ভারতের সংবিধান মেয়েদের সমানাধিকার এবং আইনী সুরক্ষা নিশ্চিত করে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় সংস্কৃতি চলছে তার নিজের পথে। বহু গবেষক এবং সমাজকর্মী মানতেই চান না যে আমরা নারীদের স্বাস্থ্য ও সমাজে তাঁদের অবস্থার উন্নতি তখনই ঘটাতে পারব যখন সমাজ লিঙ্গবৈষম্যের বিষয়টি খোলাখুলি ভাবে মোকাবিলা করার চেষ্টা করবে। দীর্ঘ সময় ধরে আমরা নারীদের বিষয়গুলি নিয়ে সমাজের সঙ্গে স্পষ্ট আলোচনা এড়িয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সামাজিক বিপ্লব ছাড়া ভারতীয় নারীদের স্বাস্থ্যের উন্নতি কার্যত অধরাই থেকে যাবে।
এ ব্যাপারে অনেক পদ্ধতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে সামাজিক, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক বৈষম্যকে জানা-বোঝা এবং তার মুখোমুখি হওয়ার বিষয়টি থাকতে হবে। এর পাশাপাশি লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে আইনের প্রয়োগ জরুরি। আইন আদৌ প্রয়োগ হচ্ছে কিনা তার উপর নজরদারি থাকাও প্রয়োজন।
স্বাস্থ্যের অধিকার একটা মৌলিক অধিকার। কিন্তু অর্ধেক জনসংখ্যার স্বাস্থ্যসূচক যদি নীচের দিকে থাকে তবে তা যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ। লিঙ্গ এবং এলাকা ধরে ভারতের জনস্বাস্থ্যের যাবতীয় তথ্যের বিশ্লেষণ প্রয়োজন। পাশাপাশি, প্রতিকূল প্রবণতার মোকাবিলায় বেশ কিছু নীতি এবং কর্মসূচি নেওয়া খুবই প্রয়োজন। বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে উঠে আসা তথ্য থেকে পরবর্তী লক্ষ্য স্থির করতে হবে। উন্নতি যেন দৃশ্যতই হয় এবং মানদণ্ড অনেক উঁচুতে ধরা থাকে।
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বৈষম্যের পরিমাণটা অনেক সময়ে চিকিৎসক মহলেও ছোট করে দেখা হয়। ভারতীয় সমাজে নারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখা হয়। ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী সংক্রান্ত বিষয়গুলি হয় উপেক্ষিত থেকে যায় আর না হয় পাত্তাই দেওয়া হয় না। এই প্রথাগত ছককে ভাঙতে সমগ্র গোষ্ঠী এবং জনসাধারণকে নিয়োজিত করার প্রয়োজন রয়েছে। লিঙ্গসমতা আনার কর্মসূচিগুলির লক্ষ্য শুধুমাত্র নারীদের সমান বা বেশি সুযোগ দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লিঙ্গ ফলাফলেও সমতা আনার লক্ষ্য থাকতে হবে। আর তখনই সাধারণ ভাবে ফলাফল এবং বিশেষ ভাবে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ফলাফল মাপা সম্ভব হবে।
লিঙ্গবৈষম্য দূর করতে সমস্ত সামাজিক পরিকল্পনা এবং প্রকল্প লিঙ্গভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে হবে। নারীদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে হলে সব কর্মসূচিতে বাড়ি, স্কুল, কর্মক্ষেত্র, আইন এবং রাজনীতির মতো সামাজিক প্রেক্ষিতটি বিবেচনায় রাখতে হবে। ভারতে লিঙ্গবৈষম্য স্বাভাবিক করার ব্যাপারটি চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিতে হবে। বৈষম্যের প্রাথমিক প্রতিরোধের লক্ষ্য নিয়ে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষিতে পরিবর্তন আনতে হলে জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারটিকেই কেন্দ্রবিন্দু করা উচিত। এর পাশাপাশি চলবে চিকিৎসা ব্যবস্থার মাধ্যমে হস্তক্ষেপ। অদূর ভবিষ্যতে ভারতের নারীরা যাতে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সমানাধিকার পায় এবং সমান সামাজিক মর্যাদা পায় তার জন্য প্রয়োজন প্রকৃত লিঙ্গভিত্তিক ন্যায়বিচার।
সুত্রঃ দি হিন্দু
সর্বশেষ সংশোধন করা : 12/25/2019
কী ভাবে সমাধান করা যায় এই রক্তাল্পতা সমস্যার তা এখ...