ডায়াবিটিসের সাধারণ লক্ষ্মণগুলি হল,যেমন,হঠাৎ আপনার বেশি তেষ্টা ও বহুবার প্রসাব পেতে পারে। এ ছাড়া খিদের পরিমাণও বেড়ে যায়।খিদে বাড়লেও ওজোন কমে যেতে থাকে।আপনি ক্রমশ দুর্বলতা অনুভব করতে থাকেন।চামড়ায় ছত্রাক জনিত সংক্রমণ দেখা যায় (ফাংগাল ইনফেকশন)। বিশেষ করে যৌনাঙ্গে এ ধরনের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।ডায়াবেটিস থেকে দ্রুত চোখের পাওয়ার পরিবর্তিত হতে পারে।
অনেক সময় লক্ষ্মণ ছাড়াও ডায়াবিটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের দেশে ৩০ বছর বয়স হলে একবার শর্করার পরিমাণ পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া উচিৎ কারণ আমাদের দেশে কম বয়সে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার একটা প্রবণতা রয়েছে।
ডায়াবিটিসের রক্ত পরীক্ষা দু রকম। একটি খালিপেটে অন্যটি খাওয়ার পর। হয় আট থেকে দশ ঘণ্টা উপোসে থাকার পর অথবা ৭৫মিলিগ্রাম গ্লুকোজ নেওয়ার ২ ঘণ্টা বাদে পরীক্ষা করতে হবে।এই পরীক্ষার ফলাফল যদি বিশেষভাবে অস্বাভাবিক হয় তাহলে বুঝতে হবে আপনার ডায়াবিটিস রয়েছে। বর্তমানে ডায়াবিটিস নির্ণয়ের যে মান ধরা হয় তা হল—খালি পেটে পরীক্ষায় প্লাজমা গ্লুকোজের পরিমাণ ১২৬ মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটারের সমান বা তার চেয়ে বেশি। এবং খাবারের মাধ্যমে গ্লুকোজ নেওয়ার দু’ঘণ্টা পর পরীক্ষা করলে তা যদি ২০০ মিলিগ্রাম প্রতি ডেসিলিটারের বেশি বা তার সমান হয়।এ ক্ষেত্রে কোনও লক্ষ্মণ ধরা না পড়লেও আপনাকে চিকিৎসা করাতে হবে।(একেবারে শুরুতে জীবনযাত্রার ধরন পাল্টানোর দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে।একদম গোড়াতেই ওষুধ নেওয়ার প্রয়োজন নেই।)
সচরাচর বাবা বা মার মধ্যে একজনের ডায়াবেটিস থাকলে সন্তানদের চল্লিশ শতাংশ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।বাবা বা মার কারুর ডায়াবেটিস না থাকলেও সন্তানের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ১০শতাংশ।
সত্যি কথা বলতে কি ডায়াবিটিস ভাল করে দেওয়ার কোনও চিকিৎসা এখনও নেই। তবে মানব জেনোম প্রকল্পের অগ্রগতির দরুন সুদূর ভবিষ্যতে ডায়াবিটিস ভাল করে দেওয়ার চিকিৎসা শুরু হলেও হতে পারে। তবে অদূর ভবিষ্যতে তার কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে ডায়াবিটিসকে ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আক্রান্ত মানুষজন প্রায় সাধারণ জীবনযাপন করতে পারেন।
ফলে প্রমাণিত বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার মাধ্যমে ডায়াবিটিস নিয়নন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করাই শ্রেয়। ভাল হয়ে যাওয়ার দুরাশায় অন্য কিছু চেষ্টা করে অর্থ ও সময় নষ্ট করে কোনও লাভ নেই।
ডায়াবিটিসকে ‘নিঃশব্দ ঘাতক’ বলা হয়।এই রোগ নিঃশব্দে আপনার দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে।শেষ পর্যন্ত যখন লক্ষ্মণ দেখা দিল তখন চিকিৎসা শুরু করাটা হয়তো দেরি হয়ে যাবে।ডায়াবিটিস হৃদরোগ ও সেরিব্রাল স্ট্রোকের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ২-৩ গুণ বাড়িয়ে দেয়।ডায়াবিটিসের কারণে অনেক সময় পা কেটে বাদ দিতে হতে পারে। পূণর্বয়স্কদের অন্ধত্বের অন্যতম কারণই হল ডায়াবিটিস।এই রোগ কিডনির ক্ষতি করতে পারে।প্রকৃতপক্ষে কিডনির অকার্যকারিতা,বয়স্ক মানুষদের ডায়ালিসিস করা ও কিডনি ট্রান্সপ্লান্টের সাধারণ কারণই হল ডায়াবিটিস।
ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের গাফিলতি এই ধরনের জীবনহানিকর স্থায়ী জটিলতার পাশাপাশি অন্য জীবননাশক জটিলতার জন্ম দিতে পারে যেমন ডায়াবিটিক কিটোসাইডোসিস (diabetic ketoacidosis)।বিভিন্ন ধরনের জীবানু সংক্রমনের সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।তবে আশার কথা হল,ঠিক সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে এবং তা নিয়মিতভাবে চালিয়ে গেলে এই ধরনের বেশিরভাগ জটিলতাকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব এবং প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব।
মনে রাখবেন নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও নিয়মিত চিকিৎসার মাধ্যমে ডায়াবিটিসকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
সুত্রঃ প্রফেসর শুভঙ্কর চৌধুরি
সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/22/2020