আমরা জানি জীবনকালের বিভিন্ন পর্যায়ে কৈশোর একটি বিশিষ্ট সময় বা অবস্থা। শিশুরা কৈশোরে উপনীত হলে বাইরের সমাজে প্রথম পা রাখে। এর আগে শিশুটি থাকে পরিবার ও স্কুলের গণ্ডির মধ্যে। সুতরাং নানা দিকের বিধিনিষেধ এড়িয়ে এই প্রথম সে বাইরে আসে। কারণ পরিবারের নিরাপদ সুরক্ষিত আবেষ্টনীর মধ্যে তারা আর নিজেদের আটকে রাখতে চায় না বা তা সম্ভব হয় না। অন্য দিকে সমাজ বা বাইরের বৃহত্তর পরিবার তাকে ক্রমাগত হাতছানি দেয়। তাদের অস্থির করে তোলে।
এই টানাপোড়েন চলতে থাকে নবযুবকাল অবধি। এই পরিপ্রেক্ষিতে তারা কোন পারিবারিক-সামাজিক পরিবেশে বড় হচ্ছে এবং তার পরিবার তাকে সমাজের কাছে কেমন ভাবে দীক্ষিত করছে, এই বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।
পরিবারে শিশু বড় হয় এবং কালক্রমে কিশোর-কিশোরী হয়ে ওঠে। তাই অনুমান করতে কষ্ট হয় না, পরিবারের জীবনধারণের বা জীবনচর্চার প্রভাব ওই শিশু ও কিশোরটির ব্যক্তিত্ব ও ভবিষ্যত জীবনের উপর সর্বাধিক ও দীর্ঘস্থায়ী হবে। প্রতিটি পরিবারের সামাজিক মর্যাদা ও জীবনচর্চা ভিন্ন ধরনের। ফলে তারা কিশোরদের কোন কোন কাজে উৎসাহিত করবে বা কোন কোন কাজকে বাধা দেবে এ ব্যাপারে যথেষ্ট তফাত ঘটে।
মধ্যবিত্ত পরিবারগুলিতে আশা করা হয়, ছোটরা এমন কিছু করবে না যাতে বাড়ির মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। সেই সঙ্গে বাচ্চারা ভবিষ্যতে কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, এই কথা বিবেচনা করে পরিবার তাকে তৈরি করে। পরিবার চায় তারা স্কুলে ভালো ছাত্র-ছাত্রী হয়ে ভালো রেজাল্ট করবে, কোথাও কখনও কোনও ধরনের আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রকাশ করবে না। ভবিষ্যতে তাদের জীবনকে গড়ে তোলার জন্য আর পাঁচ জনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে, কোথাও কর্তৃত্বের বিরোধিতা করবে না, উল্টে তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবে, বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে খেলাধূলা করে বড় হবে। কিন্তু কোথাও নিজেদের ক্ষতি করে বাইরের কোনও কাজ করবে না।
শ্রমজীবী পরিবারের মধ্যে কখনও কখনও উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছেলেমেয়ে দেখা যায় না তা নয়, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের উপর পরিবারের নিয়ন্ত্রণ কম থাকে। অর্থাৎ নিয়মশৃঙ্খলার বিষয়টি এখানে তুলনায় কম।
নিচু শ্রেণি থেকে আসা মেয়েরাও কৈশোরে বেশি সময় বাড়ির আশেপাশে থাকে। তাদের ভাইদের মতো দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ায় না। ঘরগেরস্থালির কাজই যে একমাত্র কাজ, এটা জেনে তারা বড় হয় এবং স্ত্রী ও মায়ের ভূমিকা ছাড়া অন্য কোনও ভাবে যে জীবন কাটানো যায়, তা তারা কল্পনাতেও আনতে পারে না।
ইদানীংকালে ভূবনীকরণের প্রভাব পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটির উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে। সুতরাং কত দিন এই পরিবারগুলি বাচ্চাদের বড় করার একমাত্র মজবুত আশ্রয়স্থল হয়ে দাঁড়াবে তা বোঝা যাচ্ছে না।
