া জানিয়েছেন, হৃদরোগ চিকিৎসায় প্রভূত উন্নতি হলেও হার্টের অসুখ নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসক মহলের আরও অনেক কিছু করার রয়েছে।
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের ২০ বছরের ‘স্টেমি’ রোগীদের পাঁচ বছর করে চারটি বিভাগে ভাগ করেছে গবেষকদলটি। প্রতিটি বিভাগের রোগীদের রিস্ক ফ্যাক্টর, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে গবেষকরা জানিয়েছেন, স্টেমি আক্রান্ত রোগীদের বয়স কমছে। প্রথম পাঁচ বছরের স্টেমি আক্রান্ত রোগীর গড় বয়স ৬৪ থেকে শেষ পাঁচ বছরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৬০-এ। একইভাবে স্থূলতার পরিসংখ্যান ৩১ থেকে হয়েছে ৪০ শতাংশ। সুগারের রোগীদের সংখ্যা ২৪ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ শতাংশ। অন্যদিকে, উচ্চ রক্তচাপ রোগীর সংখ্যা ৫৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৭ শতাংশ। ফুসফুসের রোগীর সংখ্যা ৫ থেকে বেড়েছে ১২ শতাংশ। গবেষকরা সমস্ত পরিবর্তনকেই উদ্বেগজনক বলে আখ্যা দিয়েছেন।
রিপোর্ট মতে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল, ধূমপানের চালচিত্র। ধূমপায়ীদের সংখ্যা ২৪ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৬ শতাংশ। শুধু তাই নয়, যে সমস্ত রোগীদের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার একাধিক সম্ভাবনা রয়েছে, সেই সমস্ত রোগীর সংখ্যা ৬৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ৮৫ শতাংশ। প্রসঙ্গত, হার্টের স্টেমি হল এমন একটি রোগ, যেখানে হৃৎপিণ্ডের মূল ধমনী পুরোপুরি অবরুদ্ধ (ব্লক) হয়ে যায়। ফলে, বন্ধ হয়ে যায় রক্ত চলাচল।
সুত্র: বর্তমান পত্রিকা , পশ্চিমবঙ্গ
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020