সুন্দর, সুস্থ, সবল ও নীরোগ থাকতে কে না চায়? শরীরের বাইরের পরিচ্ছন্নতা আপনার হাতে, কিন্তু শরীরের ভিতরের পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব কিডনির (বৃক্ক) এবং লিভারের (যকৃৎ)। যকৃৎ শরীর থেকে বিভিন্ন দূষিত পদার্থ যৌগ সহকারে পিত্ত মারফত নির্গত করে। কিডনি অনাবশ্যক ক্ষতিকারক পদার্থসমূহ শরীর থেকে দূর করার গুরুত্বপূর্ণ কার্য করে।
ডনির রোগে পীড়িত রোগীর সংখ্যা বিগত কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ডায়াবিটিস (মধুমেহ) আর উচ্চ রক্তচাপের রোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়াই কিডনি বিকল রোগীর সংখ্যাবৃদ্ধির মুখ্য কারণ ।
এই বইয়ের মাধ্যমে প্রত্যেক ব্যক্তিকে কিডনির বিষয়ে জ্ঞান, তথ্যাদি, নির্দেশাবলি যথাসম্ভব প্রদান করার চেষ্টা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কিডনির রোগের লক্ষণ, প্রতিকার তথা প্রতিরোধের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান প্রদান করার চেষ্টা করা হয়েছে।
এই পুস্তকের বিভিন্ন অধ্যায়ে সহজ সরল ভাষায় কিডনির রোগ থেকে বাঁচার উপায়, কিডনির রোগের ব্যাপারে প্রচলিত কুসংস্কার দূর করার, ডায়ালিসিস, কিডনি প্রতিস্থাপন, ক্যাডাভার প্রতিস্থাপন, আহার এবং সাধারণ নির্দেশাবলির বিস্তৃত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। যাতে বিন অসুবিধায় পাঠক সরলভাবে পুস্তকটি পড়তে পারেন সেজন্য পুস্তকের শেষে মেডিক্যাল শব্দাবলি আর সংক্ষিপ্ত শব্দগুলির অর্থ দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষ এবং কিডনির রোগীদের এই পুস্তক কিডনির রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে সাহায্য করবে।
কডনি (বৃক্ক) মানব শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনির তুলনা সুপার কম্পিউটারের সঙ্গে করা উচিত কারণ কিডনির গঠন এবং কার্য অতীব জটিল ।
কডনি শরীরের রক্ত পরিষ্কার করে মূত্র তৈরি করে। শরীর থেকে মূত্র নিষ্কাশন করার কার্য STAFTFT (Ureter) IAT“FI (Urinary Bladder) SIE মূত্রনালিকা (Urethra) দ্বারা হয়ে থাকে।
কিডনির প্রধান কার্যগুলি হল :
কিডনি নরলসভাবে সর্বক্ষণ উৎপন্ন অনাবশ্যক পদার্থগুলিকে মূত্রদ্বারা শরীর থেকে দূর করে।
কিডনি শরীরের প্রয়োজনের অতিরিক্ত জল মূত্রদ্বারা শরীর থেকে বাইরে বের করে।
কিডনি শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরইড,ম্যাগনেশিয়াম,ফসফেটস,বাই কার্বনেট ইত্যাদির মাত্রা যথাযথ রাখার কাজ করে। সোডিয়ামের মাত্রা বাড়া বা কমার সঙ্গে মাথার উপর,আর পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়া-কমার সঙ্গে হৃদয় বা স্নায়ুতন্ত্রের গতিবিধির গভীর প্রভাব পড়তে পারে।
কিডনি অনেক হরমোন নিঃসরণ করে যেমন অ্যানজিওটেনসিন,অ্যালডোস্টেরন,প্রোস্টাগ্ল্যানডিন।
এই হরমোনগুলির সাহায্যে শরীরে জলের মাত্রা,অম্ল এবং ক্ষারের ভারসাম্য বজায় থাকে। এই ভারসাম্যের দ্বারা কিডনি শরীরে রক্তচাপ বজায় রাখার কাজ করে।
