উন্নয়নশীল দেশগুলির ক্ষেত্রে, ‘নিট পুষ্টি’ কম হওয়ার নানা অসুস্থতা ও সর্বোপরি যথাযথ স্যানিটেশনের অভাবে শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। ভারতের মতো জনবহুল দেশ, যেখানে জনঘনত্ব অনেক বেশি, সেখানে শিশুদের বৃদ্ধি, এমনকী বৌদ্ধিক বিকাশও ব্যাহত হয় খোলা জায়গায় মলত্যাগ ও তৎসম্পর্কিত সংক্রমণের কারণে।
২০০৪-০৫ সালে জাতীয় নমুনা সমীক্ষা ও ২০০৫-০৬ সালের এনএফএইচএস সমীক্ষার প্রতিবেদন থেকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেছে যে, ভারতে অপুষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ হল যথাযথ স্যানিটেশনের অপ্রতুলতা এবং পানীয় জল সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানের অভাব। ২০১২ সালে ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি যুগ্ম সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ সালে সারা পৃথিবীতে ১৫ শতাংশ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ১৯ শতাংশ মানুষ কোনও রকম শৌচাগার ব্যবহার না করে খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে থাকেন। এ বিষয়ে ভারতের অবস্থা খুবই সঙ্গিন। ২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে ৫৩ শতাংশ পরিবার অর্থাৎ ৬০ কোটিরও বেশি মানুষ কোনও শৌচাগার ব্যবহার করেন না, খোলা জায়গায়, ‘মাঠে’ মলত্যাগ করেন। এবং খুব লজ্জাজনক ব্যাপার হচ্ছে সারা পৃথিবীতে এ ব্যাপারে সর্ব প্রথম স্থান আমাদের। গ্রামে ৬৯ শতাংশ মানুষ এখনও খোলা মাঠেই মলত্যাগ করে থাকেন।
এ বিষয়ে ভারতের রাজ্যগুলির মধ্যে সব থেকে শোচনীয় অবস্থা বিহার ও উত্তরপ্রদেশের। সারা পৃথিবীতে যত মানুষ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করেন তার মধ্যে ১২ শতাংশ উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। ২০১১ সালের জনগণনার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রামে মাত্র ৩০ শতাংশ বাড়িতে শৌচাগারের সুবিধা আছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ প্রতিবেশীর সঙ্গে শৌচাগারের সুবিধা ভাগ করে নিচ্ছেন। অর্থাৎ সেটি সাধারণ শৌচাগার। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করার বিষয়টি অতি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করেছে। কারণ এর ফলে মাটি যেমন দূষিত হচ্ছে,তার সঙ্গে জল ও বাতাসেও দূষণ ছড়িয়ে পড়ছে।মনে রাখা প্রয়োজন, মানুষে্র শরীর থেকে নির্গত মলমূত্রে প্রচুর রোগজীবাণু থাকে যা আবার অন্য মানুষের শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। মানুষের শরীরে প্রতি গ্রাম বর্জ্যে থাকতে পারে ১ কোটি ভাইরাস, ১০ লক্ষ ব্যাকটেরিয়া, ১০০০ পরজীবী এবং ১০০ পরজীবীর ডিম।
সূত্র : যোজনা, জানুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 4/29/2020