আমাদের পরিবারগুলিতে এখনও পিতাকে আদর্শ হিসাবে ধরা হয়। তাদের ঈর্ষান্বিত অনুকরণ করে ছেলেমেয়েরা কাজে নামে এবং কাজ করে চলে। সুতরাং বংশ পরম্পরায় এক ধরনের কর্তৃত্বের ঐতিহ্য অদ্ভুত ভাবে বজায় থাকে। এই ভাবে দেখা যায়, পরিবারগুলি এখনও সমাজের মজবুত কোষ হিসাবে প্রজন্মকাল ধরে ধারাবাহিক ভাবে কাজ করে চলে। এখনও পরিবার নামক প্রতিষ্ঠানটি তুলনায় রক্ষণশীল এবং যে কোনও হঠাৎ পরিবর্তনকে যথেষ্ট পরিমাণে বাধা দেয়।
আমাদের স্কুলগুলির কাজ হল প্রথাগত ভাবে ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে তোলা। বিদ্যাশিক্ষার প্রধান লক্ষ্য হল, সামাজিক স্থিতাবস্থা রক্ষা করা। এই কারণে আমাদের প্রথাগত শিক্ষাক্রম থেকে প্রায় কোনও ধরনের সামাজিক পরিবর্তন আশা করা যায় না।
যেমন মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কয়েক লক্ষ ছেলেমেয়ের পরীক্ষা বা ভাগ্য নির্ধারিত হয় কাগজের মাধ্যমে। অর্থাৎ সে পরীক্ষা-হলে বসে একটি প্রশ্নপত্রের জবাবে কী উত্তর লিখতে পারল, এরই উপর তার মূল্যায়ন করা হয়। তার যোগ্যতাও সেই রূপে নির্ধারিত হয়। অথচ এর পরিবর্তে অন্য কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষমতা আমাদের নেই। এই ধরনের প্রথাগত শিক্ষার জন্য সব থেকে যে ক্ষতিটা হয় তা হল সমাজবিমুখীনতা। অর্থাৎ বৃহত্তর সমাজ সম্পর্কে এদের কোনও সচেতনতা আসে না। কারণ সে এই সমাজ সম্পর্কে বিন্দুমাত্র আগ্রহী হয় না। যদি কখনও হয়, তা হলে সে সেই আগ্রহ মেটায় খবরের কাগজ, টিভির মাধ্যমে। তা ছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিশিক্ষার ক্রম-অগ্রসরতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই শিক্ষাক্রমগুলি গড়ে ওঠে না। ফলে উপযুক্ত পাঠক্রমের অভাবে ছাত্র-ছাত্রীরা এক চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে পড়ে।
কৈশোরে প্রধানত নিম্ন শ্রেণির ছেলেমেয়েরা জীবনধারণের পেশা বা বৃত্তিতে নিয়োজিত হয়ে পড়ে বা তার জন্য নিয়মিত প্রস্তুতি চালিয়ে যায়। এই ধরনের ঘটনার জন্য প্রধানত সমাজের দারিদ্র বা পিছিয়ে পড়া অবস্থাকে দায়ী করা যেতে পারে। পেশার বিষয়টি এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, দেশের ভবিষ্যত উৎপাদিকাশক্তি এরই মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে।
মধ্যবিত্ত সন্তানদের বড় অংশ অন্য কোনও পেশাদারি বা বৃত্তিমূলক কাজে যোগদান না করে স্থানীয় কলেজগুলিতে ভিড় করে। ফলে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে চালু রাখার জন্য সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হয়। তেমনি এই ছেলেমেয়েদেরও গড়ে ওঠার অনেকখানি মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। কারণ সাধারণ কলেজের এই ডিগ্রি ভবিষ্যত জীবনে কোনও কাজে আসে না।
অথচ দেশের শিক্ষা কমিশনের সুপারিশে স্বাধীনতার পর সমাজের আনাচেকানাচে প্রচুর কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয়েছিল। কিন্তু উপযুক্ত শিক্ষার্থীর অভাবে এর অনেকগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে, নয় ধুঁকছে।
