ভেন্টিলেটর হল ‘লাইফ সেভিং ডিভাইস’। একে বলা হয় সাপোর্টিভ চিকিৎসা। অনেক সময় রোগ জটিলতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছলে দেখা যায় রোগী নিজে থেকে শ্বাস নিতে পারছেন না। তাঁর শ্বাসযন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করছে না। রেসপিরেটরি ফেলিওর হচ্ছে। তখন কৃত্রিম উপায়ে বাইরে থেকে মেশিনের সাহায্যে শ্বাসপ্রশ্বাস চালু রাখার চেষ্টা করা হয়। এটাই ভেন্টিলেশন। আর যে যন্ত্রের সাহায্যে এ চিকিৎসা দেওয়া হয়, সেটি হল ভেন্টিলেটর। সেই সঙ্গে চলে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা। যাতে রোগীকে বাঁচিয়ে তোলা যায়। সাধারণত টার্মিনাস স্টেজেই ভেন্টিলেটরে রাখা হয়। তাই মানুষ ভাবেন, ভেন্টিলেশন শুরু হলে রোগীর আর ফেরার সম্ভাবনা নেই। তবে একথা ঠিক যে ভেন্টিলেশনে থাকলেই সব রোগীর ভালো হবে ওঠার নিশ্চিন্ত আশ্বাস নেই। সবসময় শেষরক্ষা করা যায় না। কিন্তু, সঠিক রোগের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে ভেন্টিলেশন চালু হলে রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
ব্যবহার বহুদিন ধরেই ছিল। তখন পোস্ট অপারেটিভ রিকভারির জন্য বুকের চারপাশে নেগেটিভ প্রেশার দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৫২ সালে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে পজিটিভ প্রেশারের মাধ্যমে নতুনভাবে চিকিৎসা শুরু হয়। সে সময় ডেনমার্কে পোলিও মায়োলাইটিসের প্রকোপে মহামারী দেখা গেলে চিকিৎসকেরা আর্টিফিশিয়াল এয়ারওয়ে টিউবের সাহায্যে বহু রোগীকে সুস্থ করে তোলেন। তখন থেকেই চিকিৎসক মহলে দুটি ধারণা তৈরি হয়। ১. অপারেশন ছাড়াও অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রেও ভেন্টিলেটর প্রয়োগ করা যেতে পারে। ২. এখন থেকে নতুন ধরনের কৃত্রিম পজিটিভ প্রেশার ভেন্টিলেশনের সময় দেওয়া সম্ভব। এভাবেই পজিটিভ ভেন্টিলেশনের ব্যবহার শুরু হয়। বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে এর সিস্টেম, ব্যবহার ইনফাস্ট্রাকচার সবেতেই উন্নতি হয়েছে।
মোটামুটি ১৯৬৬ সাল থেকে এখানে পজিটিভ প্রেশার ভেন্টিলেশন চালু হয়। সর্বপ্রথম মুম্বইতে এর ব্যবহার করা হয়। সেখান থেকে দিল্লি এবং পুনায় ব্যবহার শুরু হয়ে যায়। পরবর্তীকালে কলকাতায় চিকিৎসকেরা পজিটিভ প্রেশার ভেন্টিলেশন নিয়ে কাজ করতে থাকেন। এক সময়ে দেখা যায়, বিশেষ বিশেষ রোগের ক্ষেত্রে অ্যানাসথেটিস্ট ছাড়াও ভেন্টিলেশন নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
মূলত দু’ধরনের ভেন্টিলেশন দেখা যায়। ১. ইনভেসিভ ২. নন-ইনভেসিভ। ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে একটি কৃত্রিম এয়ারওয়ে টিউব ব্যবহার করা হয়। এটি ফুসফুসের ভিতরে পাম্প দিয়ে রোগীক শ্বাস নিতে সাহায্য করে। নন ইনভেসিভ হলে এই ধরনের কোনও টিউব থাকেনা। মাস্কের সাহায্যে রোগী কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস নিয়ে থাকেন। আমাদের দেশে মোটামুটি ১৯৯০ সাল থেকে নন ইনভেসিভ পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হয়।
একেবারে টার্মিনাল স্টেজে পৌঁছলেই রোগীকে ভেন্টিলেশন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সাধারণত হাসপাতালে সর্বমোট বেডের ১০ শতাংশ ভেন্টিলেশনের জন্য বরাদ্দ থাকে। এর মধ্যে রোগীর তেমন জটিল উপসর্গ দেখা গেলে সবার আগে রেসপিরেটরি ফেলিওরের মতো পরীক্ষা করা হয়। সেরকম অসঙ্গতি পেলে ব্লাড গ্যাস অ্যানালাইসিস করে ভেন্টিলেশনের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হয়। তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়, কোন রোগীর জন্য ভেন্টিলেশন অপরিহার্য। অনেক সময় রোগীকে দেখেই বোঝা যায়, তাঁর অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। তখন তাঁকে সরাসরি ভেন্টিলেশন দেওয়া হয়। অন্যান্য পরীক্ষানিরীক্ষা পরে করা হয়। এইভাবে সঠিক পদ্ধতিতে ধাপে ধাপে এগতে হয়। তাহলেই রোগীকে প্রকৃত প্রয়োজনে ভেন্টিশেন দেওয়া সম্ভব হবে।
মেডিকেল, সার্জিক্যাল, গাইনি—যে কোনও রোগের জটিলতা ডেডলাইনে পৌঁছে গেলেই ভেন্টিলেশনের কথা ভাবা হয়। এর মধ্যে বেশ কিছু রোগের প্রকোপ বেশ মারাত্মক। চোট, আঘাত, পথ দুর্ঘটনা থেকে ব্রেন স্ট্রোক, ট্রমার মতো জটিল উপসর্গ দেখা গেলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।
