অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

শিশুদের ক্যানসার সচেতনতা ও পুনর্বাসন

শিশুদের ক্যানসার সচেতনতা ও পুনর্বাসন

শিশু বা কিশোর বয়সের ক্যানসার সম্পর্কে জনমানসে ধারণা খুব অস্বচ্ছ। ২০১৫ সালে স্কুল ভিত্তিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে শহর কলকাতার সম্ভ্রান্ত স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের অধিকাংশের অভিভাবকরা এই বিষয়ে আরও তথ্য চান। বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল। অধিক প্রচারে সাধারণ সর্দি কাশিতেও যে কোনও অভিভাবক শঙ্কিত হয়ে পড়বেন। আর কোনও প্রচার না থাকলে বাচ্চাদের ক্যানসার হতে পারে, এটা মানুষ ভাবনাতেও আনবেন না। সরকারি প্রচেষ্টা প্রায় নেই বললেই চলে। বেসরকারি সংস্থা বা হাসপাতাল যারা ক্যানসার নিরাময়ে ব্রতী, তাদের এত বেশি চাপ যে ব্যাবসায়িক প্রয়োজনেও ক্যানসার সচেতনতা নিয়ে ভাবনার অবকাশ নেই। এই অবসরে প্রকৃত তথ্য বেশ ভয়াবহ। ক্যানসার যে শুধু বয়স্কদের ওপরেই ছোবল বসায়, তা কিন্তু নয়। বরং উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো তথ্যটি এই যে শিশুদের মধ্যে ক্যানসারের হার খুব দ্রুত বাড়ছে। বর্তমানে ভারতবর্ষে প্রতি বছর ৪৫ হাজারেরও বেশি শিশু/কিশোরের নাম ক্যানসার রোগী হিসাবে নথিভুক্ত হচ্ছে। প্রতিদিন ৪৩ জন নতুন শিশু ক্যানসার আক্রান্ত হচ্ছে (সূত্র: কিওরসার্চ ও আর জি)। যদিও এই সংখ্যাটা মোট ক্যানসার রোগীর তুলনায় ২-৩% মাত্র, কিন্তু এন সি আই-এর একটি অনুসন্ধান জানাচ্ছে আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে তিনগুণ হবে।
আজ থেকে ৫০ বছর আগে শিশু ক্যানসারে সাফল্যের হার ছিল মাত্র ১০ শতাংশ। বিশ্বজোড়া গবেষণার ফসল গত পাঁচ বছরে এই সাফল্যের হার ৭০% এর অধিক।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ভারতবর্ষে এমনকী পশ্চিমবঙ্গেও বেসরকারি ক্ষেত্রে শিশু ক্যানসার চিকিৎসায় বেশ অগ্রগতি হয়েছে।
অবশ্যই প্রয়োজনের তুলনায় তা নগণ্য। উন্নত বিশ্বের সবথেকে বড় সুবিধা অভিভাবকদের সচেতনতা। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক এর দৌলতে অজস্র সহমর্মী গ্রুপ শিশু ক্যানসার এ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রের সমর্থন তো আছেই। দুর্ভাগ্যক্রমে এখানেই আমরা পিছিয়ে আছি অনেকটাই।
বহু শিশু বিশেষত ভারতবর্ষে আজও বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে শুধুমাত্র অভিভাবকদের অজ্ঞতার কারণে। জিনবাহিত, পরিবেশগত ও বেঠিক খাদ্যাভাসের কারণে ক্যানসারের প্রকোপ শিশুদের মধ্যে বাড়ছে।
কিন্তু যেহেতু এই চিকিৎসা যথেষ্ট ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ,
তাই অনেক ক্ষেত্রে মাঝপথে সন্তানের পরিবার অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। অনেকে অজ্ঞানতার কারণে ক্যানসার-এর সম্ভাব্য উপসর্গগুলি অবহেলা করেন।
