কম উচ্চতার শিশুদের মৃত্যুর হারও যথেষ্ট বেশি। পাঁচ বছরের কমবয়সি দশ লক্ষ শিশু প্রতি বছর মারা যায়, যাদের উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই কম। কম উচ্চতা নিয়ে যে সব শিশু বেঁচে থাকে, তাদের মধ্যে স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় নানা অসুখে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। তেমনই এদের বৌদ্ধিক বিকাশ যথাযথভাবে হয় না। এমনকী এদের কর্মক্ষমতাও কম হয়। সাধারণত শিশুর দৈহিক উচ্চতা কম হলে ভবিষ্যতে এদের মধ্যে নানা ক্রনিক অসুখ, যেমন—উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
আসলে পুষ্টির বিষয়টি যেমন জটিল তেমনই বহুমাত্রিক। শুধুমাত্র পুষ্টিকর আহার, পরিবারের খাদ্য সুরক্ষা, আর্থিক স্বচ্ছলতা, শিক্ষা, প্রতিষেধক, চিকিৎসা ব্যবস্থার সুযোগ ইত্যাদি অপুষ্টি প্রতিরোধে সক্ষম নয়। ২০০৯-১০ সালে জাতীয় নমুনা সমীক্ষার প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, গ্রামে শতকরা ৯৯ শতাংশ ও শহরাঞ্চলে প্রায় সমসংখ্যক মানুষই দু’বেলা পেট ভরে খেতে পান, তবে পরিমাণগত ভাবে ঠিক হলেও গুণগত মানের দিক থেকে তা কতটা সঠিক সেটা ভিন্ন প্রশ্ন। তবে এই পরিসংখ্যান প্রমাণ করছে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির কারণে ভারতে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ২ শতাংশ নেমে এলেও অপুষ্টিতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সেভাবে হ্রাস পায়নি। বহু দিন ধরে পৃথিবীব্যাপী অপুষ্টির রহস্য ভেদ করার জন্য নানা দেশে নানা গবেষণা চলছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সঠিক পুষ্টির বিষয়টি শুধুমাত্র খাওয়ার (তা পরিমাণ ও গুণগত মানের দিক থেকে যথেষ্ট হলেও) ওপর নির্ভর করে না। নির্ভর করে সেই খাবারের পুষ্টি উপাদানগুলি শরীরে কী ভাবে সদ্ব্যবহার হচ্ছে তার উপর।
ভারতীয় শিশুদের দীর্ঘকালীন অপুষ্টির জন্য শুধু খাদ্যের অভাবই দায়ী নয়। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, যথাযথ স্যানিটেশন ও দূষিত পানীয় জলের কারণে প্রায় সময়ই শিশুদের ক্ষুদ্রান্তে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া, পরজীবীর সংক্রমণ হয়ে থাকে। ফলে শিশুর ক্ষুদ্রান্ত থেকে পুষ্টি উপাদানগুলির শোষণ ব্যাহত হয়। এ সব ক্ষেত্রে যথেষ্ট পুষ্টিকর খাবার খাওয়ালেও পুষ্টির অভাব হয়েই থাকে। এটা আজ প্রমাণিত যে, অপুষ্টির সঙ্গে সংক্রমেণর প্রত্যক্ষ সংযোগ রয়েছে।
সূত্র : যোজনা, জানুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/15/2020