নানা সমীক্ষার ফলে দেখা যাচ্ছে, কিশোর-কিশোরীর বৃদ্ধি বিকাশের ক্ষেত্রে দৈহিক, মানসিক, জ্ঞানাত্মক, সামাজিক ইত্যাদি বিভিন্ন দিকের অভিযোজন খুব জরুরি এবং তারা তা করেও থাকে। এই সমীক্ষাগুলি আরও জানাচ্ছে, এই সব উৎক্রমণের পর্যায়ের মধ্য দিয়ে একটি কিশোর, ব্যক্তি হিসাবে তার আপন পরিচয় বা ব্যক্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করে। বয়ঃসন্ধিকালের সমস্ত পরিবর্তন পূর্বপরিকল্পনামাফিক হিসাব কষে হয় না বা এগিয়ে চলে না। ফলে এর অনেক পরিচয় আমরা জানলে বা অনুমান করে নিতে পারলেও, এর অনেক কিছুই আমাদের অজানা, যদিও তা আকস্মিকতায় পূর্ণ এমন মতামতও আমরা দিয়ে থাকি।
এই যে পৃথক বৃদ্ধি-বিকাশের বিষয়টি গড়ে ওঠে তার মধ্যে চলরাশিগুলি হল—ব্যক্তির পিতামাতার কাছে পাওয়া জিনগত অন্তর্নিহিত গুণ বা ক্ষমতা, তার পরিবেশের ভিন্নতা বা সে যে পরিবেশের মধ্যে দিয়ে বড় হচ্ছে তার সঙ্গে ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া, মাতা-পিতার সঙ্গে তার পারিবারিক বা সামাজিক সম্পর্ক, দেহগত বৃদ্ধি বিকাশের হার ইত্যাদি উপাদানগুলি।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা,পরিবেশের অনুকূল বা প্রতিকূল প্রভাবগুলি মানিয়ে নিয়ে নিজেকে বিকশিত করতে বা তার অন্তর্নিহিত গুণগুলি বাস্তবায়িত করতে পারছে। এমনকী কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাদের কোনও অস্বভাবী মানসিকতা নিয়েও তারা তা করছে।
এই বৃদ্ধির হার কখনও পিছিয়ে যায়, কখনও তা শ্লথ হয়ে যায় আবার কখনও তা অত্যন্ত দ্রুত হারে ঘটতে থাকে। এই ব্যক্তিত্বের বিকাশের বড় দিক হল নিজের জীবনচর্চার মধ্যে অর্থময়তার বিবর্তনটিকে খুঁজে বার করা এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার সঙ্গে, অন্তর্দৃষ্টির সঙ্গে অন্যের অভিজ্ঞতা বা মতামতগুলিকে তুলনামূলক ভাবে বিচার করে দেখা। এটাই ধরে নেওয়া হয় যে, কৈশোরের বৃদ্ধি-বিকাশ স্বভাবী হলে তার ব্যক্তিত্বের গঠনও স্বভাবী হবে। আর এই স্বভাবী ব্যক্তিত্ব গঠনের মধ্যে থাকবে এক বিশাল নমনীয় আধার, যেখানে সে নিজের স্বভাবী জীবনচর্চার সঙ্গে অন্য আরও বহু মানুষের চিন্তাভাবনা, জীবনচর্চা সুন্দর ভাবে সমন্বিত করতে পারবে।
বয়ঃসন্ধিকালের ব্যক্তিত্ব গঠনের মধ্যে আপনাকে নিয়ে, সমলিঙ্গ ও বিপরীত লিঙ্গের মানুষজনকে নিয়ে, তুলনামূলক বিচারের বিষয়টি প্রাধান্য পায়। তার পর আসে অন্য যে কোনও বিষয়ের বিচার। তাই প্রাপ্তবয়সকালীন প্রজননতন্ত্রের পরিবর্তন এবং সেই সংক্রান্ত আচারআচরণগুলি ঠিকমতো বিকশিত হওয়ার সুযোগ পেলে ভালোয় মন্দয় মিশিয়ে মোটামুটি কৈশোর পর্যায় উতরে যায়। তেমনি কিশোরদের দৈহিক বিকাশ শুরুতে ভালো হলে তার পক্ষে পরিবেশে মানিয়ে নিতে সুবিধা হয়। বিশেষত সে যদি অনেক লম্বা-চওড়া হয়, দেখতে সুশ্রী হয় তা হলে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। যা ব্যক্তিত্বের বিকাশের ক্ষেত্রে সদর্থক ভূমিকা পালন করে। এই কারণে যাদের বৃদ্ধি-বিকাশ দেরিতে হয় তারা তুলনায় এদের চেয়ে সব দিক থেকে পিছিয়ে থাকে।