একবার ভাবুন যে বয়সে হেসে খেলে ছুটে বেড়ানোর, সেই বয়সে মুখে মুখোশ পরে দিনের পর দিন যে শিশু জীবনের লড়াই লড়ে তার কতটা মানসিক ও শারীরিক শক্তি প্রয়োজন। তথ্যে জানা যাচ্ছে,
সুস্থ হওয়ার পর মাত্র ৩-৪% শিশু বা কিশোর-কিশোরীর অভিভাবক হাসপাতালে পুনর্বার তাদের সন্তানের পরীক্ষা করাতে বা শারীরিক অবস্থার খবর দিতে ফিরে আসেন (Follow up)। হাসপাতালেরও আমাদের দেশে রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে গেলে যোগাযোগ করার চল নেই। অতএব, এত প্রচেষ্টার পর যে বাচ্চাদের তারা সুস্থ করে তুললেন, তাদের মধ্যে কতজন জীবিত রইল সে সম্পর্কে চিকিৎসকরাই অন্ধকারে। উন্নত দেশে শিশুদের জন্য বিশেষ কেন্দ্র (Rehab Center) আছে।
সেখানে পুনর্বাসন বিশেষজ্ঞ, হাড় ও সংযোগস্থলের দুর্বলতা নিরাময়ের জন্য বিশেষজ্ঞ, অত্যাধিক ওষুধ সেবনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় বাচন সমস্যা নিরাময়ে বিশেষজ্ঞ, ব্যবহারিক জীবনে ও পঠনপাঠনে একাগ্রতা ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষজ্ঞ থাকা জরুরি। আমরা বলব অনেক, করব কম।
অথচ শুধুমাত্র মানবিকতা, সমবেদনা ও সঠিক পুনর্বাসন কী করতে পারে তার উদাহরণ কিন্তু আমাদের হাতের কাছেই আছে। প্রভাত সুস্থ হয়েও বাঁচেনি।
কিন্তু অঞ্জলি রায় পেরেছে। অঞ্জলি রায় নাচে পারদর্শী ছিল। অনেক অনুষ্ঠানও করেছে। হঠাৎ ধরা পড়ল তার হাড়ের ক্যানসার। পরিভাষায় Osteo Sircoma।
অঞ্জলির বাবা একটি ছোট সংস্থায় কাজ করেন। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। সেই সংস্থার কর্ণধার আর্থিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এলেন। একটা পা অপারেশান করে বাদ দিতে হল। এইরকম অবস্থায় যে কেউ মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। অঞ্জলি নাচ এত ভালোবাসে। সে কিন্তু ভেঙে পড়েনি। অঞ্জলি জানিয়েছিল সে আবার নাচতে চায়। একটি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার যুব বিভাগ (Rotaract Dist 3291) যাদের সহায়তায় হাসপাতালে শিশুদের ওয়ার্ডটি গড়ে উঠেছে তাদের প্রচেষ্টায় অঞ্জলিকে কৃত্রিম পা লাগানো হল। অঞ্জলি ইতিমধ্যে সুন্দর ছবি আঁকছে।
তার বাড়ি সুভাষগ্রামে। প্রতিবেশীরা দূরে সরে যাননি। এই বছরে সে স্কুলেও ভরতি হয়েছে। নাচ শিখতে আরম্ভ করেছে। বাবা, মা আর বন্ধুদের সঙ্গে অঞ্জলি খুশিতে আছে।
সুস্থ আছে। সবাইকে অবাক করে এবছর অঞ্জলি নাচের অনুষ্ঠানও করবে। প্রভাতের মতো অধিকাংশ শিশু কিন্তু শুধু সচেতনতা আর পুনর্বাসনের পরিকাঠামোর অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। তাই প্রয়োজন সঠিক পুনর্বাসন। কারোর উপর ভরসা না করে আমাদের ন্যূনতম ক্ষমতায় যতটুকু করা সম্ভব, করি।

সুত্র: বর্তমান

পার্থ সরকার
পরামর্শদাতা, ক্যানসার প্রজেক্ট, রোটারি

সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate