বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বর্তমান সমাজকে এক সাংঘাতিক চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে। স্থায়ী উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে এর মোকাবিলায় সমবেত প্রচেষ্টা জরুরি। বৈদ্যুতিন বা ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দেদার ব্যবহারের ফলে যোগাযোগ এখন অনেক অনায়াসসাধ্য। ব্যবসাবাণিজ্য মদত পেয়েছে। বেড়েছে রুজি রোজগারের সুযোগ সম্ভাবনা। উপকারের লম্বা তালিকার পাশাপাশি অবশ্য অনেক চ্যালেঞ্জও মাথা চাড়া দিয়েছে। যেমন, বৈদ্যুতিন বর্জ্যের (ই-ওয়েস্ট) ক্রমবর্ধমান সমস্যা। এই হ্যাপা সামলাতে সমাজকে জোরালো ব্যবস্থা নিতে হবে। সংকট এখন যথেষ্ট তীব্র। বৈদ্যুতিন বর্জ্য সাফাইয়ের দক্ষ ব্যবস্থাপনায় তত্পর না হলে মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ অত্যন্ত বিপন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা।
ভারত ২০০৫ সালের পরিবেশ সুস্থিরতা সূচকে ১০১ নম্বর স্থান পেয়েছে। আর পরিবেশ শাসনে তার ঠাঁই ৬৬ নম্বরে।
সব বৈদ্যুতিন পণ্য একই ধরনের জিনিসপত্তর দিয়ে তৈরি নয়। এক এক পণ্যে বিভিন্ন ধরনের উপাদান থাকতে পারে। দিনকে দিন নতুন নতুন সফটওয়্যার ও প্রযুক্তি বেরোনোয় তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিকাশ ঘটছে। পাল্লা দিয়ে বৈদ্যুতিন পণ্যে উপাদানও যাচ্ছে পাল্টে। বৈদ্যুতিন ছাঁটে (স্ক্র্যাপ) ধাতু, প্লাস্টিক ও তাপরোধক অক্সাইডের অনুপাত মোটামুটি ৪০:৩০:৩০ (১৯৯১ সাল)। ধাতুর মধ্যে তামা (২০ শতাংশ), লোহা (৮ শতাংশ), টিন (৪ শতাংশ), নিকেল (২ শতাংশ), সিসে (২ শতাংশ) ও দস্তা (১ শতাংশ)। আর যৎকিঞ্চিৎ রুপো (০.২ শতাংশ), সোনা (০.১ শতাংশ) এবং প্যালাইডিয়াম (০.০০৫ শতাংশ)।
ই-ওয়েস্ট-এ থাকে বহু রকম ব্যবহৃত, পুরনো এবং বাতিল বৈদ্যুতিক ও বৈদ্যুতিন পণ্য, সাজসরঞ্জাম। কম্পিউটার, সেলফোন, স্টিরিও, রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার এবং আরও হরেক জিনিসপত্র। এ সব বর্জ্য থেকে কিছু কিছু পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। কিছু ফের ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হয়। বাদ বাকি অংশ জঞ্জাল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই ই-ওয়েস্টের শেষ ঠাঁই অসংগঠিত ছোটখাটো কারবারির গোলায়। সেখানে খালি হাতে চলে ভাঙাভাঙি। ঝাড়াই বাছাই। এক বিষাক্ত পরিবেশ। বৈদ্যুতিন সাজসরঞ্জামে থাকে নানা কিসিমের রাসায়নিক মৌল ও যৌগ। এক সেলফোনেই আছে ৪০ রকমের বেশি মৌল। বৈদ্যুতিন বর্জ্যে ধাতুর মধ্যে সচরাচর মেলে লোহা, ইস্পাত, তামা, অ্যালুমিনিয়াম, টিন, সিসা, দস্তা, নিকেল। আর অতি সামান্য হলেও সোনা, রুপো, আর্সেনিক, ক্যাডিমিয়াম, ইনিডিয়াম, রুথিনিয়াম, সেলিনিয়াম এবং ভ্যানাডিয়াম (চেন ও অন্যরা, ২০১১)।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/21/2019