যে হেতু খেলাধূলা এবং পড়াশোনার বিষয়ে কিশোররা খুব দ্রুত এগিয়ে যেতে পারে, তাই তারা কিশোরীদের তুলনায় মানসিক ভাবে একটু সুবিধাজনক অবস্থায় থাকে। অন্য দিকে মেয়েরা সাধারণত তাদের বয়সের তুলনায় ছেলেদের থেকে দৈহিক দিক থেকে একটু আগে বিকাশ লাভ করে, ফলে তাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। তাদের বাড়ন্ত গড়নের জন্য বহু ক্ষেত্রে ছেলে বন্ধু বা অন্য পুরুষদের নানা যৌন আচরণকে প্রতিরোধ করতে হয়। তা ছাড়া দেহের নানা পরিবর্তনের জন্য যথা দেহের গন্ধ, দেহে সর্বত্র লোম গজানো ইত্যাদির ব্যাপারে তাদের বেশ অস্বস্তির মুখে পড়তে হয়।
বহু ক্ষেত্রে দেখা যায়, যে সব মেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি-বিকাশ লাভ করে তাদের যৌনাচারণ সংক্রান্ত খারাপ অভিজ্ঞতা অনেক বেশি হয়। অবশ্য আমাদের সমাজ বা পরিবার ছেলেমেয়েদের কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখছে তার উপর অনেকখানি ছেলেমেয়েদের পরিণতমনস্ক হয়ে ওঠা নির্ভর করে। এই সময়ের কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে গঠিত যে কোনও কাহিনিতে লক্ষ্য করা যায়, ছেলেমেয়েরা তাদের আপন ভূমিকা প্রতিষ্ঠা করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়।
একটি কিশোর বা কিশোরী কেমন ভাবে বৃদ্ধি-বিকাশ লাভ করে এটা বুঝতে হলে তার বৃদ্ধি-বিকাশের পরিপ্রেক্ষিতটিও আমাদের বুঝে নেওয়ার প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে রয়েছে তার আর্থ-সামাজিক অবস্থান, লিঙ্গ বা জাতি, ঐতিহাসিক বা ভৌগোলিক অবস্থান, বাবা-মায়ের শিক্ষার ধরন, পারিবারিক জীবনচর্চা, গোষ্ঠীর ধর্মীয় সাংস্কৃতিক প্রভাব, পরিবেশের যৌন আচরণগত দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি অনেক কিছু। এই চলরাশিগুলি কৈশোর অবস্থাকে সদর্থক বা নঙর্থক দিক থেকে উদ্দীপিত করতে পারে। সাধারণত এই উপাদানগুলি আত্মস্থ করে ক্রমাগত ব্যবহার করার ব্যাপারে এদের আগ্রহান্বিত করে তোলা হয় এবং ঘটে চলা পরিবর্তনগুলির অন্তর্নিহিত অর্থ গ্রহণ ও ব্যবহারের জন্য এদের প্রয়োজনমতো উদ্দেশ্যমূলক ভাবে তাদের কাছে ব্যক্ত করা হয়।
বড়দের সমস্যাগুলি যেমন যৌন আচরণগত, হিংসাত্মক আচরণ সংক্রান্ত, আত্মহত্যা, পথ দুর্ঘটনা ইত্যাদি এখন কমবেশি ছোটদের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ছোটরা আজকের পরিবেশের চাপে যেন একটু তড়াতাড়ি বড় হয়ে উঠছে বা উঠতে চাইছে।
প্রান্তীয় জনগোষ্ঠীর ছোট ছেলেমেয়েদের এই উৎক্রমণের কাল যে বেশ খারাপ কাটে তা বলে বোঝানোর দরকার পড়ে না। তবে বহু সময় দেখা যায়, আর্থসামাজিক অবস্থা এবং বড় আকারের গোষ্ঠীর জীবনধারা কৈশোরের প্রভূত পরিবর্তন সাধিত করে। এ ব্যাপারে মধ্যবিত্ত সামজের পূর্বের রক্ষণশীলতা অনেকটাই কমেছে। আর্থসামাজিক দিক থেকে তাদের শ্রেণির মানুষজনদের গ্রহণ করার মতো অবস্থা এদের অনেকখানি বড়েছে। বিশেষ করে যে কোনও ঘটনায় কিশোর-কিশোরীদের উপর দ্রুত সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার অভ্যাস এখন অনেক বাবা-মা করেন না। অল্প-স্বল্প অস্বভাবী অবস্থা থাকলেও এখন ছেলেমেয়েরা যে পরিমাণে আদরযত্ন পায় তাতে খুব সমস্যায় না পড়লে, তারা তাদের গড়ে ওঠার কাজ ভালো ভাবেই টেনে নিয়ে যেতে পারে।
আমরা জানি, কৈশোরের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল ছেলেমেয়েদের বাবা-মা বা পরিবার থেকে ক্রমশ সম্পর্ক ছেদ করে স্বাধীন ও স্ববশ হওয়া এবং ছোট পরিবার থেকে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে সমাজ নামক বড় পরিবারের অন্তর্ভুক্ত হওয়া। এই পরিপ্রেক্ষিতে কৈশোরে বাবা-মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন থাকে এই বিষয়টি বিচার-বিবেচনা করা দরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরনো সম্পর্ক দিয়ে আর নতুন ছেলেমেয়েটির সঙ্গে আলাপ জমানো যায় না।
এ ব্যাপারে দু’ পক্ষই সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করে। ফলে দু’ পক্ষই একে অপরের ভুল সংশোধনের চেষ্টা করে এবং নতুন চুক্তির ভিত্তিতে একে অপরের সম্ভ্রম আদায় করে নেয়। এই আন্তঃসম্পর্ক সাধারণত হয় সহযোগিতামূলক, সহমর্মিতামূলক এবং অনেক বেশি আবেগবর্জিত ও পরিণত। এই অবস্থায় এই নতুন সম্পর্কের মধ্যে সাধারণত বড় ধরনের ঝড়-ঝাপটা বয় না। কিন্তু মাঝেমাঝেই একে অন্যের কারণে বিচলিত হয়ে যায়।
কৈশোরে বাবা-মায়ের সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে দ্বন্দ্ব সংঘাত শুরু হয় এবং এই দ্বন্দ্ব সংঘাত কেমন ভাবে মিটে যায় এটা বুঝতে হলে ওই বিশেষ আন্তঃসম্পর্কটি বোঝার প্রয়োজন হয়। সাধারণত অগ্র ও মধ্য কৈশোরে এই সংঘাত শুরু হয় কেননা বাবা-মায়েরা কিশোর-কিশোরীটির আচার-আচরণ সম্পর্কে একটি পূর্ব ধারণা তৈরি করে নেন এবং যখনই তারা তাদের ওই ধারণার সঙ্গে এখনকার আচার-আচরণটি মেলাতে পারেন না, তখনই তর্ক-যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
বয়ঃসন্ধিকালের এই তর্কযুদ্ধ মারাত্মক আকার ধারন করতে পারে। এই সংঘাত সাধারণত স্থায়ী হয় মধ্যকৈশোরকাল অবধি এবং দেখা যায় অন্তঃকৈশোর কালে এই দ্বন্দ্ব-সংঘাতের নিরসন ঘটেছে। সাধারণত দেখা যায়, এই দ্বন্দ্ব সংঘাতগুলি শুরু হয় পড়াশোনা না করা, বাইরে ঘোরা, টিভি দেখা, বন্ধুদের সঙ্গে অতিরিক্ত সময় দেওয়া, প্রেম করা, নেশা করা ইত্যাদি বিষয়গুলিতে। কোনও কোনও সময়ে পোশাক, আচরণ, মূল্যবোধ ইত্যাদি বিষয়েও সংঘাত শুরু হতে পারে।
এই সম্পর্কের রাস্তায় যদি অনেকগুলি বাধা থাকে তা হলে অবশ্য উভয়েই এর জন্য ঝাঁকুনি খাবে বা হোঁচট খাবে। তাতে আন্তঃসম্পর্ক তেতো হতে পারে এবং একে অপরের প্রতি যুদ্ধং দেহি হয়ে উঠতে পারে। এই সবের মধ্যে মেজাজ হারিয়ে নানা অঘটন ঘটানো বা মনোরোগের শিকার হওয়া আশ্চর্যের কিছু নয়। শেষ পর্যন্ত একে অপরের থেকে দূরে সরে যাবে। তৈরি হবে বদনাদায়ক অবাঞ্ছিত দূরত্ব। কৈশোরে গঠনমূলক দ্বন্দ্ব-সংঘাত আবশ্যিক। অর্থাৎ এই দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্যে এবং বিশেষত তার নিরসন হলে কিশোর-কিশোরীরা তাদের সঠিক আত্মপরিচয় আবিষ্কার করবে, আপন ভাবনাচিন্তায় জ্ঞানাত্মক প্রক্রিয়া ব্যবহারে কুশলী হয়ে উঠবে, যুক্তি-বুদ্ধি এবং বিচারবোধে পারদর্শী হয়ে উঠবে, নিজের অহংকে পরিপূর্ণ আত্মপরিচয়ে বিকশিত করতে পারবে।
