সাপের কামড়ের জন্য অসুস্থতা ও মৃত্যু আমাদের গ্রামগঞ্জের বেশ পরিচিত ঘটনা। ভারতবর্ষে আনুমানিক বছরে দু’ লক্ষ মানুষকে সাপে কামড়ায়। এবং এর মধ্যে পনেরো হাজার মানুষ মারা যায়। পশ্চিমবাংলায় প্রায় আট হাজার মানুষকে সাপে কামড়ায় এবং হাজার খানেক মানুষ মারা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক পর্যবেক্ষণ, ন্যূনতম জ্ঞান আর বিচারশীল মানসিকতার অভাবে সাপ সম্পর্কে অজস্র লোকবিশ্বাস যুক্তির ভিত্তি ছাড়াই আমাদের সমাজে চালু আছে। সাপ ভীত, বিরক্ত বা আক্রান্ত না হলে সাধারণত কাউকে আক্রমণ করে না। চোখের সামনে প্রাণীর নাড়াচাড়া দেখলে সাপ সতর্ক হয় এবং আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে কামড়ানোর চেষ্টা করে। সাপের দৃষ্টিশক্তি মোটেই ভালো নয়। তা ছাড়া সাপ ঠান্ডা রক্তের প্রাণী হওয়ার জন্য বেশি ক্ষণ দ্রুত নড়াচড়া বা দৌড়তে তার অসুবিধা হয়। সাপ কোনও শব্দ শুনতে পায় না। কিন্তু সাপ সুবেদী প্রাণী অর্থাৎ বাইরের কম্পন সে অতি দ্রুত অনুভব করতে পারে। জিভ দিয়ে বাইরের তাপমাত্রা বিচারের জন্য সাপের তালুতে কয়েকটি গ্রন্থি রয়েছে। এ ছাড়া তার মাথার উপরে ও বাইরের তাপমাত্রার তফাত নির্ধারণ করার জন্য গ্রন্থি থাকে।
সাপ ডাঙায়, জলে ও গাছে এই তিন স্থানেই বসবাস করতে পারে। তবে আমাদের পরিচিত বিষাক্ত সাপ শুধুমাত্র ডাঙাতেই থাকে। মোট সাপেদের হয়তো দশ শতাংশ বিষধর। এই বিষধর সাপরা হল দুই শ্রেণির। যেমন—১) এলাপিডা — কালাজ (common krait), কেউটে (monocle), গোখরো (spectacled), শঙ্খচূড় (king cobra) এবং ২) ভাইপারিডা — চন্দ্রবোড়া (Russell’s viper)। এর মধ্যে শঙ্খচূড় সাধারণত গভীর জঙ্গলে থাকে, ফলে মানুষের সংস্পর্শে আসে না। তাই মানুষের সংস্পর্শে যে চারটি সাপ দেখা যায় এরা হল কালাজ, কেউটে, গোখরো, চন্দ্রবোড়া। প্রাদুর্ভাব হিসাব করে দেখা যায় পশ্চিমবাংলার এক একটি ব্লকে এক একটি বিষধর সাপের প্রাধান্য রয়েছে। যেমন সুন্দরবন অঞ্চলে কালাজের প্রাধান্য এবং হগলিতে চন্দ্রবোড়ার প্রাধান্য।
বিষধর সাপের বিষে (লালা) নানা ধরনের অধিবিষের মিশ্রণ রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে প্রধানত প্রোটিন ও উত্সচেক জাতীয় যৌগ। এই যৌগগুলি মানবদেহে বিভিন্ন ধরনের উপাদানের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া ঘটায়। যা প্রধানত দেহের বিপাকক্রিয়াকে ধীরে ধীরে অচল বা স্তব্ধ করে দেয়। এই ধরনের অধিবিষের মধ্যে দুই ধরনের উপাদানের প্রাধান্য থাকে। যেমন কালাজে থাকে স্নায়ুবিষ, যার ফলে দেহের সমস্ত স্নায়ুপেশির সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায় এবং রোগী শ্বাসযন্ত্রের বিকলতায় মারা যায়। অন্য দিকে চন্দ্রবোড়ায় থাকে রক্তকণিকার বিষ, যার ফলে রোগীর রক্ত ভেঙে গিয়ে কিডনির গোলমালে অ্যাকিউট রেনাল ফেলিওরে মৃত্যু হয়।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/14/2019