এখন হৃদরোগের প্রকোপও বাড়ছে। শুধু বয়স্কদের মধ্যে নয়, শিশুদের মধ্যেও এই অসুখ দেখা দিচ্ছে। কেন? চিকিৎসকদের মতে, মূলত চারটি কারণে এই পরিস্থিতি। ১) ক্যালোরিযুক্ত খাবার, ভাজাভুজি বেশি খাওয়া। ২) খেলা-ব্যায়ামের বদলে টিভি-কম্পিউটারে সময় কাটানো। ৩) রাতে না ঘুমিয়ে ইন্টারনেট-মোবাইলে ডুবে থাকা এবং ৪) বছরে অন্তত একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করা। সরকারি স্কুলে হৃদরোগে আক্রান্ত ছাত্রছাত্রীদের খুঁজে বার করে তাদের অস্ত্রোপচার করার প্রকল্প অবশ্য সরকারের আছে। ‘শিশুসাথী’ নামে এই প্রকল্পে প্রতিদিনই কোনও না কোনও স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের স্ক্রিনিং হওয়ার কথা। কিন্তু চিকিৎসক এবং নার্সের অভাবে স্ক্রিনিং চালানোই মুশকিল। পশ্চিম মেদিনীপুরে ইতিমধ্যে ‘শিশুসাথী’ প্রকল্পে ১৩৬ জন ছাত্রছাত্রীর হৃদ্রোগের চিকিৎসা হয়েছে। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, “অনেকের মধ্যেই জন্ম থেকে ভালভ খারাপ, ধমনী খারাপ, অনিয়মিত হৃদ্স্পন্দন, হৃদযন্ত্রে ফুটোর মতো সমস্যা লুকনো থাকে। তখন গোড়ায় চিকিৎসা শুরু হলে ভাল।” পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পৃথিবীতে এখন প্রতি ছ’জনের এক জন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। ২০০০ সালের পর থেকে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকা বা ইউরোপের মতো ধনী দেশগুলোর চেয়ে উন্নতশীল বা অনুন্নত দেশগুলোতেই স্ট্রোকের সংখ্যা বেশি। মূলত, খাওয়া-দাওয়ার অভ্যাস, ন্যূনতম শরীরচর্চা না করা এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপকেই এর জন্য দায়ী করেন চিকিৎসকেরা। তথ্য বলছে, পৃথিবীতে প্রতি বছর ৫৮ লক্ষ মানুষ স্ট্রোকে মারা যাচ্ছেন। এডস, যক্ষ্মা এবং ম্যালেরিয়া মিলিয়ে যত মানুষ মারা যান, স্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা তার চেয়েও বেশি। প্রতি ৬ সেকেন্ডে এক জন মানুষ এর বলি হন। চিকিৎসকদের মতে, সময় মতো রোগীর রিহ্যাবিলিটেশন অর্থাৎ পুনর্বাসনের চেষ্টা শুরু করতে পারলে বিপর্যয় এড়ানো যেতে পারে। এখন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। দেরিতে ধরা পড়লে ক্যানসার দুরারোগ্য। জেলার সর্বত্র এই অসুখের চিকিৎসা বা কেমোথেরাপি দেওয়ার কোনও পরিকাঠামোই নেই। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে একেবারে গ্রামস্তর থেকে এই সব রোগ নির্ণয়ের কাজ শুরু করতে চাইছে সরকার। এ জন্য নতুন সেল খোলা হচ্ছে। রাজ্যের সাতটি জেলায় এনসিডি সেল চালুর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তা জানালেন, ছোঁয়াছে নয়, এমন অসুখে মৃত্যুর সংখ্যা গোটা পৃথিবীতেই বেড়ে চলেছে। এখন পৃথিবীতে প্রতি বছর ৩ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ এমন অসুখে মারা যান। জেলায় ওই সেল কাজ শুরু করলে অনেকের গোড়াতেই রোগ নির্ণয় হয়ে যাবে। চিকিৎসাও শুরু হবে। ফলে, বহু মানুষকে আর এই সব অসুখে মৃত্যুর মুখ দেখতে হবে না।
সূত্র : বরুণ দে, আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020