সর্বোপরি প্রয়োজন হল একটা সামাজিক পরিকাঠামো গড়ে তোলা। এদের প্রতি সমাজের সকলকে সচেতন করে তোলা এবং এদের প্রতি মানবিক আচরণ করা। প্রতিবন্ধী শিশুর সমস্যার সমাধান ত্বরান্বিত করতে হলে সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুকে গ্রহণ করার জন্য মা-বাবা এবং সমাজের সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে। দেখা গেছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শিশু জন্মানোর আগে অব্দি মা-বাবা এই সব ইস্যু সম্বন্ধে কিছুই জানেন না। চিকিত্সকের অবহেলায় প্রতিবন্ধী হলে চিকিত্সকও জানাতে চান না। যখন থেকে মা জানতে পারে তার শিশু মানসিক প্রতিবন্ধী তখন থেকেই শুরু হয় মা-এর মানিয়ে চলা। শুধু শিশুটিকে মানিয়ে চলা নয়, পরিবারের অন্যদের, আত্মীয়স্বজনের, পাড়াপড়শির — সবারই অবেহলা তাকে সহ্য করে চলতে হয়। এই পিছিয়ে পড়া সমাজের অনেকেরই ধারণা — মায়ের শারীরিক অক্ষমতাই এই প্রতিবন্ধী শিশু হওয়ার কারণ। এই শিশুর উত্পাতে যখন সবাই বিরক্ত হয় তখন মা-কেই ক্ষমপ্রার্থিনী হয়ে সমস্যার মোকাবিলা করতে হয়। সমাজে এই ধারণাও প্রচলিত আছে মায়ের যথেচ্ছাচারিতার জন্য প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হয়েছে। প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য মা-কে অনেক ক্ষেত্রেই লাঞ্ছিত হতে হয়। এমনকী কোনও কোনও পরিবারে স্বামীও এমন শিশু জন্মানোর কারণ হিসাবে মা-কে চিহ্নিত করে। শিশু জন্মানোর আগে যে স্বপ্ন, সাধ ও কল্পনা মায়ের থাকে তা মন থেকে নীরবে মুছে দিয়ে সমাজের বাস্তবতার সঙ্গে কঠিন লড়াই-এ মাকে নামতে হয়, প্রতিবন্ধী শিশুর প্রায় সব ভার তাঁকে কাঁধে তুলে নিতে হয়।
আমাদের দেশে বেশ কিছু সংখ্যক মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু জন্মায় সমাজের অজ্ঞতা এবং চিকিত্সকের অবহেলার জন্য। কী কারণে প্রতিবন্ধী শিশু জন্মাতে পারে, কী ভাবে এই ধরনের শিশুর জন্ম রোধ করা যেতে পারে এবং জন্মালে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, এ বিষয়ে প্রচারমাধ্যমে ও চিকিত্সকদের এগিয়ে আসতে হবে। ঠিক সময়ে ঠিক রোগ চিহ্নিত করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিত্সার ব্যবস্তা নেওয়া যাবে ততই প্রতিবন্ধী সমস্যার তীব্রতা কমবে। সমাজের সকলকে একত্রিত হয়ে মানবিক আচারআচরণ ব্যবহারের সেতু গড়ে তুলতে হবে। বুদ্ধি-বৃত্তির বিকাশের (intellectual competence) তুলনায় এটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন কাজ। প্রতিবন্ধী শিশুদের চিকিত্সার ব্যবস্থার জন্য সরকারকে অনেক বেশি এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি আর্থিক সাহায্য ছাড়া গর্ভাবস্থায় পরীক্ষা করা, শিশু চিকিত্সার ব্যবস্থা নেওয়া এতই ব্যয়সাধ্য যে আমাদের দেশে গরিব জনসাধারণের পক্ষে এই সব করা সম্ভব নয়। যদিও আমাদের দেশে কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনের কাজে এগিয়ে এসেছে, তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। মনস্তত্ত্বিবদদের এগিয়ে আসতে হবে। জীবনবিজ্ঞানে আধুনিক ওষুধ এবং behavioural science- এর ওপর পারদর্শিতা বাড়াতে হবে যাতে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর সমস্যা অনেকাংশে দূর করা যায়।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 8/28/2019