দেখা গিয়েছে, অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের উচ্চতা একই বয়সের অন্যান্য স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় প্রায় ১ সেন্টিমিটারের মতো কম হয়। বিভিন্ন দেশের উপর করা একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা তিন বছরের কমবয়সি শিশুদের উচ্চতা ০.৮-১.৯ সেমি পর্যন্ত বাড়াতে সক্ষম। চেকলয়েত (২০১১) ও লুন (২০১২) তাঁদের গবেষণায় দেখিয়েছেন, উন্নত স্যানিটেশন সম্ভবত মলমূত্রজনিত সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে, যার জন্য অন্ত্রে পুষ্টি উপাদানগুলি সঠিক ভাবে শোষিত হয়। ফলে তা শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধির পক্ষে সহায়ক হয়। যথাযথ স্যানিটেশনের অভাবে যে শুধুমাত্র শিশুরা অপুষ্টিতে আক্রান্ত হচ্ছে তাই নয়, দেশের অর্থনীতির উপরেও এর যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ২০১০ সালের বিশ্বব্যাঙ্কের জল ও অনাময় প্রতিবেদনে জানা গেছে, শৌচাগারের অপ্রতুলতা বা শৌচাগার ঠিকমতো ব্যবহার না করার কারণে ২০০৬ সালে ভারতের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) ৬.৪ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। মাথাপিছু এই ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২১৮০ টাকা। অন্য দিকে আফ্রিকার অধিকাংশ দেশে একই কারণে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১-২ শতাংশের মতো।
স্যানিটেশন ও পুষ্টির বিষয়টি অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। স্যানিটেশন ব্যবস্থা সুনিশ্চিত না করলে পুষ্টি সুনিশ্চিত করা সম্ভব নয়। সত্যি কথা বলতে ভারতে অপুষ্টি প্রতিরোধে যে সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার মধ্যে স্যানিটেশনের মতো বিষয়টিকে কখনওই সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। যদিও যে সব এলাকায় কিছুটা উন্নতিও লক্ষ্য কর গিয়েছে। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে স্বাস্থ্য পুষ্টির সঙ্গে এর প্রত্যক্ষ সম্পর্কের দিকটি এখনও পর্যন্ত জনগণের কাছে সামগ্রিক ভাবে পৌঁছে দেওয়া যায়নি। প্রধানমন্ত্রী স্বচ্ছ ভারত অভিযানের ডাক দিয়েছেন যাতে করে প্রতিটি পরিবারে শৌচাগার তৈরি করে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রাও স্থির করে দেওয়া হয়েছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে থাকার বিষয়টি মানুষকে জানাতে হবে।
সত্যি কথা বলতে কী, জোগান চালিত শৌচালয়ের ব্যবস্থা মানুষের অভ্যাসে উপযুক্ত পরিবর্তন বা উন্নতি আনতে পারেনি। এটা একটা খুব বড় চ্যালেঞ্জ। মানুষের মধ্যে শৌচাগার ব্যবহারের চাহিদা সৃষ্টি করতে না পারলে অবস্থার উন্নতি করা অসম্ভব। এই চাহিদা কী করে তৈরি করা যাবে, তা নিয়ে সবাইকেই ভাবনাচিন্তা করতে হবে। এর জন্য কিছু কঠোর সিদ্ধান্তেরও প্রয়োজন রয়েছে।
সূত্র : যোজনা, জানুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019