এ বার হিস্টিরিয়ার প্রসঙ্গ। হিস্টিরিয়া কথাটি প্রায় সবারই জানা। তবে তারা এক ধরনের হিস্টিরিয়া সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। মূর্ছা হচ্ছে, জ্ঞান হলেই রোগী চোখ বড় করে সামনে যাকে দেখছে তাকে তিরস্কার করছে অথবা নেপথ্যে অবস্থিত কোনও দেবদেবীর সঙ্গে আলাপ করছে — এই ধরনের রোগীর দশর্নলাভ সকলের না হলেও এই সম্পর্কে তারা অনেক গল্প শুনেছেন। উনিশ শতকে ইউরোপের সর্বত্রই, মেয়েদের মধ্যে বিশেষ করে এই রোগ দেখা দিত। নাটক নভেলে নায়িকার মাঝে মাঝে মূর্ছা যাওয়ার কথা প্রায়ই লেখা হত। শরত্চন্দ্রের কাহিনিতেও নায়িকাদের সম্বিত হারানোর একাধিক বিবরণ আছে। আমাদের দেশে এবং অন্য দেশেও কিছু দিন আগে পর্যন্ত ভূতে পাওয়া, ভর হওয়া ইত্যাদি কথা হিস্টিরিয়াগ্রস্ত রোগীদের সম্পর্কে ব্যবহৃত হত। এ সম্পর্কে আমরা এই প্রবন্ধের গোড়ার দিকে উল্লেখ করেছি। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় হিস্টিরিয়া সম্পর্কে চিকিত্সকেরা নতুন জ্ঞান লাভ করেন। ফ্রান্সে পরিখা কেটে এক দিকে জার্মান সৈন্য, অন্য দিকে মিত্র বাহিনীর সৈন্য পরস্পরকে আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত। পরিখার মধ্যে অবস্থিত এক সৈনিকের দু’পাশে দুই সহযোদ্ধা শত্রুর গুলিতে নিহত হয়েছেন। তাঁদের রক্তস্রোত জীবিত সৈনিকটিকে মোহাচ্ছন্ন করল। সে অচেতন হয়ে গেল। পরে যখন কয়েক মাইল দূরে অবস্থিত হাসপাতালে তাকে নিয়ে আসা হল দেখা গেল যে, তার অতীতের স্মৃতি বিলুপ্ত হয়েছে অথবা সে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে কিংবা তার ডান হাত পক্ষাঘাতে অবশ হয়ে গেছে।
এদের নিয়ে গবেষণা শুরু হল এবং দেখা গেল যে এরা সবাই হিস্টিরিয়ায় ভুগছে। হিস্টিরিয়ার এই পরিবর্তিত রূপকে কনভার্সন হিস্টিরিয়া বলা হয়। রণক্ষেত্র থেকে পলায়ন বা যুদ্ধ করতে অনিচ্ছা শুধু দেশদ্রোহিতা নয়, বড় দরের নৈতিক অপরাধ বলেও বিবেচিত। পরিখার মধ্যে মৃত সহযোদ্ধাদের দেখে রণক্ষেত্র থেকে পলায়নের যে ইচ্ছা উপরে উল্লিখিত সৈনিকটির জেগেছিল সে ইচ্ছাকে কার্যে পরিণত করলে সে রাজদ্বারে দণ্ডিত হবে এবং কাপুরুষ বলে ঘৃণিত হবে। এ কথা সে জানত। তাই ভয় ও পলায়নের ইচ্ছা রূপান্তরিত হয়েছে হিস্টিরিয়া রোগে। প্রায় প্রতি বছরই পরীক্ষার আগে (মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক) মনোরোগ চিকিত্সার হিস্টিরিক দৃষ্টিহীনতা বা ডান হাতের হিস্টিরিক অসাড়তার কেস পেয়ে থাকেন। শুধু পরীক্ষা নয়, যে কোনও সংকটের মধ্যে দুই বিপরীতধর্মী প্রক্ষোভের সংঘাতে শারীরিক বা দেহের মধ্যে কারও যন্ত্রপাতির এই রকম অসাড়তা ঘটে থাকে। হিস্টিরিয়াজনিত বাকরোধ, দৃষ্টিহীনতা, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অসাড়তা ইত্যাদি সম্বন্ধীয় প্রচুর তথ্য মনোরোগ চিকিত্সকদের দফতরে পাওয়া যেতে পারে।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/27/2020