এই দুই ক্ষেত্রেই ভয় অবসেশনে দাঁড়িয়ে গেছে। চূড়ান্ত বিশ্লেষণে দেখা গেল, দু’ জনেই মৃত্যুভয়ে ভীত। প্রথম রোগীটির মৃত্যুভয়ের কারণ তার রোগ ইতিহাস থেকে সহজেই বোঝা যায়। দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে জানা গেল, তার পারিবারিক জীবন শান্তির নয়। মা এবং স্ত্রীতে বনিবনা হয় না। শিক্ষিত এই ছেলেটি মায়ের পক্ষ নিয়ে স্ত্রীকে অনেক সময় প্রহার করত। এ কথাগুলো তার স্ত্রীর কাছ থেকে শোনা এবং সে অস্বীকার করতে পারেনি। স্ত্রীর শারীরিক স্বাস্থ্য খুবই খারাপ ছিল। তবুও গৃহস্থালির সব কাজকর্ম তাকেই করতে হত। ছেলেটি স্ত্রীকে নির্যাতন করেই ক্ষান্ত ছিল না। তার নামে কুৎসা রটনাও করত। সমস্ত স্ত্রী জাতির উপরেই তার ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছিল সেটা কিছু দিনের মধ্যেই বোঝা গেল। এই বিদ্বেষের কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে এক ন্যক্কারজনক ঘটনার হদিস পাওয়া গেল।
সাত বছরে ছেলটি পিতৃহীন হয়। সে ছিল একমাত্র সন্তান। বারো-তেরো বছরের সময় সে জানতে পারে ও বুঝতে পারে যে তার মা (৩১/৩২ বয়স) এক জন গুরুভাই-এর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত। বারো বছরের ছেলে রাগে-ঘৃণায় কুপিত হয়ে এক দিন মায়ের অনুপস্থিতিতে তাঁর গুরুজন স্থানীয় শয্যাসঙ্গীকে কটু কথা শোনায়। তিনি তার গলা টিপে ধরে, তাকে মেরে ফেলবেন বলে ভয় দেখিয়ে বলেন যে, সে যা জানে তা যদি কারও কাছে প্রকাশ করে তা হলে তার বাঁচার কোনও সম্ভাবনা থাকবে না। সেই থেকে মৃত্যু ভয় তাকে পেয়ে বসে। কিন্তু মায়ের প্রতি আনুগত্য এবং ভালোবাসা একটুও কমে না। তার তখন মনে হয়েছিল এবং এখনও মনে হয় যে, মা নির্দোষ। তিনি ভয় বা অর্থাভাবের বশবর্তী হয়েই ওই লোকটিকে শয্যাসঙ্গী হিসাবে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছিলন। তাই এক দিকে তার নারীজাতির উপর ঘৃণা ও বিদ্বেষ, স্ত্রীর প্রতি নির্যাতন এবং অন্য দিকে জনমদুখিনি মায়ের প্রতি অদ্ভুত আকর্ষণ।
ভয়ের অনেক রোগীই আবার ব্যক্তিগত দিক থেকে কোনও ভীতজনক অবস্থার সম্মুখীন হননি — এ-ও দেখা যায়। তারা মা বাবার স্নেহ থেকে শৈশবে বঞ্চিত এবং তাদের পরস্পরের মধ্যে কলহ বিবাদ দেখে এবং শুনে তারা বিশেষ ভাবে বিচলিত। পাড়ায়, স্কুলে, কলেজে, সমবয়সিদের সঙ্গে তারা সহজ ভাবে মিশতে পারে না, সব লোককেই সন্দেহ বা অবিশ্বাস করে, নিজের সমস্যার সমাধান করার জন্য নানাবিধ পুস্তক থেকে সূত্র বা উপায় খোঁজার চেষ্টা করে। এই ধরনের ভয় বা সন্দেহ কিন্তু স্কিজোফ্রেনিক বা প্যারানয়েডের ভয় থেকে স্বতন্ত্র ধরনের। বাইরের জগত থেকে তারা বিচ্ছিন্ন নয়, আবার সমাজ বা সমাজস্থ মানুষের সঙ্গে তাদের একাত্মবোধের অভাব। এরা সাধারণত চিকিৎসককেও পুরোপুরি বিশ্বাস করে না, ওষুধ খেতে ভয় পায়, পাঁচ-সাতটি সাক্ষাৎকারের পরও তারা খোলাখুলি ভাবে সব কথা ডাক্তারকে জানায় না। ডাক্তার আরও কিছু জানবার জন্য পীড়াপীড়ি করলে তারা চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়। বাড়িতে পাড়ায় এবং বৃহত্তর সমাজে কোথাও তাদের নির্ভর করার মতো বন্ধু বা সঙ্গী তারা খুঁজে পায় না, বলা চলে খোঁজ করার চেষ্টাও ঠিক করে না।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 5/7/2020