গান্ধীজয়ন্তীর দিন রাজঘাটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে অভিযানের উদ্বোধন করেন। এ দিন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীরও জন্মদিন। গান্ধী ও শাস্ত্রীর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করার পর প্রধানমন্ত্রী নিজে ‘বাল্মিকী বস্তিতে’ রাস্তায় ঝাড়ু দেন। মন্দির মার্গে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করতে গিয়ে তিনি আচমকাই স্থানীয় একটি থানায় ঢুকে পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় তাঁর বার্তায় বলেছেন, প্রতিটি ভারতবাসী বছরে ১০০ ঘণ্টা এই অভিযানের জন্য ব্যয় করুক। ভারতীয় বায়ু সেনা এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনীও এই অভিযানে সামিল হয়েছে।
স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সূচনা করে এতে সামিল হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশের একশো পঁচিশ কোটি মানুষকেই এই অভিযানে সামিল হতে হবে। এই অভিযানকে দেশের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ মহাত্মা গান্ধী ও লালবাহাদুর শাস্ত্রীর জন্মদিন। গান্ধীজির নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। কিন্তু তাঁর নির্মল ভারত গড়ার পরিকল্পনা আজও অপূর্ণ রয়ে গিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, স্বচ্ছ ভারত প্রচারের লোগো বা প্রতীকটিকে কেবলমাত্র একটি প্রতীক হিসাবে ধরলে চলবে না। এর মাধ্যমে গান্ধীজি আমাদের উপর এবং স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সাফল্যের উপর নজর রাখছেন। আমি মোটেই নতুন সরকার সবকিছু করছে এই দাবি করব না। মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার,আমাদের আশপাশ বা যে কোনও স্থান পরিষ্কার রাখার উদ্যোগ নিজেদের নিতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখাটা কেবলমাত্র সাফাই কর্মচারীদের দায়িত্ব নয়, এটা দেশের ১২৫ কোটি মানুষেরই কর্তব্য। আমরা যদি কম খরচে মঙ্গল গ্রহ অভিযান সফল করতে পারি, তা হলে নিজেদের পরিবেশকে কেন সাফসুতরো রাখতে পারব না?
পূর্ববর্তী সরকারের কৃতিত্বের স্বীকৃতি দিয়ে তিনি বলেন, আমি মোটেই মনে করি না যা কিছু করার তা সবই নবনির্বাচিত সরকার করেছে। সব সরকারই দেশকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যাপারে কিছু না কিছু করেছে। আমি প্রত্যেককেই এই অভিযানে সামিল হওয়ার জন্য অভিনন্দন জানাই। এই মিশন হবে রাজনীতির ঊর্ধ্বে। এটি রাজনীতি নয়, বরং দেশপ্রেম দ্বারা উদ্বুদ্ধ হবে।
এই অভিযানকে সমর্থন করার জন্য গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি আগামী কয়েক দিন মানুষ আমার সমালোচনা করবে। কিন্তু পরিচ্ছন্ন ভারত দেখার জন্য আমি সব সমালোচনা শুনতে রাজি আছি। শুধু সরকার ও মন্ত্রীদের দিয়ে অভিযান শুরু করা যেত না। এই কাজে সমস্ত দেশবাসীকে সামিল হতে হবে। এই কর্মসূচি দেশের ১২০কোটি লোকের জন্য। ১২০ কোটি বার আমি এই একই কথা বলব। এটিকে কেবলমাত্র প্রচার অভিযান হিসাবে দেখলে চলবে না। এর পরিধি ব্যাপক। তবে আমাদের হাতে অনেক সময় রয়েছে।
সোশাল মিডিয়ার ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাজারো সংগঠন পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি নিয়ে বেশ ভাল কাজ করে চলেছে। তাদেরও প্রচারের আলোয় নিয়ে আসতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানেই জঞ্জাল জমে রয়েছে সেখানকার ছবি তুলুন। ওই এলাকাটি পরিষ্কার করুন, পরে পরিচ্ছন্ন এলাকাটিরও একটি ছবি নিন। এর পর ‘MyGov’ নামক মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে তা সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করে দিন। তাঁর মন্তব্য, আমিও সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার শুরু করেছি। আমি ন’জন ব্যক্তিকে তাঁদের সাফাইয়ের কাজ তুলে ধরার জন্য অনুরোধ করেছি এবং তাঁদের বলেছি তাঁরা প্রত্যেকে আরও ন’জনকে একই অনুরোধ করুন। এর মধ্যে রয়েছেন গোয়ার রাজ্যপাল মৃদুলা সিনহা, মাস্টার ব্লাস্টার শচিন তেন্ডুলকার, কংগ্রেস নেতা শশী থারুর, বলিউড অভিনেতা আমির খান, প্রিয়াঙ্কা চোপরা, সলমন খান, যোগগুরু বাবা রামদেব এবং ‘তারক মেহতা কা উল্টা চশমা’ ধারাবাহিকের কুশিলবরা। মা ও তাঁর মেয়েকে খোলা জায়গায় শৌচ করতে দেখে আমার দুঃখ হয়। ৬০ শতাংশেরও মানুষ এ ভাবে শৌচ করতে বাধ্য হন। ফলে তাঁদের সম্মান দিতে আমাদের আরও বেশি করে শৌচালয় বানাতেই হবে। আমার সরকারকে বিশ্বাস করতে হবে না, কিন্তু আপনারা মহাত্মা গান্ধীর পরিচ্ছন্নতার প্রতি আগ্রহে বিশ্বাস রাখুন।
কেন্দ্রীয় সরকার আগামী পাঁচ বছরে এই অভিযানে মোট ২ লক্ষ কোটি টাকা খরচের পরিকল্পনা করেছে। গান্ধীজির ১৫০-তম জন্মবার্ষিকীকে এই প্রকল্প রূপায়ণের সময়সীমা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ৬২হাজার কোটি টাকা খরচ করবে নগরোন্নয়ন মন্ত্রক। পানীয় জল ও পরিচ্ছন্নতা মন্ত্রক খরচ করবে এক লক্ষ ৩৪ হাজার কোটি টাকা।
সূত্র : ৩ অক্টোবর ২০১৪-য় ডিএনএ সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন।
যে সব বিখ্যাত মানুষ এই অভিযানে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য--- অনিল আম্বানি, শচিন তেন্ডুলকর, সলমন খান, প্রিয়াঙ্কা চোপরা, বাবা রামদেব, কমল হাসন, মৃদুলা সিনহা ও শশী থারুর। প্রখ্যাত চিত্রাভিনেতা আমির খান এই অভিযানের সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন তিনি অবশ্যই এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন।
৩ অক্টোবর ২০১৪-য় রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে স্বচ্ছ ভারত দৌড়ের সূত্রপাত হয়। রাষ্ট্রপতি ভবনের বিবৃতি অনুযায়ী এতে প্রায় ১৫০০ মানুষ অংশ নেন। উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। সচিবালয়ের আধিকারিক, কর্মী, রাষ্ট্রপতির দেহরক্ষী, দিল্লি পুলিশের কর্মীরা এবং তাঁদের পরিবারের লোকজন দৌড়ে অংশ নেন।
সূত্র : বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত তথ্য অনুযায়ী।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/16/2020