প্রতি দিনই দক্ষিণ কলকাতায় শ’খানেক লোক মারা যায়। শরীর খারাপ, দুর্ঘটনা, বয়স--- নেপথ্যে থাকে নানা কারণ। কেওড়াতলা মহাশ্মশানের পরিসংখ্যানই বলছে, রোজ শতাধিক শবদাহ শেষ হয় সেখানে যার সিংহভাগই দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। কিন্তু সেই পরিসংখ্যানটাই যদি হঠাৎ এক দিন সকালে উঠে দেখেন, খবরের কাগজের শিরোনাম হয়ে গিয়েছে! পিলে চমকে উঠবে পাঠকের। অথচ পরিসংখ্যানটা মিথ্যে নয়। কিন্তু খবর পরিবেশনের আঙ্গিকে সেটা যে বাড়াবাড়ি, তাতে সন্দেহ নেই। আজকাল সোয়াইন ফ্লু নিয়েও খানিকটা যেন তেমনই হচ্ছে। একটা আপাত-নিরীহ রোগকে আতঙ্কের মোড়কে পেশ করা হচ্ছে সর্বত্র। অথচ ফি বছর এর চেয়ে ঢের বেশি প্রাণ কাড়ে, এমন রোগ নেহাত কম নেই এ দেশে। কিন্তু সে সব রোগ নিয়ে আলোচনা হয় না! কেন হয় না, সেটা একটা লাখ টাকার প্রশ্ন। অসুখ মাত্রই খারাপ --- সে যে ব্যাধিই হোক না কেন। ফোঁড়া থেকে ক্যানসার --- প্রায় সব ক্ষেত্রেই তার জ্বালায় আমাদের জীবন জর্জরিত। এমনিতেই এ হেন বিবিধ রোগের ধাক্কা সামলাতে যখন আমরা জেরবার, ঠিক তখনই গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো এসে উপস্থিত হয় এমন কিছু অসুখ, যারা সাময়িক ভাবে হলেও আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আরও কিছুটা কঠিন করে দিয়ে যায়। যেমন সোয়াইন ফ্লু।
এই এইচ১এন১ ভাইরাসের দাপটে সর্বত্র এখন ত্রাহি ত্রাহি রব। গোটা দেশের সঙ্গে আমাদের রাজ্যও এখন এই ভাইরাল ঝড়ে তোলপাড়। রাস্তায় বেরোলেই চোখে পড়ছে মুখে মাস্ক বাঁধা মানুষজন আর ডাক্তারের চেম্বারে উত্কণ্ঠা নিয়ে বসে থাকা রোগীর সারি। কারও প্রশ্ন, সোয়াইন ফ্লুয়ের ভ্যাকসিনটা কি পাওয়া যাচ্ছে ? আর যাদের জ্বর হয়েছে, তাদের তো একটাই জিজ্ঞাস্য --- ডাক্তারবাবু, সোয়াইন ফ্লু নয় তো? সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন এক প্যানিক বা ভীতি তৈরি হয়েছে যার জেরে নাজেহাল আমরা নিজেরাই। কিন্তু সাধারণ মানুষকে দোষ দিয়ে লাভ কী! প্রতি দিন বৈদ্যুতিন মাধ্যম বা সংবাদপত্রের পাতায় চোখ রাখলেই সোয়াইন ফ্লুয়ে আক্রান্ত এবং মৃতের ঊর্ধ্বগামী সংখ্যা দেখলে তার প্রভাব জনমানসে পড়তে বাধ্য।
সূত্র : এই সময়, ১৭ মার্চ ২০১৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020