দেশ স্বাধীন হওয়ার ৬৭ বছর পরেও আমাদের গায়ে অপরিচ্ছন্নতার তকমা সেঁটে রয়েছে। আসলে নেতৃত্বের তরফে প্রয়োজন, পরিচ্ছন্নতার আন্দোলন গড়ে তোলা, যে আন্দোলনে সকলকে শামিল করা আবশ্যক। ১৮৯৯ সালে কলকাতায় যখন প্লেগ মহামারির আকার ধারণ করে তখন স্বামীজির নির্দেশে ভগিনী নিবেদিতা শহরকে পরিচ্ছন্ন করার কাজে হাত লাগিয়েছিলেন এবং সেই কাজে অস্যখ্য যুবকদেরও টেনে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। চিনে ১৯৫২ সাল থেকেই পরিচ্ছন্নতার আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সেই সময় থেকেই গ্রামের ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে মাছি মারা, যেখানে সেখানে থুতু ফেলা বা নোংরা ফেলা বন্ধ করা, রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা, এই সব কাজে হাত লাগায়। আমাদের দেশে পরিচ্ছন্নতা আন্দোলনের পথিকৃৎ মহাত্মা গান্ধী। তিনি পরিচ্ছন্নতা আন্দোলনকে দেশ জুড়ে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেই তিনি এই আন্দোলনের সূচনা করেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় স্বাধীন ভারতের কোনও নেতাই পরিচ্ছন্নতা আন্দোলনের রূপ দিতে এগিয়ে আসেননি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশকে অসম্মানের হাত থেকে বাঁচাতে সম্প্রতি মহাযজ্ঞ শুরু করেছেন। এই কর্মযজ্ঞে আর্থিক বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াবে ১ লক্ষ ৯৬ হাজার কোটি টাকা এবং সারা দেশে নির্মিত হবে ১২ কোটি শৌচাগার। প্রধানমন্ত্রী ২০১৯ সালের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছেন। ২০১৯ সালে দেশ জুড়ে মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশতবার্ষিকী অনুষ্ঠান পালিত হবে। সুতরাং গান্ধীজির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের সকলকেই প্রধানমন্ত্রীর আবেদনে সাড়া দিয়ে স্বচ্ছ ভারত অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তবে এই কাজে সফল হতে গেলে কেবলমাত্র মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির উপর বিষয়টিকে ছেড়ে দিলে চলবে না, সচেতনতার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে কঠোর আইন প্রনয়ন এবং সেই আইন রূপায়ণে সরকারকে সক্রিয় হতে হবে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং আবর্জনা সংক্রান্ত রাজ্য সরকার, কেন্দ্রীয় সরকার ও কর্পোরেশনের যে আইনগুলি রয়েছে সেগুলি যাতে ঠিকমতো প্রয়োগ করা সম্ভব হয় সে দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আইন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাব রয়েছে। এই জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাও জরুরি।
সূত্র : যোজনা, জানুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/19/2020