অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

অনিয়মিত ঋতুস্রাব

চোদ্দ বছর বয়সি লীলা এখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। বেশ কিছু দিন ধরেই একটু আনমনা থাকে লীলা। কী হয়েছে বাড়িতে কারও কাছেই সে কিছুই বলতে চায় না। অবশেষে স্কুলের বান্ধবীরা জিজ্ঞাসা করলে লীলা তাদের জানায়, বেশ কিছু দিন ধরে অনিয়মিত ঋতুস্রাবের দরুণ সে অসুস্হতা অনুভব করছে। বন্ধুরা নানা কথা বলে লীলাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। কারও কথায় এর থেকে ক্যান্সার হতে পারে। কেউ আবার জানায় তার মাসির এর থেকেই ইউটেরাসে টিউমার হয়েছিল এবং ইউটেরাস বাদ দিতে হয়েছিল। ভয় পেয়ে লীলা তার মাকে সব জানায়। মেয়ের মুখে সব শুনে লীলাকে স্থানীয় মহিলা স্ত্রীরোগ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায় তার মা।

সমস্যা কোথায়

মা : আমার মেয়ের আট মাস আগে প্রথম ঋতুস্রাব হয়। কিন্তু এই আট মাসে মাত্র তিন বার ঋতুস্রাব হয়েছে লীলার।

ডাক্তারদিদি : ঋতুস্রাবের সময় কি রক্তক্ষরণ বেশি হয়?

মা : খুব বেশি নয়। তবে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বলে মনে হয়।

ডাক্তারদিদি : এই সময় কি ব্যথা হয় কিংবা অন্য‌ কোনও সমস্য‌া হয় কি?

মা : না, আর কোনও সমস্যা নেই।

কিছু সাধারণ চেক-আপ এর পর ডাক্তার দিদি জানান -

শুরু হওয়ার পর ২ বছর অবধি ঋতুস্রাব অনিয়মিত হতে পারে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। ঋতুচক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে ব্রেনের হাইপোথ্য‌ালামাস-এর ও পিটুইটারির হরমোন। অল্প বয়সে এবং ব্রেনের ম্যাচিওরিটির আগেই যদি ঋতুস্রাব হয় সে ক্ষেত্রে ২ বছর অবধি এমনটা হতেই পারে। ২ বছর পেরিয়ে গেলে অবশ্য‌ই দেখা উচিত যে তার আর কোনও সমস্য‌া আছে কিনা।

অনিয়মিত ঋতুস্রাব থেকে রক্তাল্পতা

ঋতুস্রাব যে হেতু শরীরে হরমোনের মাত্রার ওপর নির্ভর করে সে ক্ষেত্রে প্রথমেই দেখতে হবে শরীরে তার পরিমাণ কতটা।

 

মা : এখন তা হলে কি কোনও চিকিৎসার প্রয়োজন আছে?

ডাক্তারদিদি : ঋতুস্রাব অনিয়মিত হওয়ার ফলে আপনার মেয়ের রক্তাল্পতা হতে পারে, যা আমাদের দেশের বেশির ভাগ মেয়েরই রয়েছে। উপযুক্ত পুষ্টির অভাব কিংবা রক্তক্ষরণ যে কোনও কারণেই হতে পারে। তাই একটি হিমোগ্লোবিন পরীক্ষা এবং একটি থাইরয়েড পরীক্ষা আবশ্য‌ক।

 

এই দু’টি পরীক্ষার রিপোর্ট এনে লীলা ও তার মা ডাক্তারকে দেখায়। থাইরয়েড স্বাভাবিক তবে রক্তাল্পতার কারণে তাকে আয়রন ট্য‌াবলেট দেওয়া হয়। এর পর লীলার কিন্তু ২ বছর পরেও একই সমস্য‌া চলতে থাকে।

এর পর ডাক্তার দিদি তাকে পেলভিক সোনোগ্রাফি করতে বলেন। পুনরায় থাইরেয়ড মাপা হয় এবং প্রোল্য‌াকটিন হরমোনও মাপা হয়।

রিপোর্টে দেখা যায় লীলার পলিসিস্টিক ওভারি রয়েছে।

পলিসিস্টিক ওভারি কী

ডাক্তারদিদি এ বার পরামর্শ দেন : সাধারণত মেয়েদের ঋতুচক্রের প্রতি মাসে একটি করে ডিম্বাণু বড় হয় ও ওভারি থেকে বেরিয়ে আসে যাকে বলে ওভিউলেশন। যদি হরমোনের মাত্রা ঠিক না থাকে এবং প্রতি মাসে ওভিউলেশন না হয় তা হলে সেগুলি ওভারিতে থেকে যায়। ডিম্বাণু একটি জলভরা বেলুনের (ফলিকল) মধ্যে থাকে। আলট্রাসোনোগ্রাফিতে এই ডিম্বাণুগুলিকে বেলুন বলে মনে হয়, লাতিন ভাষায় যাকে সিস্ট বলে। ডিম্বাণুগুলি বেরোতে না পারার ফলে এ ভাবে অনেকগুলি যখন সিস্ট দেখা যায় তখন তাকে পলিসিস্টিক ওভারি বলে।

পলিসিস্টিক ওভারি জিন পরিবাহিত একটি সমস্য‌া। রক্তের সম্পর্ক যাদের সঙ্গে রয়েছে তাদের যদি ডায়াবেটিস থাকে এবং মেয়েটি যদি সেই জিন বহন করে তা হলে অল্প বয়সে ইনসুলিন হরমোনটি তার বেশি নিঃসরণ হয়। এটি রক্তে বেশি থাকার ফলে তার গর্ভাশয় থেকে প্রতি মাসে যে ডিম্বাণু পরিপক্ক হওয়ার কথা তা হয় না। এই রোগ নিরাময় করতে ইনসুলিন কমানোর ওষুধ এবং হরমোনের অসমতা নিয়ন্ত্রণ করার ওষুধ দেওয়া হয়।

