দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আইন অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে ৪০ মাইক্রোনের কম পুরু প্লাস্টিক তৈরি বা ব্যবহার নিষিদ্ধ। ২০০৮ সালে রাজ্য সরকারের তরফে আইনভঙ্গকারীদের ৫০০ টাকা জরিমানা করার সংস্থান করা হয়। তা ছাড়া রাজ্যের উপকূল অঞ্চল, সুন্দরবন এবং পাহাড়ে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এমনকী ২০০৭ সালের বর্ষণ বিপর্যয়ের পর কলকাতা ও হাওড়া পুরসভাকে বেআইনি ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যবহার চলছে রমরমিয়ে। জিটিএ-কে পাহাড়ে পুনরায় প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হয়েছে।
শহরাঞ্চলে জলাশয়গুলির নয়নাভিরাম রূপ এখন আর বিশেষ দেখা যায় না। তা ছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গৃহ নির্মাণের তাগিদে এই সব জলাশয়ের অস্তিত্বও বিপন্ন। যে-কটি রয়েছে সেগুলির বেশির ভাগই আবার দূষণের শিকার। ফলে পুকুর ও জলাশয়গুলিতে মাছ চাষও ব্যাহত হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অর্থনীতি। বিপন্ন পূর্ব কলকাতার জলাভূমি। ১২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে জীববৈচিত্রে ভরপুর এই জলাভূমি দেশবিদেশের অসংখ্য পাখিদের বিচরণ ভূমি। এখানকার মাছের ভেড়িতে উৎপাদিত অসংখ্য মাছ এবং জমিতে উৎপাদিত সবজি কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার এক বিরাট সংখ্যক মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা মেটায়। ভারত সরকার এই জলাশয়কে ২০০৩ সালে ‘রামসর কনভেনশনের’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করেছে। (১৯৭১ সালে ইরানের রামসর শহরে বিশ্বের জলাভূমিগুলি বাঁচানোর লক্ষ্যে যে সম্মেলন ডাকা হয়েছিল, সেটি রামসর সম্মেলন হিসেবে খ্যাত)। দূষণ বাড়ছে দেশের নদনদীগুলিতেও। সংস্কারের অভাবে বহু নদনদীই আজ বিলুপ্তির পথে। আর এই নদী দূষণের সব চেয়ে বড় আধার হয়ে দাঁড়িয়েছে পবিত্র গঙ্গা নদী। যার পবিত্র জলে হিন্দুদের সমস্ত পূজাপার্বণ হয়। গোমুখ থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত ২৫০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই গঙ্গা কেবলমাত্র ধর্মের ধ্বজাকেই বহন করে চলেছে তা নয়, অর্থনীতির স্রোতকেও বয়ে নিয়ে চলেছে। গঙ্গাকে ঘিরে বাণিজ্য গড়ে উঠেছে, জীবন নির্বাহ হচ্ছে দেশের কোটি কোটি মানুষের। দুর্ভাগ্যের বিষয় কলকারখানার দূষিত জল এবং বর্জ্যের একটা বড় অংশ গঙ্গায় মিশছে।
সূত্র : যোজনা, জানুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/30/2020