বড়রা ছোটদের এই উৎক্রমণকালের দৈহিক এবং মানসিক পরিবর্তনগুলি কেমন ভাবে মেনে নিচ্ছে তার উপর অনেকখানি নির্ভর করছে এই বয়ঃসন্ধিকালে বড়দের সঙ্গে ছোটদের সম্পর্ক। কিন্তু অধিকাংশ সময় দেখা যায় বড়রা এই পরিবর্তনগুলি মেনে নিতে পারে না। ফলে উভয়ের মধ্যে একে অপরের প্রতি নানা উদ্বিগ্ন অবস্থা, দুশ্চিন্তা, বিরক্তি, রাগ, দুঃখ, অভিমান ইত্যাদি তৈরি হয়। বাবা-মা এবং কিশোরদের মধ্যে কেন সর্বদা টেনশন তৈরি হয় এ ব্যাপারে অভিভাবকদের ব্যক্তিত্ব এবং পরিবারের কতকগুলি নির্দিষ্ট উপাদানকে ইদানীংকালে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই উপাদানগুলিকে ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে এই টেনশন অনেকখানি প্রশমিত করা যায়। এই উপাদানগুলি হল বাবা-মায়ের ব্যক্তিত্বের ধরন, শৈশবে এই সম্পর্কের মধ্যে আবেগজনিত অংশের পরিমাণ, কিশোর-কিশোরীদের কাছে বাবা-মার আকাঙ্খা ,কৈশোর সম্পর্কে বাবা-মার ধারণা, বিশেষত তাঁদের ছেলেমেয়ের কৈশোর সম্পর্কে তাঁরা কী ধারণা পোষণ করেন ইত্যাদি।
স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে বাবা-মার সঙ্গে কী ধরনের সম্পর্ক কৈশোর বৃদ্ধি-বিকাশের জন্য সর্বাপেক্ষা সহায়ক? দেখা গিয়েছে, বাবা-মার সঙ্গে বন্ধন মজবুত হলে, নিজেদের মধ্যে যা ইচ্ছা তাই আলোচনার সুযোগ থাকলে, একে অপরের সঙ্গে সুন্দর বোঝাপড়া করার সুযোগ থাকলে দ্বন্দ্ব সংঘাত হলেও তা মিটিয়ে ফেলার মতো বা একে অপরকে মানিয়ে নেওয়ার মতো পরিবেশ পরিস্থিতি থাকলে কিশোর-কিশোরীরা সব সময় স্বস্তি বোধ করে।
আবার অনেক সময় বাবা-মায়েরা পরিণত না হওয়ার কারণে তাঁদের সন্তানদের কৈশোর ঠিকমতো পরিচালনা করতে ব্যর্থ হন। তাঁরা অনুভব করতে পারেন যে ঠিকমতো ছেলেময়েকে পরিচালনা করতে পারছেন না। তাঁদের এই জন্য অনেক উদ্বিগ্ন অবস্থায় দিন কাটে। অনেক সময় এই ব্যাপারটি থেকে দাম্পত্য কলহ তৈরি হয়। এই সব বাবা-মায়েদের মাঝ বয়সে অনেক বেশি বিষণ্ণতায় ভুগতে হয়। তাঁদের সব সময়ই মনে হয়, তাঁরা ছেলেমেয়েদের পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, ডিমে তা দিলে বাচ্চা হয়, পাথরে তা দিলে হয় না।
যে সব বাবা-মা যথেষ্ট কর্তৃত্বপরায়ণ তাঁরা তাঁদের সন্তানদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারেন। যেমন সামাজিক আচার-আচরণে স্ববশ, আত্মনির্ভরশীল, স্বাধীন হওয়ার জন্য বাবা-মায়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। এমনকী স্কুলে ঠিকমতো কাজকর্ম করার জন্যও মনের দিক থেকে তাঁদের যথেষ্ট স্বাধীনচেতা হতে হয়। এ ছাড়া কর্তৃত্বপরায়ণ বাবা-মায়েরা এ কথা উপলব্ধি করতে পারেন না যে, তাঁরা তাঁদের কর্তৃত্বের মধ্য দিয়ে সন্তানের স্বাধীন বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছেন। সর্বদা সন্তানকে তাঁদের উপর নির্ভরশীল করে ফেলছেন। যে কারণে সন্তানটি পরবর্তীকালে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে গেলে হীনমন্যতায় ভুগতে পারে।
কতখানি কর্তৃত্ব দেখানো প্রয়োজন, এই উপলব্ধিটুকু থাকলে প্রয়োজনে আবেগ-ভালবাসা, শৃঙ্খলা, সহমর্মিতা, গ্রহণ-বর্জন, মতৈক্য-মতানৈক্য ইত্যাদি সমস্ত কিছুকে মিলিয়ে সমাধানের রাস্তায় হাঁটা যায়। পরিবারে এই সব বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করার মতো পরিবেশ-পরিস্থিতি হলে কিশোর কিশোরীরা তাদের সমস্ত মনের ভাবনা নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ভাবে নিজের ধারণাগুলি বিকশিত করতে পারে।
