রক্তে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে শরীরে 'রক্তাল্পতা' (অ্যানেমিয়া) রোগটি দেখা দেয়।ব্যক্তি বিশেষে আলাদা হলেও স্বাভাভিকভাবে রক্তে লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ হল :
রক্তাল্পতার তিনটি মূল কারণ : রক্তক্ষয় , লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন কমে যাওয়া এবং লোহিত রক্তকণিকার নষ্ট হয়ে যাওয়া।
যে কারণগুলো রক্তাল্পতা ঘটাতে পারে :
অ্যানেমিয়া বা রক্তাল্পতাজনিত কারণে শরীর দুর্বল হয়ে যায়, ঠান্ডা লাগে, হতবুদ্ধি ও খিটখিটে ভাবের জন্ম হয়। রক্তাল্পতার কারণে স্বল্প শ্বাস অথবা মাথা যন্ত্রণার লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
ক্লান্তি বা দুর্বলতা হল রক্তাল্পতার সাধারণ লক্ষণ। অন্যান্য লক্ষণ বা উপসর্গের মধ্যে পড়ে :
রক্তাল্পতার তিনটে মূল কারণ :
১ . রক্তক্ষয় : রক্তক্ষয় রক্তাল্পতার একটি সাধারণ কারণ, বিশেষত রক্তে 'লৌহ বা আয়রনের স্বল্পতাজনিত রক্তাল্পতা ' একটি সাধারণ ঘটনা। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে রক্তক্ষয় ক্ষণমেয়াদী বা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
পাচনতন্ত্রে অথবা মুত্রনালীতে রক্তক্ষরণের ফলে রক্তক্ষয় ঘটে। সার্জারী, মানসিক আঘাত, অথবা ক্যান্সারের কারণেও রক্তক্ষয় ঘটতে পারে। ঋতুস্রাবের ফলেও প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষয় ঘটে।
প্রচুর রক্তক্ষয়ে শরীরে লোহিত রাক্তকনিকার সংখ্যা কমে যাওয়ায় রক্তাল্পতা ঘটে।
২. স্বল্প পরিমাণে লোহিত রাক্তকণিকার উৎপাদন : এটি 'অর্জিত' অথবা 'বংশগত' হতে পারে। ['অর্জিত' বলতে বোঝায়- যে ব্যক্তি এই রোগটি নিয়ে জন্মায়নি ও পরে কোনো এক সময় ঐ ব্যক্তির দেহে রোগটি দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে, এই রোগটির কারণ কোনো ব্যক্তির বাবা/মা'র শারীরিক কারণ হলে তা 'বংশগত'।]
'অর্জিত অবস্থা' নিম্নলিখিত বিভিন্ন কারণে গড়ে উঠতে পারে :
অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানেমিয়া অর্থাৎ মজ্জাজনিত রক্তাল্পতায় যথেষ্ট পরিমাণে লোহিত রক্ত কণিকা উৎপন্ন হয় না।রক্তাল্পতার এই অবস্থাটি অর্জিত অথবা বংশগত দুই হাতে পারে।
৩)বেশী সংখ্যায় লোহিত রক্ত কনিকার ক্ষয় : যে বিষয়গুলো লোহিত রক্ত কণিকার ধ্বংসের কারণ হয় তাদের মধ্যে একটি হচ্ছে 'বিস্ফারিত বা অসুস্থ প্লীহা'। এটি একটি অর্জিত অবস্থা যা 'কাস্তে-কোষ-রক্তাল্পতা' (সিকল সেল অ্যানেমিয়া), থ্যালাসেমিয়া অথবা নির্দিষ্ট কোনো উৎসেচকের অভাবজনিত কারণে ঘটতে পারে। 'অর্জিত অবস্থা' এমন একটি অবস্থা যখন শরীর প্রচুর পরিমাণে লোহিত রক্ত কণিকা নষ্ট হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে লোহিত রক্ত কণিকায় 'অপূর্ণতা' বা 'খুঁত' দেখা দেয় এবং যার ফলে সুস্থ লোহিত কণিকার তুলনায় অনেক আগে এদের মৃত্যু ঘটে।
