রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, জেলা হাসপাতাল, বড় মহকুমা ও স্টেট জেনারেল হাসপাতালে এমারজেন্সি অবজার্ভেশন ওয়ার্ড খুলতে চলেছে রাজ্য। বর্তমান লোকবল ও পরিকাঠামোকে হাতিয়ার করে যাতে আগামী মাসের মধ্যে এই সব হাসপাতালগুলিতে এই ওয়ার্ড খোলা হয়, সেটাও নির্ধারণ করে ফেলেছে স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্যসচিব মলয় দে বলেন, ‘চিকিত্সায় ন্যূনতম দেরি এড়ানোটাই মূল উদ্দেশ্য। হাসপাতালে ঢোকার পর গুরুতর অসুস্থের জীবনদায়ী চিকিত্সা যাতে আক্ষরিক অর্থেই সঙ্গে সঙ্গে শুরু করা হয়, সেই লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ। বর্তমানে মেডিক্যাল, পিজি, এনআরএসের মতো কয়েকটা হাসপাতালে এই পরিষেবা রয়েছে। আমাদের আশা, এই প্রকল্প পুরোপুরি রূপায়িত হয়ে গেলে অসংখ্য অকালমৃত্যু ঠেকানো সম্ভব হবে।’ বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, পথদুর্ঘটনা, হাইপোগ্লাইসিমিয়া, ডায়েরিয়া, ডিহাইড্রেশন, ভয়াবহ রক্তপাতের শিকার রোগীদের জন্যই নয়া পরিষেবা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে স্বাস্থ্যভবন। কারণ এমন রোগীদের হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে ইন্ডোর ওয়ার্ডে স্থানান্তর করতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে, এ নজিরও বিরল নয়। মৃত্যু না-হলেও, ইন্ডোরে পৌঁছে অনেক দেরিতে চিকিত্সা শুরু হওয়ায় রোগী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, এমন ঘটনাও অজস্র। অথচ মুশকিল হচ্ছে, বর্তমান পরিকাঠামোয় ওয়ার্ডের মতো পরিষেবার সুযোগ নেই অধিকাংশ হাসপাতালের এমারজেন্সিতে। এর জেরে সঠিক সময়ে চিকিত্সা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হন অসংখ্য রোগী। যাঁদের একটা বড় অংশ শুধুমাত্র এই দেরির কারণেই সঙ্কটজনক হয়ে পড়েন অথবা মারা যান। এমন ঘটনা এড়াতেই রাজ্যের সব ধরনের বড় হাসপাতালে এমারজেন্সি অবজার্ভেশন ওয়ার্ড খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবং তা মার্চের মধ্যেই। যে লোকবল ও পরিকাঠামো রয়েছে, তা নিয়েই যাতে চটজলদি এই পরিষেবা চালু করে দেওয়া হয় , সেই মর্মে সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব মলয়বাবু।
স্বাস্থ্য সূত্রে বলা হচ্ছে, শুধুমাত্র ‘জিরো ডিলে’ নয়, এমারজেন্সি অবজার্ভেশন ওয়ার্ড চালু হয়ে গেলে অনেক সময়ে যে ভাবে অযথা জোড়া হয়ে যায় ইন্ডোর ওয়ার্ডের বেড, তা-ও এড়ানো যাবে। এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘এমারজেন্সিতে যথাযথ চিকিত্সা দেওয়ার বদলে অনেক সময়েই রোগীকে ভর্তি করে নেওয়ার পক্ষে জোর দেওয়া হয় বর্তমান ব্যবস্থায়। অ্যাজমা, লো -ব্লাডপ্রেশার, ডিহাইড্রেশনের রোগীদেরও ইন্ডোরে ভর্তি করে নেওয়া হয়। ফলে কমপক্ষে ২৪-৪৮ ঘণ্টা জোড়া হয়ে থাকে ইন্ডোরের বেড। অথচ এই ধরনের রোগীকে অনেক ক্ষেত্রেই ইঞ্জেকশন, নেবুলাইজেশন, অক্সিজেন, স্যালাইন ইত্যাদির সাহায্যে স্থিতিশীল করে জরুরি বিভাগে কয়েক ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখলেই সমস্যা মিটে যায়। এমারজেন্সি অবজার্ভেশন ওয়ার্ড সর্বত্র চালু হয়ে গেলে সেটাই করা হবে।’ তিনি জানান, মেডিক্যাল কলেজের ক্ষেত্রে সর্বাধিক ৪৮ ঘণ্টা এবং বাকি হাসপাতালগুলির ক্ষেত্রে সর্বাধিক ৬ ঘণ্টা রাখা যাবে এই এমারজেন্সি অবজার্ভেশন ওয়ার্ডে। তার পর হয় ইন্ডোর ওয়ার্ড কিংবা উচ্চতর পরিষেবার হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে রোগীকে অথবা তাঁকে ছুটি দিয়ে দিতে হবে।
সূত্র: এই সময়, ২ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020