শরীরে এ রকম অপুষ্টির সৃষ্টি হলে অনেক ক্ষেত্রেই খুব সঙ্গত কারণে সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে থাকে এবং তার জন্য প্রয়োজন হয় খাদ্যের গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানগুলি, যেমন—প্রোটিন ও ক্যালোরির। সুতরাং এ অবস্থায় প্রোটিন ও ক্যালোরির মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলি শরীরে গঠন ও বৃদ্ধির কাজে না লেগে, অ্যান্টিবডি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এর ফলে শিশুর শারীরিক ও মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। জন হপকিন্স ব্লুমবার্গ স্কুল অফ পাবলিক হেলথের জিন হামফ্রের মতে, যখন জন্মের দু’ বছরের মধ্যে শিশুর এ ধরনের সমস্যা হয় তখন শিশুর ওজন ও উচ্চতা এবং মস্তিষ্কের বৃদ্ধিতে ব্যাঘ্যাত সৃষ্টি করে। এই ক্ষতি অপুরণীয়।
অপুষ্টি সংক্রান্ত সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে যে, ভারতীয় শিশুদের ক্রনিক অপুষ্টি, বিশেষত কম উচ্চতাসম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে পরিচ্ছন্নতার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সারা পৃথিবীতে প্রায় ১৬ কোটির উপর পাঁচ বছরের কমবয়সি শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত হওয়ার জন্য দূষিত পানীয় জল, পরিচ্ছন্নতার অভাব ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ অনেকাংশে দায়ী এবং এ কারণে প্রতি বছর প্রায় ৫০ লক্ষ শিশুর আমাদের দেশে মৃত্যু হয়। গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে, যথাযথ স্যানিটেশনের অভাবে শিশুর অন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ যথেষ্ট বেশি থাকলেও সব সময় সে কারণে কোনও বাহ্যিক রোগলক্ষ্মণ (অন্ত্রের রোগ ইত্যাদি) প্রকাশ নাও পেতে পারে।
ভারতীয় শিশুদের উচ্চতা এবং অন্যান্য অপুষ্টির বিষয় সম্পর্কিত গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, উপযুক্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাবই অপুষ্টিজনিত সমস্যাগুলির সৃষ্টি করে। হামফ্রে (২০০৯) দেখিয়েছেন, দূষিত ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য মলমূত্রাদিতে থাকা নানা ধরনের জীবাণু (মল সংক্রমণ ঘটিত বা এফটিআই) দ্বারা শিশুরা সংক্রমিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ সালে ভারতে ২৪ কোটি শিশুকে মানুষের মলমূত্রাদিতে মিশে যাওয়া নানা ধরনের পরজীবী যেমন—জিয়ার্ডিয়া, অ্যাসকারিস, হুককৃমির (যা অন্ত্র থেকে রক্ত শোষণ করে) প্রতিরোধে কিমোথেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন হয়েছিল। যথাযথ স্যানিটেশন ব্যবস্থা বা অপ্রতুল স্যানিটেশনের জন্য যে সব সমস্যা দেখা দিচ্ছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল এন্টেরিয়োপ্যাথি। খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগের কারণে যে সব অসুখে মানুষ আক্রান্ত হয় তা হল ডায়েরিয়া, ডিসেন্ট্রি, পোলিও, কলেরা হেপাটাইটিস, টাইফয়েড ইত্যাদি।
সূত্র : যোজনা, জানুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019