এই আলোচনা খুব উত্তপ্ত তর্ক-বিতর্কের মধ্যে দিয়ে হতে পারে, আবার তা ঠান্ডা মাথায় বোঝানোর ব্যাপারও হতে পারে। তেমনি তা সুন্দর বোঝাপড়ার মধ্যে থাকতে পারে বা আদেশের মতোও নেমে আসতে পারে। কিন্তু কিশোর-কিশোরীরা যদি বোঝে বড়রা তাদের প্রতি এই আচার-আচরণের মধ্যে কর্তৃত্ব খাটানোর তুলনায় অনেক বেশি ভালবাসা বা আদরযত্নের প্রকাশ করার চেষ্টা করছে, বা এর মধ্যে কোথাও তাকে অমর্যাদা করার চেষ্টা নেই, তা হলে শুরুতে অসম্মতি থাকলেও এই কথোপকথনের মূল্য-মর্যাদা তারা দেবেই। এই কথোপকথন ছেলেমেয়েদের কৈশোর অবস্থা আসলেই বাবা-মায়েরা শুরু করেন এমন নয়। তাঁরা শৈশব থেকে অল্প করে ধারাবাহিক ভাবে এইসব আলাপা-আলোচনা সুযোগ-সুবিধা মতো চালিয়ে যান।
আমরা কিশোরদের থেকে প্রত্যাশা করি, তারা সুবোধ বালকের মতো এক দিকে ন্যায়পরায়ণ, কর্তব্যপরায়ণ হবে, অন্য দিকে ঝকঝকে স্মার্ট হবে। এক দিকে সে পড়াশোনায় তুখোড় হবে, অন্য দিকে সে বাবা-মায়ের বাধ্য ছেলে হবে। সমস্যা হল আমরা ছোটদের যে এই ভূমিকায় দেখতে চাই তা উচ্চকিত কণ্ঠে জানিয়ে দিই। ফলে অবধারিত ভাবে অতি তুচ্ছ কারণে তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সংঘাত তৈরি হয়। বিশেষত, কিশোরদের আচার-আচরণে কোথাও কোনও ত্রুটি ঘটলেই আমরা তার প্রতি খড়্গহস্ত হয়ে তাকে শাসন করা শুরু করি। অনেক ক্ষেত্রে এর জন্য তার বাবা-মায়ের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। কিছু ক্ষেত্রে অনেক চেষ্টা করেও এই সম্পর্কের অবনতি পুনরুদ্ধার করা যায় না।
অনেক সময় ছেলেমেয়েরা বাবা-মাকে অহেতুক ভয় পেতে শুরু করে, ফলে তাঁদের সঙ্গে ছেলেমেয়েদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। ছেলেমেয়েরা তাদের চিন্তাভাবনা ক্রমশ গোপন করতে শুরু করে। ফলে বহু প্রয়োজনীয় পরামর্শ থেকে তারা বঞ্চিত হয়।
এই সঙ্কটকালে বা দুর্যোগের সময় আমাদের যৌথ পরিবারগুলি উভয়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারত। বড় পরিবারে এই দ্বন্দ্ব সংঘাত প্রশমিত করার জন্য নানা ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু এখন আমাদের পরিবারগুলি অনেক ছোট হয়েছে। ফলে এই আঘাত বা পীড়ন সহ্য করার ক্ষমতা তারা হারিয়ে ফেলেছে।
এই ভাবে দেখাযায় ছোটরা ক্রমশ বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে। কিন্তু এর শুরুর দিকটা বড়দের নজর এড়িয়ে যায়। কেননা বড়রা ছোটদের ঘোরাফেরার জায়গা, ভাবনাচিন্তা, পরিবেশ সম্পর্কে মোটেই ওয়াকিবহাল নয়। কেননা বড়রা সব সময়ই ধরে নেন ছোটরা সেই ছোটই আছে। অন্য দিকে কিশোররা ক্রমশ সামাজিক জীবন-চর্চার জায়গা থেকে নানা দিকের অনেকগুলি বড় বড় প্রশ্নকে আত্মস্থ করেই ইতিমধ্যে বড় হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং ছোটদের সঙ্গে যে নতুন করে আলাপ করতে হবে— এই বিষয়টি বড়রা বুঝতে পারেন না। তাই উভয়ের সম্পর্কের মধ্যে স্বাভাবিক প্রজন্ম ব্যবধান ঘটে যায়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমরা দেখি বড়রা ছোটদের বাইরের দিকটিতে বেশি নজর দিচ্ছেন এবং বহিরঙ্গের সমস্যাগুলি তাঁদের কাছে অনেক বড় সমস্যা বলে মনে হচ্ছে। অথচ অন্য দিকে ঠিক সেই সময়ে ছোট কিশোর বা কিশোরীটি হয়তো কোনও একটি বিষয় নিয়ে আপন অন্তরে জীবন-মরণের সমস্যায় ভয়াবহ দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জর্জরিত হচ্ছে। ফলে একে অপরকে বোঝার ব্যাপারে অনেকখানি দূরত্ব থেকে যায়। এই কারণে কিশোর-কিশোরীরা বড়দের তুলনায় তাদের বন্ধুবান্ধবদের উপর অনেক নির্ভর করে, কেননা অন্যেরাও ওই একই সমস্যায় ভুগছে বলে তারা আশা করে।
