লক্ষণীয় বিষয় হল, যা ছিল শিক্ষামূলক একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম, বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ — সেই কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট আজ বহু বাবা-মার স্থায়ী মাথা ব্যথার কারণে রূপান্তরিত হচ্ছে। এখানে সাম্প্রতিক দু’-একটি অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরছি—
ন’বছর বয়েসের রাহুল ক্লাস থ্রি-তে পড়ে। মাস ছয়েক ধরে দেখা যাচ্ছে ও কোনও কিছুতেই বেশিক্ষণ মনোযোগ ধরে রাখতে পারছে না। বিশেষ করে লেখাপড়া, ছবি আঁকা, গল্প শোনা — এই ক্ষেত্রগুলিতে। অথচ মাস ছয়েক আগেও এইগুলিতে ওর আগ্রহের ও মনোযোগের অভাব চোখে পড়েনি। কথা প্রসঙ্গে জানা গেল, পেশাগত ভাবে রাহুলের বাবা কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ। বাড়িতে দু’টো কমপিউটার রয়েছে। মাত্র ছ’বছর বয়েসেই রাহুলের কম্পিউটারে হাতেখড়ি। প্রবল অনুসন্ধিৎসা থেকেই কম্পিউটারের নানান ব্যবহার সম্পর্কে কিছুটা ধারণা অল্প দিনেই তার রপ্ত হয়েছে।
বছর খানেক ধরে কম্পিউটারের নানান গেমসের মধ্যে ডুবে থাকে সে। এখন তা প্রায় নেশার মতো পরিণতিতে পৌঁছেছে। খেলতে না পেলে রীতিমতো আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে রাহুল।
চয়ন কলকাতার একটি নামকরা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইনফরমেশন টেকনোলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। অসম-এর দীর্ঘদিনের প্রবাসী বাঙালি পরিবারের ছেলে সে। বাবা-মা দু’জনেই অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত।
প্রথম সেমিস্টারে মোটামুটি ভালো রেজাল্ট করার পর দ্বিতীয় সেমিস্টারের আগে দেখা গেল চয়ন পরীক্ষা দিতে চাইছে না। পরীক্ষা ঘিরে উৎকণ্ঠার সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে বেশ কিছু শারীরিক অসুবিধাও দেখা দিতে শুরু করল। বাবা মা গুয়াহাটি থেকে ছুটে এলেন ছেলেকে বোঝাতে। কিন্তু তাকে কিছুতেই রাজি করানো গেল না। দেখা গেল, সারা দিনে চয়ন প্রায় দশ-বারো ঘণ্টা ল্যাপটপের সামনেই বসে থেকেছে। হয় সে কম্পিউটার গেমস, নয়তো ফেসবুকে চ্যাটিং করেছে।
কলেজের সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে চয়নের বাবা-মা জানতে পারলেন, প্রথম সেমিস্টারের পর কেনা ল্যাপটপ দিয়ে হোস্টেলের ঘরেই তার বেশির ভাগ সময় কেটে যেত। ক্লাস সে ভাবে করেনি সে। আপাতত ব্যতিক্রমী মনে হলেও বর্তমানে এটা বিপজ্জনক প্রবণতা হিসাবে আমাদের সামনে উঠে আসছে।
সূত্র : পরিকথা ২০০৭
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/14/2020