সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, আমাদের দেশে হাজার দশেক মানুষ সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্ত। মৃতের সংখ্যাও ১১০০ ছাড়িয়েছে। নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক খবর! কিন্তু এর সত্যতা স্বীকার করে নিয়েও বলতে হয় --- এই পরিসংখ্যানের বিশ্লেষণে একটা মারাত্মক ফাঁক থেকে যাচ্ছে। বাস্তবটা হল, আমাদের ১২২ কোটির দেশে এই মুহূর্তে এইচ১এন১ ভাইরাল জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যাটা কয়েক হাজার নয়, কয়েক লক্ষ। সঠিক সংখ্যাটা আদতে কত, তা কারও জানা নেই। পরিকাঠামোগত সমস্যার কারণে ক’জনের শরীরে সেঁধিয়ে বসে রয়েছে সোয়াইন ফ্লুয়ের ভাইরাস, তা তো দেখাই হয়নি পরীক্ষা করে। এই লেখা তৈরির সময় পর্যন্ত, ১০০০ মানুষের নমুনাও পরীক্ষিত হয়নি ১১ কোটি জনসংখ্যার পশ্চিমবঙ্গে। এর বাইরে কি কারও সোয়াইন ফ্লু হয়নি? বিলক্ষণ হয়েছে এবং সেরেও গিয়েছে অজান্তে, ন্যূনতম চিকিত্সা ছাড়াই। এটাই বাস্তব। এই ইনফ্লুয়েঞ্জার মরসুমে অসংখ্য মানুষের সোয়াইন ফ্লু হয়েছে এবং তাঁরা তা জানতেও পারেননি। অথচ দিব্যি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। ডাক্তারি তথ্যও বলছে, সোয়াইন ফ্লু হলেই মানুষ মারা যাবে কিংবা নিদেনপক্ষে যমে-মানুষে টানাটানি চলবে, এ তথ্য সম্পূর্ণ ভুল। বরং উল্টোটাই সত্যি। অধিকাংশ মানুষ এই অসুখে সুস্থ হয়ে ওঠেন এবং তা বাড়িতে থেকেই। নামমাত্র সংখ্যার মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর প্রয়োজন পড়ে। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন মারাও যান। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, হয় এঁরা একরত্তি অথবা বয়স্ক (যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম) কিংবা তাঁদের শরীরে নির্ঘাত বাসা বেঁধেছিল কোনও ‘আন-ডায়াগনোজড’ পুরনো অসুখ।
২০০৯ সালে বিশ্ব জুড়ে সোয়াইন ফ্লুকে ‘প্যানডেমিক’ আখ্যা দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। কেননা, সংক্রমণের প্রকোপটা তখন মহাদেশের গণ্ডিও টপকে গিয়েছিল। সারা পৃথিবীতে কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। ভারতও ব্যতিক্রম নয়।
এই বিশ্বজোড়া সোয়াইন ফ্লু ত্রাসের মধ্যেই ইংল্যান্ডে একটি গবেষণা হয়েছিল এই অসুখ নিয়ে। মুখ্য গবেষক ছিলেন বিলেতের নিউ ক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য, ইংল্যান্ডের তত্কালীন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্যর লিয়ম ডোনাল্ডসন। পরে ওই গবেষণাপত্রটি ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত হয়। তাতে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়, সোয়াইন ফ্লুয়ে মৃত্যুর হার মাত্র ০ .০২৬ শতাংশ।
সূত্র : এই সময়, ১৭ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019