অধ্যাপক সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, বয়স্ক মানুষের বেঁচে থাকা নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন আমাদের সমাজে উঠে আসছে। এক শ্রেণির মানুষ চাইছেন ইউথানেশিয়া বা স্বেচ্ছামৃত্যুর অধিকার স্বীকৃত হোক। যদি সেটি আইনসিদ্ধ হয় তা হলে দেখা যাবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে সাধারণ ভাবে চিকিৎসকদের কোনও অধিকার নেই রোগীকে মেরে ফেলার। সে রকম পরিস্থিতির উদ্ভব হলে কী করতে হবে তা শুধু চিকিৎসকদের উপর ছেড়ে না দিয়ে গোটা সমাজকেই সমাধানের দায়িত্ব নিতে হবে।
ডা.ধীমান গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, অনেক সময় দেখা যায় এক জন মানুষকে কোনও রকমে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। তাঁর চিকিৎসার বিপুল খরচ জোগাচ্ছে তাঁর কোম্পানি বা সরকার। এটা কি আদৌ নৈতিক দিক দিয়ে সমর্থনযোগ্য? অনেক অসুস্থ বয়স্ক ব্যক্তি এ ভাবে অপরের ঘাড়ে বোঝা হয়ে বেঁচে থাকতে চান না। সুতরাং বৃদ্ধ, অশক্ত হওয়ার আগে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কী ধরনের চিকিৎসা চান। আপনাকেই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে তার কারণ ডাক্তারবাবুরা এ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী নন। দেশের জনসংখ্যার ৭.৭ শতাংশ এখন ষাটোর্ধ বয়সের। অর্থাৎ প্রায় ৮ কোটি মানুষ ষাটোর্ধ বয়সে পৌঁছে গিয়েছেন। হিসাব করে দেখা গিয়েছে এর মধ্যে দেড় কোটি মানুষ একলা থাকেন। নিঃসঙ্গ বয়স্ক মানুষের মধ্যে মহিলার সংখ্যাই বেশি। তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটকে একা থাকা বয়স্ক মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। যত দিন যাবে তরুণ প্রজন্মের জনসংখ্যা ক্রমশ কমবে। আমাদের দেশে ২০২২ সাল অবধি লোকসংখ্যা ক্রমশ বাড়বে অল্প বয়স্কদের উপর আরও বেশি করে বয়স্ক মানুষের বোঝা চাপবে। সে ক্ষেত্রে বয়স্ক মানুষেরও দায়িত্ব হবে কী ধরনের জীবনযাপন তাঁর প্রয়োজন সে সম্পর্কে আগে থেকে চিন্তাভাবনা করা। অপরের বোঝা না হয়ে কী ভাবে সুস্থ জীবন কাটানো যায় তার পরিকল্পনা করা।
ডা.সুদীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, জীবনে কোনও প্রতিবন্ধকতা যেন না থাকে সে দিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। বয়স বাড়লে একাকিত্ব হবেই। তবে তাকে মেনে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, বয়স্ক মানুষজন যেন কোনও বৈষম্যের শিকার না হন। সুস্থ থাকতে গেলে বয়স্ক মানুষকে নিয়মিত পরীক্ষা করে সুস্থ থাকার ব্যাপারে পরিকল্পনা করতে হবে।
ডা. অভিজিৎ তরফদার বলেন, রেনাল ফেইলিওর দু’ ধরনের হয়। অ্যাকিউট রেনাল ফেলিওর ও ক্রনিক রেনাল ফেলিওর। অ্যাকিউট রেনাল ফেলিওর চিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপুরি সেরে যায় কিন্তু ক্রনিক ফেলিওর ক্রমশ নিয়মিত ডায়ালেসিস, কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশনের দিকে রোগীকে ঠেলে দেয়। সরকারি হাসপাতালে ডায়ালিসিস ইউনিটের সংখ্যা বেশি নেই। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত নিতে হয় সাপে কাটার মতো রোগীকে ডায়ালিসিস দেব, না বয়স্ক ক্রনিক রেনাল ফেলিওরের পেশেন্টকে প্রাধান্য দেব। ওই সাপে কাটা রোগী দু-তিন বার ডায়ালেসিস দিলে হয়তো বেঁচে যাবেন। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু বয়স্ক ক্রনিক রেনাল ফেলিওরের রোগীদের সে সম্ভাবনা কম। কিন্তু রোগীর বাড়ির লোকেরা তো আর সে কথা বুঝতে চাইবেন না। সেই জন্যই সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে।
ডা. তরফদার আরও বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া যে কোনও ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়। আয়ুর্বেদিক বা অন্য কোনও ধরনের ওষুধ গ্রহণ করার আগে দেখে নেওয়া দরকার আধুনিক ওষুধের মতো সেটি পরীক্ষিত কিনা। তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ডাক্তারবাবুরা সচেতন কিনা। অকারণে মুঠো মুঠো ব্যথার ওষুধ খাওয়া একেবারেই উচিত নয়, তার কারণ এই সব ওষুধের বেশ ভালো রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।
ডা. দেবাশিস বসু বলেন, মৃগি রোগীদের ক্ষেত্রে আশপাশের লোকজনকে সচেতন হতে হবে। চট করে মুখে কিছু পুরে দিলে বা উল্টোপাল্টা জিনিস শুঁকতে দিলে খারাপ হতে পারে। মৃগির আক্রমণ সেল্ফ রেমিটিং তাই জোর করে কিছু না করাই ভালো। এই রোগের চিকিৎসা রয়েছে।
সুত্রঃ পোর্টাল কন্টেন্ট টিম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/28/2020