কোনও আধুনিক মনোরোগবিদ্যার বই খুললে দেখতে পাই বিশেষজ্ঞরা মনোরোগের তত্ত্ব এবং কারণ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের মত পোষণ করেন যা অনেক সময় একেবারে বিপরীতধর্মী। তরুণ চিকিত্সকরা বিভ্রান্ত বোধ করেন নিশ্চয়ই। রোগের শ্রেণি বিভাগ ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে (রোগের কারণ, রোগের বিকাশ, রোগীর উপরে রোগের প্রভাব ইত্যাদি) তাঁদের এই মতভেদ মনোরোগকে অন্য রোগের মতো সহজে ও সঠিক ভাবে চিহ্নিত করার পরিপন্থী। সাধারণ শিক্ষিত মানুষ যদি মনোরোগবিদ্যার বই-এর পাতা ওলটান, তিনি নিশ্চয়ই চিকিত্সকদের থেকেও বেশি বিভ্রান্ত বোধ করবেন।
মনের সংজ্ঞা এবং মন সম্পর্কে সঠিক ধারণা এখনও মনস্তাত্ত্বিক বা মনোরোগবিদদের মধ্যে গড়ে ওঠেনি — এখানেই গণ্ডগোলের উত্স। খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীর ভাববাদ ও জড়বাদের দ্বন্দ্ব এখনও চলছে। অনেকে মনে করেন ভাববাদীদের প্রভাব বিশেষজ্ঞদের বেশি মাত্রায় অভিভূত করেছে। কাজেই মনকে মস্তিষ্কাশ্রিত মনে না করে তাঁরা ফ্রয়েডীয় নির্জ্ঞান, অবদমন ইত্যাদির আশ্রয় গ্রহণ করে মন ও মানসিকতার ব্যাখ্যা করে থাকেন। সেই ব্যাখ্যা আমাদের দেশের জ্ঞানীগুণিদের মুখে ও লেখায় প্রকাশ পায় এবং এই নিরালম্ব, নিরাশ্রয় মন সম্পর্কিত ধারণা ভারতীয় ঐতিহ্য, আত্মা-পরমাত্মা ইত্যাদির ধারণাকে পরোক্ষ ভাবে বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই আমাদের দেশে মন ও মনোরোগবিদ্যা সংক্রান্ত তত্ত্বে ও তথ্যে ভাববাদাশ্রিত ধারণা বিশেষ ভাবে পরিস্ফুট। আমাদের দেশ কেন ! ফ্রয়েডীয় প্রভাব যুক্তরাষ্ট্র থেকে বর্তমানে বিলীয়মান তবুও কূট এবং জটিল কোনও বিশ্লেষণের ব্যাপারে এখনও দেখতা পাই সিগমুন্ড ফ্রয়েডের ইগো এবং ঈদের উল্লেখ। প্রসঙ্গত এখানেই বলা উচিত যে, রোগতত্ত্ব নির্ণয় ও তাঁর চিকিত্সায় এখন স্কিনারের পরিমার্জিত ব্যবহারবাদী তত্ত্বটাই প্রচলিত। এই তত্ত্ব আপাতদৃষ্টিতে পুরোপুরি জড়বাদী। শুধু আচরণ দিয়ে মানুষের মনোভাব নির্ণয় সম্ভব নয়, তাই স্কিনারপন্থীদের অভিধানে মন কথাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নয়।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/27/2020