কৈশোরে সমগ্র পর্যায়টিতে যে প্রশ্নগুলি সামনে উঠে আসে তা যেন বয়স বাড়ার সঙ্গে পরিবর্তিত হতে থাকে। তেমনই আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও জীবনচর্চার ধরনের জন্য এই প্রশ্নগুলি নানা সময়ে নানারকম ভাবে অগ্রাধিকার পেতে পারে। যেমন আর্থ-সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া সমাজে কিশোরদের অনেক অল্প বয়স থেকে জীবিকার সন্ধান করতে হয় এবং কিশোরীদের বিয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হয়। কিন্তু মধ্যবিত্ত কিশোর-কিশোরীরা এ সব ক্ষেত্রে কেরিয়ার গঠন করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়াই প্রধান বিষয় বলে মনে করে। তা ছাড়া বয়স বাড়ার সঙ্গে এদের প্রত্যকের কিছু পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব নিতে হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতেও জীবনবোধ পাল্টাতে থাকে। কিন্তু এই প্রশ্নগুলি মনের মধ্যে গঠিত হতে হলে ওই পারিবারিক এবং সামাজিক উপাদানগুলির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে পরিণত জ্ঞানাত্মক বা যুক্তিজাত বুদ্ধি বা আবেগজাত বুদ্ধি গঠনের প্রয়োজন হয়।
সাধারণ কৈশোরে ব্যক্তিসত্তা গড়ে ওঠার সময় থেকে কিশোর-কিশোরীদের কমবেশি এই ধরনের ব্যক্তিসত্তার আকুতি নানা ভাবপ্রকাশের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
আমি কে? চার পাশের লোকজন কি আমায় পছন্দ করে? আমি কি পাঁচ জনের হিসেবের মধ্যে পড়ি? আমি কি স্বভাবী? আমার দেহের গড়ন কি ভাল? আমি কি দেখতে সুন্দর? আমার ব্যক্তিত্ব কি আকর্ষণীয়? আমি কি স্মার্ট? আমি কি শক্তিশালী? আমার সম্পর্কে লোকের ধারণা কী? আমার সম্পর্কে লোকে কী আলোচনা করে? আমার জীবনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিৎ? কাকে কাকে আমার বিশ্বাস করা উচিত? শেষ অবধি আমার কোন কোন বিষয় টিঁকবে? আমি কী হতে চাই? আমি কি আমার বাবা-মায়ের মতো? আমাকে কেউ বা কারা সর্বক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে? আমার কোন কোন বিষয় মজবুত আর কোনগুলিতে আমি দুর্বল? কোন কোন বিষয়গুলি আমার এক্ষুনি পাল্টে ফেলা উচিৎ? বাবা-মা যা চায় তা কি আমি হতে পারব? আমি কি টাকাপয়সার উপর বড্ড বেশি নির্ভরশীল? আমি কি নিজের কাছে সত্য আছি? আমি কি সুখী? আমি যা করতে চাই তাই কি আমি করতে পারি? আমি যে কাজ করি তা কি আমি ভালবেসে করি? আমি কি ভালো কাজ কিছু করেছি বা করতে পারি? আমার পরিবারের কি কোনও মর্যাদা বা ঐতিহ্য আছে?
সফল আত্মপরিচয় গঠনের জন্য এই আকুতি আবশ্যিক। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে এই আকুতির সমস্ত উত্তর হাতের কাছে পেতে হবে।
যোগাযোগ :
পাভলভ ইনিস্টিটিউট
৯৮ মহাত্মা গান্ধী রোড,
কলকাতা-৭০০০০৭
ফোনঃ ২২৪১-২৯৩৫
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/10/2020