আমাদের দেশে যে অপরিচ্ছন্নতা রুখতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তা নয়। আগেই বলা হয়েছে দেশের বেশ কিছু অঞ্চলকে প্লাস্টিক মুক্ত অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ওই সব জায়গায় প্লাস্টিক ফেললে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া রাজ্যে গঠিত হয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবং আইনভঙ্গকারীর জন্য জরিমানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু আইন কার্যকর করার ব্যাপারে সরকার দ্বিধাগ্রস্ত। অথচ কলকাতা শহরের এক প্রাক্তন মেয়র তাঁর সময়ে সামান্য কঠোরতা প্রয়োগ করে এবং জরিমানা আদায়ের ব্যবস্থা করে কলকাতার নাগরিকদের শহর অপরিচ্ছন্ন করার মানসিকতাকে কিছুটা হলেও রুখে দিতে পেরেছিলেন। আমাদের প্রশাসন সামান্য সক্রিয় হলেই কাজটা অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
সার্বিক পরিচ্ছন্নতার স্বার্থে পরিচ্ছন্নতার পাঠ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। স্কুলে পাঠ্যসূচিতে যেমন পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের পরিচ্ছনতার কাজে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে হবে সে রকম দেশের সমস্ত অফিস, কলকারখানা, স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান সর্বত্রই পরিচ্ছন্নতার ন্যূনতম মানদণ্ড নির্ধারণ করতে হবে, যে মানদণ্ডের নীচে নামলে তাদেরও যাতে আইনের কাঠগড়ায় টেনে আনা যায়, আইনে সে রকম ধারা সংযুক্ত করতে হবে। ইতিমধ্যে অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় সংগঠন এবং জওহর নবোদয় বিদ্যালয় সমিতির আওতাভুক্ত বিদ্যালয়গুলিতে ছাত্র-ছাত্রীদের পরিচ্ছন্নতার পাঠ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদেরও তাঁদের নিজেদের রাজ্যগুলিকে আরও পরিচ্ছন্ন করে তোলার কাজে উদ্যোগী হতে হবে। কারণ অঙ্গের শোভা অবহেলা করলে শরীরের সার্বিক শোভাবর্ধন সম্ভব নয়। তা ছাড়া পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে অর্থনীতিও সম্পর্কযুক্ত। কারণ যে সব দেশে সার্বিক পরিচ্ছন্নতা রয়েছে সে সব দেশে বিদেশি পর্যটকের ঢল নামে, আসে বিদেশি বিনিয়েগ। ফলে দেশের অর্থনীতিও উন্নত হয়। সুতরাং দেশকে পরিচ্ছন্ন করে তুলতে প্রশাসনকে (বিশেষ করে স্থানীয় স্তরের প্রশাসনকে) আরও বেশি করে সক্রিয় হতে হবে। তাদের বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যাপারে উপযুক্ত উন্নত পরিকঠামো গড়ে তুলতে হবে। আর প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বর্জ্যকে বিনষ্ট করা অথবা সেটিকে পুনর্ব্যবহারের উপযুক্ত করে তুলতে হবে।
সূত্র : যোজনা, জানুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/2/2020