গঙ্গার দূষণ নির্ণয়ের একটা মাপকাঠি হল জলে ‘ফিকাল কলিফর্ম’ ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ। এই পরিমাপ থেকে জানা যায় জলে মলমূত্র কতটা মিশছে। প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ২৫০০-র কম ফিকাল কলিফর্ম থাকলে এই জলকে নিরাপদ বলা যেতে পারে। গোমুখে ফিকাল কলিফর্মের সংখ্যা শূন্য আর ডায়মন্ডহারবারে ৮০,০০০। এই দীর্ঘ পথে ফিকাল কলিফর্ম সব চেয়ে বেশি দক্ষিণেশ্বরে-১১,০০,০০০। অর্থাৎ গঙ্গার পবিত্র জল অনেক জায়গাতেই আজ আর কেবলমাত্র অপবিত্রই নয়, ক্রমশ বিষাক্ত হয়ে উঠছে। দূষণের কারণে ভারতে চার শঙ্করাচার্যই ২০১৩ সালে এলাহাবাদের মহাকুম্ভর পুণ্য শাহিস্নানে অংশগ্রহণ করতে রাজি হননি।
ধর্মীয় কারণেও দূষিত হচ্ছে গঙ্গা এবং অন্যান্য নদনদী। শবদাহের বর্জ্য মিশছে নদীজলে। তা ছাড়া হিন্দুদের দেবদেবীর সংখ্যা কম নয়, মূর্তি গড়ে মৃন্ময়ী দেবদেবীকে আমরা পুজো করি, তাঁদের পায়ে অঞ্জলি দিই আর পূজান্তে এই সব দেবতাদের নদনদী এবং জলাশয়ে বিসর্জন দিই। এর ফলে প্রতিমার রঙের সঙ্গে মিশে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিক মিশছে নদীর জলে, দূষিত হচ্ছে জল, বিপন্ন হচ্ছে মাছ এবং অন্যান্য জলজ প্রাণী। দূষণের কারণে বাঙালির প্রিয় ইলিশ মাছ গঙ্গা থেকে উধাও হতে বসেছে। সারা বছর ধরে হাজার হাজার মাটির মূর্তি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের জলাশয়গুলিতে বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে, যা পশ্চিমের দেশগুলিতে কল্পনাও করা যায় না। ইউরোপ ও আমেরিকাবাসী বাঙালিরা দুর্গাপুজো করে ঠিকই কিন্তু সেখানকার নদিগুলিতে এই সব মূর্তি বিসর্জন দিতে পারে না। কলকাতা পুরসভা এ সব ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে এবং তারা বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিমার কাঠামো সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু সিন্ধুতে বিন্দু সম এই সব প্রচেষ্টা। এবং তা-ও দেশের সমস্ত পুরসভা এবং পঞ্চায়েতগুলির তরফে এই প্রয়াস নেওয়া হয়েছে তা বলা যায় না। প্রয়োজন এই সব মূর্তি নদীতে বিসর্জন না দিয়ে পূজাস্থলেই জলধারায় এগুলি গলিয়ে ফেলা, যা করা হচ্ছে উত্তর চব্বিশ পরগনার নৈহাটিতে কালীপ্রতিমাগুলির ক্ষেত্রে এবং যা নৈহাটি মডেল হিসেবে খ্যাতিলাভ করেছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার শপথ নিয়েছেন। ঘোষণা করেছেন, ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্প। ২০১৪-১৫ সালে এর জন্য বাজেট বরাদ্দ হয়েছে ২০৩৭ কোটি টাকা।
সূত্র : যোজনা, জানুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/20/2019