রক্তে উপস্থিত লোহিত রক্ত কণিকায় (RBC)সৃষ্টি চডনিতে প্রতি মিনিটে| এরিগ্রোপোয়েটিন হরমোনের সাহায্যে অস্থিমজ্জাতে (Bone Marrow) হয়। এরিথ্রোপোয়েটিন কিডনি দ্বারা প্রস্তুত হয়। কিডনি বিকল(Fail)হলে এই হরমোনের নিঃসরণ কমে যায় বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, যারা ফলে রক্ত ফ্যাকাসে হয়ে যায়, গ্লোমেরুলাই প্রত্যেক যাকে অ্যানিমিয়া (রক্ত কমে যাওয়ার রোগ) বলে।
কিডনি সক্রিয় ভিটামিন-ডি, তৈরি করতে সাহায্য করে থাকে। এই ভিটামিন-ডি , শরীরে ক্যালসিয়াম আর ফসফরাসের জরুরি মাত্রা বজায় রেখে হাড় এবং দাঁতের বিকাশ ও মজবুত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্য করে থাকে।
সারাদিনে কত মুত্র তৈরি হবে তা নির্ভর করে (১) কত পরিমাণ জলপান করি (২) শরীরে বের করা হয়। জলের মাত্রা (৩) শরীরে হরমোন ADH- এর মাত্রার উপর (৪) কিডনির সুস্থতার উপর। কিডনি যদি অসুস্থ হয় এবং GFR (Glomerular Filtration Rate) তখন মূত্র তৈরি করার ক্ষমতাও কমে।
কিডনি প্রয়োজনীয় বস্তুসমূহকে রেখে অপ্রয়োজনীয় পদার্থগুলিকে মূত্রদ্বার শরীরের বাইরে বের করে। এটি একটি অনন্য, অদ্ভূত তথা জটিল প্রক্রিয়া।
শরীরের কিডনিযুগলে প্রতি মিনিটে ১২০০ মিলিলিটার রক্ত পরিস্তুত হবার জন্য আসে, এটি হৃদয়দ্বারা শরীরে পৌছানো রক্তের ২০%। এইভাবে আনুমানিক প্রতি ২৪ ঘণ্টাতে ১৭০০ লিটার রক্ত পরিস্তুত হয়।
রক্ত পরিস্তুত একক (Functional Unit) নেফ্রন একটি ছাকনির মতো কাজ করে।
প্রত্যেক কিডনিতে দশ লক্ষ নেফ্রন থাকে। নেফ্রন প্রধানত দুটি অংশে বিভাজিত, গ্লোমেরুলাস এবং টিউবিউলস। আপনি জেনে বিস্মিত হবেন যে গ্লোমেরুলাস নামক ছাকনি প্রত্যেক মিনিটে ১২৫ মিলিলিটার মূত্র সৃষ্টির মাধ্যমে ২৪ ঘন্টাতে মোট ১৮০ লিটার মূত্র সৃষ্টি করে থাকে। এই ১৮০ লিটার মূত্রের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ, ক্ষার এবং বিষাক্ত পদার্থ থাকে। একই সঙ্গে এর মধ্যে প্রয়োজনীয় পদার্থ, যথা গ্লুকোজ এবং অন্য পদার্থও থাকে। গ্লোমেরুলাস দ্বারা সৃষ্ট ১৮০ লিটার মূত্র টিউবিউলসে আসে, যেখানে ৯৯% দ্রব্য পুনঃশোষিত (Reabdorption) হয়।
ইহার কারণ ১৮০ লিটারের মতো অধিক মাত্রাতে সৃষ্ট মূত্রের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় পদার্থ এবং জল পুনরায় শরীরে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। কেবলমাত্র ১ থেকে ২ লিটার মূত্রের মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ এবং অ্যাসিড(Acid) শরীরের বাইরে নিষ্কাশন করা হয়।
এইভাবে কিডনি দ্বারা নানাবিধ জটিল পরিশোধন প্রক্রিয়ার দ্বারা প্রস্তুত মূত্র মূত্রবাহী নালিকার দ্বারা মূত্রাশয়ে জমা হয় এবং মূত্র নালিকার দ্বারা শরীরের বাইরে নিষ্কাশিত হয়।
হ্যা। প্রস্রাবের পরিমাণ জলপান এবং আবহাওয়ার তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। যদি কোনও ব্যক্তি কম জল পান করে তাহলে গাঢ় মূত্র ত্যাগ করে। সারাদিনে (৫০০ml) মূত্র দূষিত পদার্থ নিয়ন্ত্রণের জন্য যথেষ্ট। অধিক জল পান করলে অধিক এবং পাতলা মূত্র সৃষ্টি হয়। গ্রীষ্মকালে অত্যধিক ঘাম হবার জন্য প্রস্রাবের মাত্রা কমে যায়, আর শীতকালে ঘাম কম হবার জন্য প্রস্রাবের মাত্রা বেড়ে যায়।
সূত্র: কিডনি এডুকেশন ফাউন্ডেশন
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/14/2020