ওষুধের সঙ্গে চাই নিয়মিত ব্য‌ায়াম ও সঠিক খাদ্য‌াভ্য‌াস

ইনসুলিন হরমোনটি লীলার মতো মেয়ের শরীরে একটি পুরুষ হরমোনের মতো কাজ করে। তার ফলে গালে ব্রন, মুখের বিভিন্ন জায়গায়, বুকের সামনে, তলপেটে, থাইতে অবাঞ্ছিত লোম জন্মায়। গলার নীচের দিকে ও ঘাড়ের দু’পাশে চামড়া মোটা ও কালচে হয়ে যায়। এই উপসর্গ দেখে খুব সহজেই এই রোগ নির্ণয় করা যায়। মনে রাখতে হবে, ওজন বেশি থাকলে এই চিকিৎসা ফলপ্রসূ হবে না। নিয়মিত খেলাধূলা, ব্য‌ায়াম করতে হবে, খাদ্য‌াভ্য‌াস ঠিক রাখতে হবে এবং অবশ্য‌ই মানসিক চাপ কমাতে হবে।

মা : ডাক্তারদিদি, স্কুলের পড়াশোনার যা চাপ তাতে কখনই বা ব্য‌ায়াম করবে এবং ওর মানসিক চাপ কমবেই বা কী করে?

ডাক্তারদিদি : লীলা বাচ্চা মেয়ে। অবশ্য‌ই ওর জিমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে রোজ কম পক্ষে ১ ঘন্টা খোলাধূলা করা উচিত। যাতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। খাদ্য‌ের মধ্য‌ে দুধ ফল শাকসবজি সুষম পরিমাণে খাওয়া উচিত। জোর করে বেশি খাবার খাওয়া উচিত নয়। মাছ, মাংস, ডিম সবই খুব হালকা তেলে রান্না করে খাওয়া উচিত। পড়াশোনার চাপ খুব বেশি দেওয়া উচিত নয়।

 

এর পর লীলার মা ডাক্তারদিদির প্রেসক্রিপশন নিয়ে ওষুধের দোকানে যান এবং নানা প্রশ্ন নিয়ে ডাক্তারের কাছে আবার ফিরে আসেন। লীলার মা ওষুধের দোকান থেকে জানতে পারেন প্রেসক্রিপশন-এর প্রথম ওষুধটি ডায়াবেটিস এবং দ্বিতীয় ওষুধটি গর্ভনিরোধক ট্য‌াবলেট।

 

মা : ডাক্তারদিদি এই ওষুধ লীলাকে কেন দেওয়া হল?

ডাক্তারদিদি : ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক করার জন্য‌ যে ওষুধটি ব্যবহার করা হয় তা ডায়াবেটিসেও দেওয়া হয় এবং ঋতুচক্র নিয়মিত করার জন্য‌ গর্ভনিরোধক ট্য‌াবলেটই সব চেয়ে ভাল কারণ এতে হরমোনের মাত্রা খুব কম থাকে। এই ওষুধগুলি খেলে ঋতুচক্র নিয়মিত হবে, রক্তাল্পতা হবে না, ঋতুস্রাবের সময় পেটে ব্য‌থা হবে না, গর্ভাশয়ে সিস্ট এবং জরায়ুতে টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এনডোমেট্রিওসিস হওয়ার সম্ভাবনা কমবে। এই ট্য‌াবলেট যদি ৮ থেকে ১০ বছর খাওয়া হয় তা হলে ওভারিতে (গর্ভাশয়)ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা কমবে ৬০ শতাংশ এবং জরায়ুতে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা কমবে ৮০ শতাংশ।

 

ডাক্তারের থেকে এই পরামর্শ নিয়ে লীলা ও তার মা চলে যায় এবং ৩ মাস এই নিয়ম মেনে চলে। ৩ মাস পর চেক আপ-এ এলে কিছু পরীক্ষা করে দেখা যায় সব কিছু নিয়ন্ত্রণে আছে। এর পর আবার ৬ মাস পরে চেক-আপ হয়। কিছু দিন এ ভাবে চলতে থাকে।

 

ডাক্তারদিদি : এ ভাবে ব্য‌ায়াম ও খাদ্য‌াভ্য‌াস সঠিক রাখতে হবে। মানসিক চাপ যাতে না বাড়ে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কখনও ওজন বাড়লে, অনিয়মিত ঋতুস্রাব হলে বা যদি কোনও কারণে মানসিক চাপ আসে তা হলে অবশ্য‌ই ডাক্তারের পরার্মশ নিতে হবে।

মনে রাখবেন

  • কন্যা সন্তানের মাসিক শুরুর পরে প্রথম দু’বছর অনিয়মিত থাকতে পারে। তবে তা বেশি সময় ধরে হলে ডাক্তার দেখান।

  • দু’বছরের পরেও অনিয়মিত থাকলে অবশ্যই ডাক্তার দেখান।

  • বয়স সন্ধিকালে খেলাধূলা ও শারীরিক ব্যায়ামের প্রয়োজন।

  • সুষম খাদ্যাভ্যাস ঠিক রাখা উচিত।

  • কোনও মতে ওজন বাড়তে দেওয়া চলবে না।

সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/25/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate