আমরা না পারলেও পৃথিবীর অনেক দেশই কিন্তু অপরিচ্ছন্নতাকে জয় করে পরিচ্ছন্ন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এ প্রসঙ্গে আমাদের প্রতিবেশী চিনের কথাই প্রথমে উল্লেখ করা যেতে পারে। ১৯৪৯ সালে মাও সে তুঙের নেতৃত্বে নতুন চিনের যাত্রা শুরু হয় এবং সে সময় পরিচ্ছন্নতার মাপকাঠিতে তারা আমাদের চেয়ে এগিয়ে ছিল তা বলা যায় না। কিন্তু বর্তমানে চিন পরিচ্ছন্নতার নিরিখে আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলেছে। চিনে প্লাস্টিক নিষিদ্ধ নয় এবং বিভিন্ন বিপণীতে প্লাস্টিকের প্যাকেটেই পণ্যসামগ্রী ভরে দেওয়া হয়। কিন্তু রাস্তাঘাটে কোনও প্লাস্টিকের জঞ্জাল চোখে পড়ে না। চোখে পড়ে না থার্মোকলের স্তূপ। সাংহাইয়ের হোয়ামগোপু নদীতে ক্রুজ করলে বুঝতে পারা যায় পরিচ্ছন্ন নদী, সামান্য খড়কুটো ভেসে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে না। পরিচ্ছন্ন রাজপথে কোথাও খড়কুটো চোখে পড়ে না। রাস্তায় ১০০ মিটারের মধ্যে ডাস্টবিন দেখা যায়। ১৯৫০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও অপরিচ্ছন্নতার নিরিখে ছিল বর্তমান ভারতের কাছাকাছি, কিন্তু সরকারের উদ্যোগে মাত্র এক দশকের মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি ঝাঁ চকচকে দেশে পরিণত হয়। আফ্রিকা মহাদেশের দেশ রাওন্ডা কিছু দিন আগে পর্যন্ত ছিল হানাহানিতে জর্জর এক অপরিচ্ছন্ন রাষ্ট্র। কিন্তু বর্তমানে পরিচ্ছন্নতার নিরিখে তারা সাব-সাহারান দেশগুলির মধ্যে অষ্টম স্থানে এবং পরিচ্ছন্নতা বাড়িয়ে তারা দেশের জিডিপিও অনেকটা বাড়িয়ে নিতে পেরেছে। এমনকী মরিশাসের মতো ছোট দেশও পরিচ্ছন্নতার নিরিখে বিশ্বের দশটি পরিচ্ছন্ন দেশের মধ্যে চতুর্থ স্থান দখল করেছে। এবং নিজেদের স্বাভাবিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে পরিচ্ছন্নতার মেলবন্ধন ঘটিয়ে সারা পৃথিবী থেকে পর্যটকদের টেনে আনতে সমর্থ হয়েছে। এই দশটি দেশ হল : কলম্বিয়া, কিউবা, অস্ট্রিয়া, মরিশাস, নরওয়ে, সুইডেন, কোস্টারিকা, সুইজারল্যান্ড, আইসল্যান্ড এবং ফ্রান্স। অন্য দিকে প্রাকৃতিক নিদর্শন এবং ঐতিহাসিক সম্পদে সমৃদ্ধ আমাদের এই প্রাচীন দেশ পর্যটন প্রতিযোগিতায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়ছে এবং ২০১৩ সালে পৃথিবীর ১৪০টি দেশের মধ্যে আমাদের স্থান ৬৫ তম। (ওয়ার্লড ইকোনমিক ফোরামের সমীক্ষা অনুযায়ী)
সূত্র : যোজনা, জানুয়ারি ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/29/2020