বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস ১৪ নভেম্বর। এবারের বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো- ‘স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করি, ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত থাকি।
ডায়াবেটিস একটি অসংক্রামক এবং বিপাকীয় রোগ। ইনসুলিন নামক হরমোনের অভাবে (টাইপ-১ ডায়াবেটিস) বা কমে গেলে বা কার্যক্ষমতা হ্রাস পেলে (টাইপ-২ ডায়াবেটিস) হয়। ইনসুলিন খাদ্য বিপাকক্রিয়ায় সৃষ্ট রক্তের গ্লুকোজকে কোষে নিয়ে যায়, ফলে এ রোগে রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। গ্লুকোজ হল দেহের শক্তির উৎস।
বর্তমানে কোটি কোটি মানুষ টাইপ-২ ডায়াবেটিস এ ভুগছে। আক্রান্তের হার উন্নয়নশীল দেশে বেশি। আর্থ-সামাজিক উন্নতি, নগরায়ন, জীবন যাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন, প্রযুক্তির বিকাশ, পরিবেশগত সমস্যা ইত্যাদির কারণে ডায়াবেটিস দ্রুত বিস্তার লাভ করছে। উন্নয়নশীল দেশে এখন এ রোগ কম বয়সে হওয়ার প্রবণতা দেখা দিচ্ছে। ফলে তরুণ সমাজের বিশাল জনগোষ্ঠী এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং আক্রান্ত অধিকাংশই সংসারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এক্ষেত্রে শিশুরাও বাদ নেই। শিশুরা স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের পরিবর্তে উচ্চ ক্যালরি সম্পন্ন খাবার বা ফাস্ট ফুডে অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় এবং মাঠে খেলাধুলার সুযোগ না থাকায় মুটিয়ে যাচ্ছে এবং পরবর্তীতে তাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়ছে। তাছাড়া গর্ভাবস্থায়ও এ রোগ হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যাদের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস ছিল পরবর্তীতে তাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৫০%। শুধু তাই নয়, তাদের সন্তানদেরও ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
সুতরাং ডায়াবেটিস অতিশিগগিরই মহামারী আকার ধারণ করছে। তবে আশার কথা, এটি একটি প্রতিরোধ যোগ্য রোগ। সঠিক জীবনযাপন ও আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে অন্যান্য অসংক্রামক ও দীর্ঘ মেয়াদী রোগের মত এ রোগের চিকিৎসা ব্যায়বহুল। এ রোগ সঠিক নিয়ন্ত্রণে না রাখলে বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি হয়। ডায়াবেটিসের চিকিৎসার পাশাপাশি অনুষঙ্গিক রোগ যেমন- উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে চর্বি আধিক্য ইত্যাদি এবং অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের ফলে সৃষ্ট জটিলতার চিকিৎসা সব মিলিয়ে অত্যন্ত ব্যয়বহুল এ রোগ ব্যক্তি ও জাতির জন্য বোঝা। তাই এ রোগ সম্পর্কে জানা ও জনগণকে জানানো ও সচেতন করা খুবই জরুরী। আর এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আর্ন্তজাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (FDI) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) প্রতি বৎসর ১৪ নভেম্বর ‘বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস’ পালন করে আসছে। ২০১৪ সাল হতে ২০১৬ সাল এর জন্য পতিপাদ্য বিষয় হলো ‘স্বাস্থ্য সম্মত জীবন ও ডায়াবেটিস’।
স্বাস্থ্যকর খাবার এবং ব্যায়াম সুস্থ জীবনের চাবি-কাঠি। স্বাস্থ্যকর খাবার হলো সুষম খাবার যাতে থাকবে প্রচুর শাক-সবজি, ফলমূল, পরিমিত ভাত বা রুটি, কোমলপানীয় ও ফলের রসের পরিবর্তে তাজা ফল, বাদাম, টকদই ইত্যাদি। একই সাথে ফাস্ট ফুড, চিনি বা মিস্টি কম খাওয়া এবং ধুমপান, মদ্যপান ইত্যাদি পরিহার করা। কোনোভাবেই কোনো এক বেলার খাবার বাদ দেওয়া উচিত হবে না। বিশেষ করে সকালের নাস্তা। কারণ স্বাস্থ্য সম্মত সকালে নাস্তা সারাদিনের পুষ্টি যোগায় এবং ক্ষুধাভাব কমায়।
মানুষ এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ায় কায়িক পরিশ্রমের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ফলে মোটা হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। এতে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাস এবং প্ররিশ্রম বিমুখতা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
সুতরাং ডায়াবেটিসের ভয়াবহতা থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর এখনই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন সঠিক ও সমন্বিত পরিকল্পনা। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন মাধ্যম যেমন গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইত্যাদিও ভূমিকা রাখতে পারে।
সূত্র : বিকাশপিডিয়া টীম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/12/2020