অত্যন্ত লজ্জার বিষয় যে ভারতে এক বিপুল সংখ্যক মানুষ উন্মুক্ত অঞ্চলে শৌচকর্ম করে থাকে। অবশ্য কেবলমাত্র ভারতেই যে এই ব্যাপারটা ঘটছে তা নয়। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ শৌচকর্মের জন্য খোলা অঞ্চলকেই বেছে নেয় এবং এরা সকলেই উন্নয়নশীল দেশের মানুষ। তবে সংখ্যার দিক থেকে ভারত একেবারে সবার উপরে এবং ২০১২ সালে সংখ্যাটা ছিল ৫৯ কোটি ৭০ লক্ষ। সুতরাং ভারতকে প্রকাশ্য মলত্যাগের দেশ বললে অত্যুক্তি করা হয় না, যেমন কেনিয়ার নাইরোবিকে বলা হয় উড়ন্ত শৌচাগারের শহর। নাইরোবির চার পাশে যে বস্তি রয়েছে সেখানকার বেশির ভাগ মানুষ প্লাস্টিকের প্যাকেটে মলত্যাগ করে সেই প্যাকেট রাস্তায় ছুড়ে ফেলে। কেনিয়ার সরকারের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়, তারা নাইরোবির ৯৯ শতাংশ মানুষের জন্য শৌচাগারের ব্যবস্থা করতে পেরেছে। শৌচাগারের অভাব দেশের এক বিরাট সংখ্যক মানুষকে খোলা জায়গাতেই আড়ালে-আবডালে কাজটা সারতে হচ্ছে। তবে শহরে এই আড়ালটা আর কোথায়। শহরে ঝুপড়িবাসী মানুষদের একটা বড় অংশ রাত থাকতেই রেল লাইনের আশপাশে বা হাইড্রেনে কাজটা সারেন। অল্পবয়সিদের তো দিনের আলোতেই এই সব ড্রেনে মলত্যাগ করতে দেখা যায়। গ্রামে অবশ্য নির্জনতার অভাব নেই এবং রয়েছে খোলা মাঠ। তবে সে সব জায়গাতে বিপদও ওঁত পেতে থাকে। এই বিপদ শুধু জন্তু জানোয়ারের আক্রমণ নয়, মানুষের আক্রমণ, লালসার শিকার হয়ে মারা পড়েন অনেক মহিলা। অথচ দেশের প্রতিটি পরিবার যাতে নিজস্ব শৌচাগার নির্মাণ করতে পারে সে জন্য ১৯৯৯ সাল থেকে চালু রয়েছে ‘নির্মল ভারত অভিযান’ প্রকল্প। প্রকল্পে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলির জন্য অনুদানের সংস্থান করা হয়েছিল এবং ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের খরচও হয়েছে ১৯০০০ কোটি টাকা। কিন্তু অগ্রগতি সামান্যই। সম্প্রতি এ ব্যাপারে দেশের ২৬টি রাজ্য, ২৮৭টি জেলা এবং ২৮৬৮টি গ্রামে যে নিরপেক্ষ সমীক্ষা চালানো হয় সেখান থেকে জানা যায়, ৫৪ শতাংশ পরিবারে কোনও শৌচাগার নেই।
সূত্র : যোজনা, জানুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019