এক জন চিকিৎসকের দায়িত্ব শুধুমাত্র তাঁর রোগীর মধ্যেই সীমায়িত থাকে না, সার্বিক ভাবে সমাজের প্রতিও তাঁর সমান দায়িত্ব থেকে যায়। সহমর্মিতা ও সংবেদনশীলতার সঙ্গে এক জন রোগীকে উপযুক্ত পরিষেবা দেওয়াই চিকিৎসকের ধর্ম। শুধু তা-ই নয়, কর্তব্যবোধ, মানবিকতাও এক জন চিকিৎসকের পেশার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। চিকিৎসকদের আচরণবিধি সংক্রান্ত বিষয় ২০০২ সালের ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল রেগুলেশনস’-এ উল্লেখ আছে। এই রাজ্যে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিল’-এর ২০০৩ সালের ২ এবং ১৭ মার্চের আলোচনায় তা গৃহীত হয়। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের কোড অব মেডিক্যাল এথিক্স’-এ স্পষ্ট বলা আছে, এক জন চিকিৎসকের কী করা উচিত বা কী করা উচিত নয়। ‘কোড অব মেডিক্যাল এথিক্স’-এ বিভিন্ন ধারায় উল্লেখ আছে রোগীর রোগ প্রশমনে উৎকৃষ্ট চিকিৎসা করার জন্য প্রতিনিয়ত এক জন চিকিৎসককে সাম্প্রতিক চিকিৎসা শাস্ত্রের হালহকিকত জানতে হবে। এক জন চিকিৎসকের কাছে রোগী ও রোগই সর্ব্বোচ্চ বিষয়।
মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া এবং রাজ্য কাউন্সিল স্বীকৃত চিকিৎসকরাই শুধুমাত্র আধুনিক চিকিৎসক শল্য চিকিৎসা করার অধিকারী। প্রত্যেক চিকিৎসককে তাঁর রেজিস্ট্রেশন নম্বর উল্লেখ করতে হবে প্রেসক্রিপশনে, সার্টিফিকেটে, রসিদে। এক জন চিকিৎসক রোগী দেখার জন্য কত টাকা নেন, তা-ও প্রকাশ্যে লিখে রাখার কথা। প্রেসক্রিপশন এমন ভাবে লিখতে হবে যাতে সকলে তা বুঝতে পারে। ওষুধের জেনেরিক নাম ব্র্যান্ড-এর নাম দু’টোই তিনি লিখবেন। রোগী ও তাঁর চিকিৎসা সম্পর্কে পরিবারকে অবহিত করা চিকিৎসকের কর্তব্য। এক জন চিকিৎসককে অন্তর্বিভাগীয় চিকিৎসার ক্ষেত্রে কমপক্ষে কোনও রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিপত্র চিকিৎসা শুরু হওয়ার দিন থেকে শুরু করে তিন বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে। আইনেই তা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। এমনকী অন্তর্বিভাগীয় চিকিৎসার নথিপত্র রোগী চাইলে তা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পেশ করতে হবে। এক জন চিকিৎসক অন্য চিকিৎসক বা তাঁর উপর নির্ভরশীল আত্মীয়দের চিকিৎসা করবেন স্বেচ্ছায়। প্রয়োজন হলে পরিস্থিতি বিচার করে গাড়ি ভাড়া নেওয়া যেতে পারে। অন্য চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া বা দেওয়ার ক্ষেত্রেও খোলা মন হতে হবে। রোগীকে বা তাঁর আত্মীয়দের অন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা জানানো যেতে পারে স্বচ্ছতার জন্যই। পেশার গরিমা বজায় রাখার পাশাপাশি কোনও অযোগ্য ব্যক্তি যাতে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হতে না পারেন সে বিষয়টিকেও দেখতে হবে এক জন স্বীকৃত চিকিৎসককে। অন্য কোনও চিকিৎসক অন্যায্য উপায় অবলম্বন করলে তা প্রকাশ করে দেওয়া এক জন চিকিৎসকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
সূত্র : যোজনা, ফেব্রুয়ারি ২০১৪
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019