তলানিতে ঠেকেছে শিশুদের বাধ্যতামূলক ভিটামিন-এ খাওয়ানোর কর্মসূচির হাল। ফলে রাতকানা হওয়া, হামে আক্রান্ত এবং ঘন ঘন শ্বাসনালির প্রবল সংক্রমণের মুখে দাঁড়িয়ে এ রাজ্যের লক্ষ লক্ষ শিশু। ভিটামিন এ খাওয়া শিশুর পরিমাণ ৬ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। এখানেই শেষ নয়, এই হতাশাজনক চিত্র স্বাস্থ্য দফতরের নিজস্ব পত্রিকাতেই প্রকাশ পেয়েছে। দেখা যাচ্ছে, এক বছর নয়, লাগাতার তিন বছর কমেছে এ রাজ্যের ভিটামিন এ খাওয়া শিশুর সংখ্যা। প্রমাদ গুণছেন রাজ্যের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং শিশু চিকিত্সকরা। কারণ, ভিটামিন এ খাওয়া শিশুর সংখ্যা প্রবল ভাবে কমে যাওয়ায় সারা রাজ্যে বাড়তে পারে রাতকানা রোগ এবং প্রবল সর্দি-কাশিতে কাহিল শিশুর সংখ্যা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে বিগত তিন বছর যে লাখ লাখ শিশু পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ খেতে পারেনি, তাদের একটা বড় অংশ রাতকানা রোগ কিংবা টিকা সত্ত্বেও হাম জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। এ ছাড়া ওই শিশুদের শ্বাসকষ্টের সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। শিশু বিশেষজ্ঞ প্রিয়ঙ্কর পাল বলেন, ‘ভিটামিন এ ঘাটতির ফলে রাজ্যে এক বিশাল সংখ্যক শিশু রাতকানা। ওই শিশুরা শ্বাসনালির সংক্রমণেও ভোগে। শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে এমন রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেশি।’ এ রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের সরকারি জাতীয় টিকাকরণ কর্মসূচিতে সদ্যোজাত থেকে তিন বছরের শিশুদের নিয়মিত ভাবে এই ভিটামিন এ দেওয়ার চলই বন্ধ হওয়ার জোগাড়। সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যকর্তারা অবশ্য এর জন্য কেন্দ্র থেকে অনিয়মিত সরবরাহকে দায়ী করছেন। তবে দেরিতে হলেও স্বাস্থ্য দফতর নড়েচড়ে বসেছে। জনস্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘সব চেয়ে বড় সমস্যা হল, এই বিষয়টা থমকে গেলে শিশুদের ভবিষ্যতে যে প্রভূত ক্ষতি হবে তা নিয়ে কেউই সরব ছিল না। ফলে এই খামতির বিষয় নিয়ে প্রথম দিকে কেউই নজর করেনি।’ এর পাশাপাশি ওই কর্তার মত, সরকারি হাসপাতালে জাতীয় টিকাকরণের জন্য নথিভুক্ত হওয়া শিশুদের মধ্যে ভিটামিন এ খাওয়ানো শিশুর সংখ্যা প্রথম ধাপে যথেষ্ট ভালোই থাকে। কিন্তু সাধারণত পরবর্তী সময় সেই সংখ্যাটা কমতে থাকে। কিন্তু, বিগত তিন বছর পরিস্থিতি তলানিতে যায়।
সূত্র : ঝিলম করঞ্জাই, এই সময়, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020