কখনও দেখা যায়, বিশেষ আঘাত থেকে ইনফেকশন হয়ে রোগীর গোটা শরীর সেপসিস আক্রান্ত হয়েছে।
অনেক সময় বিষ খেলে, বিষধর সাপ কামড়ালে রক্তে অতিরিক্ত বিষক্রিয়া দেখা যায়।
হার্ট অ্যাটাক, মেজর সার্জারি, ক্যানসার থেকেও জটিলতা বেড়ে যায়।
ক্রনিক নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, মেজর চেস্ট ইনফেকশন হলেও নানান সমস্যা হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় বহু মহিলার হাই প্রেশারের প্রবণতা দেখা যায়। একে একল্যাম্পশিয়া বলে। এই সময় তাঁদের ব্রিডিং ডিজঅর্ডার বা রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা তৈরি হতে পারে।
এই ধরনের রোগযন্ত্রণা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে উঠলে রোগী বিভিন্ন উপসর্গের শিকার হন। তখন একনাগাড়ে অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট অথবা রেসপিরেটরি ফেলিওর হলে চিকিৎসক ভেন্টিলেশনের কথা ভাবেন।
ভেন্টিলেশনের জন্য বয়স তেমন কোনও বিষয় নয়। বরং সেরকম জটিল উপসর্গ থেকে শ্বাসকষ্ট হলে শিশুদের অবধি এই চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ইদানীং অল্পবয়সি রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক কম। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতিই এদের চটজলদি উপশমের কারণ। জেনারেল আইসিউ বা সিসিউ-তে দেখা যাচ্ছে, চল্লিশ বছরের উপরে রোগীর সংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশ। তার মধ্যে আবার মোট বেডের মাত্র ১০ শতাংশ ভেন্টিলেশনের জন্য ছাড়া রয়েছে। যেখানে বেশিরভাগ রোগীই মুমূর্ষু। এঁদের বয়স পঞ্চাশ/ ষাটের উপর। তবে চল্লিশের কম বয়সি রোগী একেবারেই নেই এ কথা বলা যায় না।
বেঁচে থাকার বিষয় রোগীর শারীরিক অবস্থা, চিকিৎসার মান, পরিকাঠামো এবং পরিষেবার ধরনের উপর নির্ভর করে। এরপর দেখা হয় রোগীর বয়স, বর্তমান রোগ জটিলতা, শরীরে কোনওরকম ক্রনিক রোগের উপস্থিতি আছে কিনা। কোনও অর্গান ফেল করলে সেটি কত শতাংশ অকেজো হয়ে পড়েছে, তাও পরীক্ষা করাতে হয়। রোগী যদি ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, ইস্কিমিয়া, হাই ব্লাড প্রেশার, কিডনির সমস্যায় ভুগতে থাকেন, সেক্ষেত্রে চিকিৎসককে বাড়তি খেয়াল রাখতে হয়। এসবের উপরেই রোগীর সুস্থতা নির্ভরশীল। এই ধরনের লাইফ সেভিং সাপোর্ট নিয়ে অন্যান্য চিকিৎসায় সাড়া দিলে রোগী সুস্থ হয়ে যেতে পারেন। এ প্রসঙ্গে বলে রাখা দরকার, যাবতীয় পরীক্ষানিরীক্ষা করে পরিকল্পনামাফিক অপারেশন হলে রোগী সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সাধারণত শেষ পর্যায়ে এসেই চিকিৎসক ভেন্টিলেশনের কথা ভাবেন। অনেক সময় দেখা যায়, এতকিছুর পরেও উপসর্গগুলি একেবারে টার্মিনাল স্টেজেই রয়েছে। সরকারি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনের জন্য কোনও খরচ নেওয়া হয় না। বেসরকারি জায়গার খরচের পরিমাণে তারতম্য থাকতে পারে। হ্যাঁ আছে। অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিস্ট্রেস সিনড্রোম (এআরডিএস) হলে রোগীর জীবনমরণ সমস্যা ঘনিয়ে আসে। এই সময়ে অন্যান্য শারীরিক জটিলতার সঙ্গে ক্রমাগত শ্বাসকষ্ট হতে থাকে। তখন এক্সট্রা কর্পোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশনে’র (ইকমো) মাধ্যমে শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের যোগান দেওয়া হয়। আবার ‘ECCo2 Removal’ বা এক্সট্রা কর্পোরিয়াল কার্বন-ডাই-অক্সাইড রিমুভাল পদ্ধতি প্রয়োগ করে অপ্রয়োজনীয় কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দেওয়া হয়। সুত্র: বিকাসপিডিয়া কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট টীমভেন্টিলেশনের মাধ্যমে আদৌ কি রোগীকে বাঁচানো সম্ভব?
কোনও কোনও ক্ষেত্রে রোগীকে একেবারেই বাঁচানো যায় না?
যাবতীয় চেষ্টা সত্ত্বেও চিকিৎসা ফলদায়ক হচ্ছে না।
সর্বোচ্চ ডোজের ওষুধ দিলেও হার্ট ঠিকঠাক কাজ করছে না। এমনকী মাঝে মধ্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
রোগী নিজে থেকে কোনওভাব শ্বাস নিতে পারছেন না।
পর্যন্ত চিকিৎসা করলেও রোগী এক মাসের উপর কোমায় রয়েছেন।
এই সমস্ত লক্ষণ দেখা গেলে বেঁচে ওঠার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। খরচ ?
এখন পর্যন্ত ভেন্টিলেটরের বিকল্প কিছু পাওয়া গেছে?