এ বার এই রোগ সারে না, চিকিৎসা করে কোনও লাভ নেই, কিছু দিন ভালো থেকে আবার রোগ হবে — এই ধারণায় যারা বিশ্বাসী তাদের উদ্দেশে দু-চার কথা বলছি। হ্যাঁ, এ কথা ঠিক যে স্কিজোফ্রেনিক রোগীদের সারার পরেও বেশ কিছু দিন ওষুধ খাওয়ার ব্যবস্থা দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এই ব্যবস্থা সুস্থ হলে রোগী এবং তাঁর আত্মীয়রা অনেক সময় মেনে নিতে পারেন না। এর ফলে পুনরাক্রমণ ঘটে। অনেক শারীরিক ব্যাধিতে (ফুসফুসের যক্ষ্মায়) ভালো হওয়ার পরও ওষুধ চালিয়ে যাওয়ার বিধান বিশেষজ্ঞরা দিয়ে থাকেন। ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের রোগ প্রভৃতি আরও কিছু ব্যাধিতে অনেক ক্ষেত্রে সারা জীবন ওষুধ খাওয়ার ব্যবস্থা দেন চিকিৎসকরা। এই ব্যবস্থা রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়স্বজনেরা প্রায়ই নির্দ্বিধায় পালন করেন। কেন না কিছু দিন ওষুধ বন্ধ করলেই তাঁরা রোগ উপসর্গজনিত কষ্ট অনুভব করেন। মনের অসুখের বেলায় বোধহয় সেই মধ্যযুগের সংস্কার এখন প্রচ্ছন্ন ভাবে আমাদের মধ্যে বিদ্যমান। তাই চিকিৎসকের বিধানের প্রতি এই অবহেলা।
এ ছাড়া স্কিজোফ্রেনিক রোগীর প্রতি আচারব্যবহারে পিতা মাতা ও আত্মীয়রা দু ধরনের ভুল করে থাকেন; এক — রোগী সুস্থ হয়েছে, সবল রেয়েছ, কাজেই আগে যতটা কাজের ভার তার উপর ছিল ততটাই তাকে বোঝা বহনের নির্দেশ দেন। দুই — অতিসাবধানী পিতামাতা রোগীকে সুস্থ অবস্থাতেও সে যে আর পাঁচ জনের মতো স্বাভাবিক নয় এই রকম মনে করেন এবং তাকে কোন কিছু দায়িত্ব বা কাজ না দিয়ে সে যে অন্যদের থেকে স্বতন্ত্র ও হীনশক্তি এইটা তাকে বুঝিয়ে দেন। উপরি-উক্ত দুই কারণেই রোগী কমমাত্রায় ওষুধ খাওয়া সত্ত্বেও আবার অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। এটা তাদের অজ্ঞতা নয়, স্বেচ্ছাকৃত আচরণ। ডাক্তাররা রোগীকে রোগমুক্ত বলে ঘোষণা করার পরে এ সম্পর্কে তাদের যথাযথ নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও এই রকম ঘটে। এ বিষয়ে চিকিৎসক বা দরদি মানুষের আরও ভাবনাচিন্তার অবকাশ আছে। চিকিৎসিত রোগীদের ভালো রাখতে হলে তাদের আশেপাশে যারা আছে তাদের সংস্কার এবং মতান্ধতার অবসান অতীব প্রয়োজন।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/27/2020