রাহুলের প্রসঙ্গ দিয়েই শুরু করা যাক। রাহুলের মনঃসংযোগ করার ক্ষমতা কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে, লেখাপড়া কিংবা ছবি আঁকাতে অনীহা সৃষ্টির মূলে মাত্রাতিরিক্ত কম্পিউটার গেম খেলার একটি ভূমিকা থাকতে পারে। বেশির ভাগ কম্পিউটার গেমই অত্যন্ত দ্রুতগতি সম্পন্ন হতে দেখা যায়। আমাদের মস্তিষ্ক প্রতিনিয়ত দ্রুতগতিসম্পন্ন কোনও কিছুর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, সে ক্ষেত্রে ধৈর্য ধরে করতে হয় বা দেখতে হয় — এমন কিছুতেই মনঃসংযোগ দুরূহ হয়ে পড়ে। এই ভাবে অনেক ক্ষেত্রে দেখা দেয় মনঃসংযোগের সমস্যা। আর এই গেমগুলির মধ্যে বেশির ভাগ থাকে হিংসা, ধ্বংস আর অস্বাভাবিক গতির ছড়াছড়ি, যা শুধু মনোসংযোগের ক্ষমতাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, ছেলেমেয়েদের মনে ধ্বংসাত্মক, আগ্রাসী এবং ঝুঁকিপ্রবণতাকে বাড়িয়ে দেয়।
রাহুলের মধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি কম্পিউটার গেমসের অ্যাডিকশন-এর লক্ষণ, যা মূলত অন্যান্য নেশার মতোই ‘প্লিজার প্রিন্সিপ্যালের’ উপর দাঁড়িয়ে আছে। এই প্লিজার বা আনন্দ থেকে বঞ্চিত হলেই সে হয়ে উঠবে আক্রমণাত্মক।
একই লক্ষণ আমরা দেখতে পাচ্ছি চয়নের আচরণের মধ্যেও। চয়ন দিনের অধিকাংশ সময় ডুবে থেকেছে কম্পিউটার গেমসে আর ইন্টারনেট চ্যাটিং-এ। ক্রমশ দূরে সরে গেছে পড়াশোনার জগত থেকে। শুধু পড়াশোনা থেকেই দূরত্ব তৈরি হয়েছে তা নয়, দূরত্ব তৈরি হয়েছে তার নিজের বাস্তবতার সঙ্গেই। সে ক্রমশ ভার্চু্য়্যাল জগতে মধ্যেই খুঁজে নিয়েছে আশ্রয়। তাই বাবা মা অনেক বুঝিয়েও তার নিজস্ব বাস্তবতায় ফিরিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও কম্পিউটার ইন্টারনেট-সর্বস্ব জীবনচর্যা তৈরি করেছে আলোকবর্ষসম দূরত্ব। একই পরিবারে থেকেও যেন মনে হয়, অন্য গ্রহের বাসিন্দা।
‘উন্নত’ এই জীবনযাপন অজানা অনেক আশঙ্কারও জন্ম দিচ্ছে। যে আশঙ্কাগুলি নেহাৎ অমূলক বলে বোধ হয় সেগুলো আর উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই।
শহুরে মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারের শিশু-কিশোরদের মধ্যেকার দু’একটি প্রবণতাকে নিয়ে এই আলোচনা চটজলদি সমাধানের কোনও পথ হয়তো দেখাতে ব্যর্থ। কিন্তু, এই আলোচনা যদি কিছু পাঠকের মনে ভাবনার অবকাশ তৈরি করে তা হলে আমরা বুঝবো আমাদের প্রয়াস সার্থক।
সূত্র : পরিকথা ২০০৭
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020