ইএনটি বিশেষজ্ঞ রা জানান, ‘ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট’ নামে এক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বধিরতা অনেকটা ঠিক করা যায়। কিন্তু রাজ্যের কোনও সরকারি হাসপাতালে এখনও তা চালু করা যায়নি। একমাত্র মেডিক্যাল কলেজে পরীক্ষামূলক একটি-দু’টি অস্ত্রোপচার হয়েছে। বেসরকারি জায়গায় এই অস্ত্রোপচারে ৫-৭ লাখ টাকা খরচ হয় যা সকলের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। সরকারি হাসপাতাল ও সরকার পোষিত মূক-বধির স্কুলগুলির আর এক বড় সমস্যা উপযুক্ত ও দক্ষ স্পিচ থেরাপিস্টের অভাব। এসএসকেএম, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মতো প্রথম সারির মেডিক্যাল কলেজে মাত্র এক জন করে স্পিচ থেরাপিস্ট রয়েছেন, অথচ রোগী অসংখ্য। এক বার ডেট পেতে কয়েক মাস গড়িয়ে যায়। কলকাতার গড়পাড়ে রাজ্যে মূক ও বধিরদের সব চেয়ে বড় সরকারপোষিত স্কুলের অধ্যক্ষ সমীর সামন্ত বলেন, “আমাদের ৩৫০ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য মাত্র এক জন স্পিচ থেরাপিস্ট। শিক্ষকপদ খালি ৩০টি। ছাত্রছাত্রীর হিয়ারিং এড কেনার টাকা নেই। এই রকম ভঙ্গুর পরিকাঠামোতে তারা কথা বলা শিখবে কী ভাবে?”
আট বছর হল দক্ষিণ কলকাতার যাদবপুরে নিজেদের সংগঠন তৈরি করেছেন মূক ও বধির ছেলেমেয়েদের মায়েরা। কলকাতার ৪০টি পরিবার সংগঠনের সদস্য। সেই অভিভাবকেরা জানান, এ রাজ্যে ৯৯% সরকারি স্কুলে স্পেশ্যাল এডুকেটর বা স্পিচ থেরাপিস্ট নেই। তাই এই বাচ্চাদের কী ভাবে পড়াতে হবে সে সম্পর্কে শিক্ষকেরা অজ্ঞ। শিশুদের সব সময় প্রথম বেঞ্চে বসাতে হয়। তা অনেকেই করেন না। অনেক শিক্ষক হয়তো ছাত্রদের দিকে পিছন ঘুরে ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে পড়াচ্ছেন। বধির ছাত্র বা ছাত্রী তাঁর মুখ-ই দেখতে পারছে না এবং ঠোঁট পড়তে পারছে না। শিক্ষক এত লম্বা বাক্য বলছেন বা এত দ্রুত বলছেন বা এত দ্রুত এক বিষয় থেকে অন্য বিষয়ে চলে যাচ্ছেন যে বধির ছাত্রের বোধগম্য হচ্ছে না। তাঁদের কথায়, “বাচ্চাদের হিয়ারিং এড খুলে গেলেও শিক্ষক-শিক্ষিকা সে দিকে নজর দেন না। অনেকে আবার বোর্ডে বা ডায়েরিতে না লিখে অনেক কথা বা নির্দেশ শিক্ষকেরা মুখে-মুখে বলে দেন যা বধিররা বুঝতে পারে না।”
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/5/2019