'রক্তক্ষরিত রক্তাল্পতা' বা 'হিমলেটিক অ্যানেমিয়া' হল আরেকটি উদাহরণ যেখানে শরীর লোহিত রক্ত কণিকাকে ধংস করে। অর্জিত অথবা বংশগত বা অন্য কোনো কারণে হিমলেটিক অ্যানেমিয়া ঘটতে পারে। রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা (অনাক্রম্যতা)-র বিকার, সংক্রমণ, নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়াজনিত বা রক্ত পরিবর্তনের কারণে 'রক্তক্ষরিত রক্তাল্পতা' ঘটতে পারে।
চিকিৎসার ইতিবৃত্ত :
বিভিন্ন লক্ষণ ও উপসর্গগুলির মধ্যে দুর্বলতা, অসুস্থাতাবোধ অথবা শরীরে ব্যথা
রক্ত পরীক্ষা :
হিমোগ্লোবিনের (রক্তকণার রঞ্জক উপাদান) স্তর পরীক্ষা করা (এটি এক ধরনের প্রোটিন যা অক্সিজেন পরিবহন করে) ও পরীক্ষা করে নেওয়া প্রয়োজন হিমোগ্লোবিন-সমৃদ্ধ লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কম আছে কিনা।
শারীরিক পরীক্ষা :
সম্পূর্ণ রক্ত কণিকার সংখ্যা গণনা অর্থাৎ কমপ্লিট ব্লাড-কাউন্ট (সি বি সি ): রক্তে কতগুলো রক্ত কণিকা আছে তা এই সি বি সি পরীক্ষা দ্বারা নির্ধারণ করা হয়। রক্তাল্পতা হয়েছে কিনা জানতে একজন চিকিৎসক রক্তের মধ্যে লোহিত-রক্ত-কণিকা ও হিমোগ্লোবিনের স্তর পরীক্ষা করে দেখে নেন। সাধারণ পূর্ণবয়স্ক মানুষের রক্তে হিমোগ্লোবিনের সংখ্যা ব্যক্তি বিশেষে আলাদা হলেও তা গড়ে ৩৪.৯ শতাংশ পুরুষের ক্ষেত্রে ও মহিলার ক্ষেত্রে ৪৪.৫ শতাংশ।
লোহিত রক্ত কনিকার আকার ও গঠন নির্ধারণের পরীক্ষা :
কিছু রক্ত কণিকার আকার, গঠন ও বর্ণ রোগ নির্দ্ধারণে সহায়ক হয় , যেমন আয়রণের অভাবজনিত রক্তাল্পতায় লোহিত রক্ত কণিকার আকার তুলনামূলকভাবে ছোটো ও বিবর্ণ।ভিটামিনের (খাদ্যপ্রাণ) অভাবজনিত রক্তাল্পতায় লোহিত রক্ত কণিকার আকার তুলনামূলকভাবে বড় এবং সংখ্যায় কম।
লৌহ বা আয়রণের পরিপূরক : আয়রণের পরিপূরক হিসেবে সাধারনত: দিনে ২/৩ বার ফেরাস-সালফেটযুক্ত খাবার খাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আয়রন-সমৃদ্ধ খাদ্যের মধ্যে পড়ে :
আয়রণের অভাবজনিত রক্তাল্পতা খুব কমই দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা ঘটায়। তবুও, এদের মধ্যে কিছু জটিলতার উল্লেখ নিচে করা হল :
ক্লান্তি
আয়রণের অভাবজনিত রক্তাল্পতা একজন মানুষকে ক্লান্ত ও অলস বা হতদ্যম করে দিতে পারে। এর ফলস্বরূপ একজন মানুষের সক্রিয়তা ও কর্মক্ষমতা কমে যায়।
অনাক্রম্য প্রক্রিয়া (ইমিউন সিস্টেম)
আয়রণের অভাবজনিত রক্তাল্পতায় শরীরের সাধারণ স্বভাবজাত রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।এরফলে একজন মানুষ খুব সহজে অসুস্থ বা সংক্রমিত হতে পারে।
হৃৎপিন্ড ও ফুসফুসে জটিলতা
গুরুতরভাবে রক্তাল্পতায় ভুগছেন এমন ব্যক্তির ফুসফুস ও হৃৎপিন্ডে জটিলতা দেখা দিতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ :
গর্ভাবস্থা
গুরুতরভাবে রক্তাল্পতায় ভুগছেন এমন গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকারের জটিলতার সম্ভবনা রয়েছে, বিশেষ করে শিশুর জন্ম দেওয়ার সময় ও পরে। এ ক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে এক ধরণের জন্মোত্তর বিষণ্নতা গড়ে উঠতে পারে (বিষণ্নতা বা হতাশা যা কিছু কিছু মহিলার মধ্যে শিশুর জন্ম দেওয়ার পার দেখা যায়)।
সুত্রঃ এন এইচ পি
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020