আপনারা বিষণ্ণতা রোগের (depression) সঙ্গে সকলেই কমবেশি পরিচিত। এখানে নিস্তেজনাধর্ম প্রাধান্য লাভ করে রোগীকে কর্মবিমুখ, হতাশাচ্ছন্ন ও ভীতত্রস্ত করে তোলে। এই অবস্থায় তাদের কাছে জীবন বিস্বাদ, ও অর্থহীন মনে হয়। এখানেও আগের মতো তিনটি কারণ এই নিস্তেজনা আধিক্যের মূলে আছে বলে মনি করি। ১) রোগী নিস্তেজনাধর্মী মস্তিষ্কর অধিকারী (inhibitory type) । ২) মস্তিষ্ককোষের উত্তেজনা নিস্তেজনা সমমাত্রিক, কিন্তু যে সময় নিস্তেজক উদ্দীপক তার মস্তিষ্কে অনুপ্রবিষ্ঠ হয়েছে সেই সময় বা তার কিছু আগে সে তার কাছে যা মূল্যবান তা হারিয়ে ম্রিয়মান হয়ে আছে, ব্যর্থতা ও হতাশার জ্বালায় ভুগছে। এই সময় খুব সামান্য নিস্তেজনাকারী উদ্দীপকের প্রভাবে সে ভেঙে পড়ে বিষণ্ণতা রোগী বলে চিহ্নিত হতে পারে। ৩) আবার অন্যান্য কারণে তার স্নায়ুগুলো যদি টেনস হয়ে থাকে ওই ম্যানিক রোগীর মতোই সে বিষণ্ণতা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কোনও ক্ষেত্রেই কিন্তু শৈশব থেকে গড়ে ওঠা শর্তাধীন পরাবর্তগুলির বিবিধ প্রভাবকে ভুললে চলবে না।
সাধারণ মানুষের কাছে এই দুই ধরনের রোগীই প্রথম দিকে রোগী বলে বিবেচিত হয় না। স্বামীর রাগ বেড়ে গেছে, মেজাজ খারাপ হয়েছে এই সব ভেবে স্ত্রী গোপনে চোখের জল মোছেন, আর কোনও বাড়ির বধূ যদি তাঁর নিয়মিত গার্হস্থ্যকর্ম করতে পারছেন না বা করছেন না দেখা যায় তা হলে শাশুড়ি, ননদ এবং কোনও সময় স্বামীও মনে করে কাজের ভয়ে সে অসুস্থতার ভান করছে। এর জন্য এদের খুব দোষ দেওয়া যায় না। এই দুটি রোগই মেজাজের হেরফের, রোগী যখন খুবই উত্তেজিত এবং জিনিসপত্র ভাঙছেন তখনও অসংলগ্ন বা অশ্রাব্য কোনও কথা তাঁর মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয় না। দু-এক ক্ষেত্রে নিজেকে সিজার বা তৈমুরলঙ্গ মনে করলেও, তাঁদের মেগালোম্যানিয়াক কথাবার্তার মধ্যে অতিরঞ্জন থাকেলও, স্কিজোফ্রেনিকদের মতো তাঁদের অতিরঞ্জনের মধ্যে ডিলিউশান (delusion) থাকে না। চিকিত্সকের পক্ষে রোগ নির্ণয় কঠিন হলেও সাধারণের পক্ষে রোগের প্রথম দিকে বিভ্রান্তি ঘটাই স্বাভাবিক।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/17/2019