নিম্নলিখিত কারণে এক ব্যক্তির এইচআইভি সংক্রমণ হতে পারে ---
যদি কেউ এইচআইভি সংক্রামিত ব্যক্তির সঙ্গে অসুরক্ষিত যৌনসংসর্গে লিপ্ত হন তবে সেই পুরুষ/মহিলাটির সংক্রমণ হতে পারে।
যথাযথ ভাবে পরিশোধিত নয় এমন ছুঁচ বা হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ব্যবহার যদি শল্য চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, যেমন ছুঁচ বা ছুরি বা অন্য কিছু, সংক্রামিত ব্যক্তির দেহে ব্যবহৃত হয় এবং যথাযথ পরিশোধন না করেই সুস্থ ব্যক্তির শরীরে সেগুলি প্রয়োগ করা হয়, তবে তার মাধ্যমে সংক্রমণ হতে পারে।
সুস্থ মানুষের শরীরে এইচআইভি সংক্রামিত রক্ত দিলে পুরুষ/মহিলাটি সংক্রামিত হতে পারেন।
এক জন এইচআইভি পজিটিভ মার গর্ভাবস্থাতেই শিশুর সংক্রমণ হতে পারে। বুকের দুধ থেকে এই সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এইচআইভি ও অন্যান্য যৌন সংক্রমণ একে অন্যকে প্রভাবিত করে। এইচআইভি সংক্রামিত ব্যক্তির শরীরে অন্যান্য যৌন-সংক্রমণ থাকলে এই ভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
এ ভাবে সংক্রামিত হতে গেলে পেরেকে খুব বেশি মাত্রায় এইচআইভি ভাইরাস সংক্রামিত রক্ত থাকা দরকার।
যদি কোনও যন্ত্রপাতিতে এক জনের শরীরের রক্ত লেগে থাকে এবং সেটি ভাল করে পরিশোধিত না করেই অন্য কারও শরীরে ব্যবহার করা হয়, তবে এই সংক্রমণ হতে পারে। যারা শরীরে কোনও স্থানে ফুটো করেন বা উল্কি আঁকেন, তাঁদের কিছু সাবধানতা মেনে চলতে হবে। এর ফলে বেশ কয়েকটি রক্তবাহিত সংক্রমণ যেমন, এইচআইভি ও হেপাটাইটিস প্রতিরোধ করা যায়।
এইআইভি সংক্রামিত রোগীর সংস্পর্শে এলে চিকিৎসাকর্মীদের সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা খুবই কম, বিশেষত যদি স্বাস্থ্য সাবধানতাগুলি অবলম্বন করা হয়। এইচআইভি সংক্রামিত রক্ত লাগা ছুঁচ বা ধারালো জিনিসে আঘাত লাগলে প্রধানত সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
হাসপাতাল বা অন্য চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে এইচআইভি সংক্রমণের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। চিকিৎসা করার সময় প্রত্যেক চিকিৎসককে অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলি মেনে চলতে হবে।
গবেষণায় দেখা গেছে এ ভাবে সংক্রমণের সম্ভাবনা খুবই কম। হাসপাতালে চোখে রক্তের ছিটে এসে সংক্রমণ হয়েছে, এ রকম মানুষের সংখ্যা খুবই কম।
এ ভাবে সংক্রমণ হওয়া খুবই অস্বাভাবিক। দু’-একটি ঘটনায় কামড়ের ফলে সংক্রমণ হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সে ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে রক্তপাতের সঙ্গে সঙ্গে তন্তু সাংঘাতিক ভাবে ছেঁড়া ও ক্ষতিগ্রস্ত ছিল।
এইচআইভি আছে এমন ব্যক্তির সঙ্গে একই ইঞ্জেকশন দেওয়ার সরঞ্জাম ব্যবহার করলে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। যদি ছুঁচের মধ্যে এইআইভি রক্ত থেকে গিয়ে থাকে, ও পরে অন্য কোনও ব্যক্তি সেই সিরিঞ্জ বা ছুঁচের সাহয্যে ইঞ্জেকশন নেন, তবে সেই রক্ত দ্বিতীয় ব্যক্তির শরীরের রক্তে মিশে যেতে পারে। এগুলি পরিশোধন করলেও এইচআইভি সংক্রমণের সম্ভাবনা কিছুটা কমে কিন্তু চলে যায় না।
এক জন এইচআইভি সংক্রামিত মা-র থেকে গর্ভাবস্থায় শিশুর দেহে এইচআইভি সংক্রমণ হতে পারে। এমনকী স্তন্যপান করানোর সময়ও শিশুটি সংক্রামিত হতে পারে। যদি কোনও মহিলা জানেন যে তাঁর এইচআইভি সংক্রমণ হয়েছে, তবে বিশেষ কিছু ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করালে শিশুর সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। এ ছাড়া সিজারিয়ান সেকশন করে প্রসব করানো ও স্তন্যপান না করানো উচিত। কারণ বুকের দুধেও এইচআইভি পাওয়া গেছে।
সংক্রামিত রক্ত দেওয়া বা নেওয়ার ফলে এইচআইভি সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। যদিও রক্ত দেওয়া বা নেওয়ার আগে সব রক্তই এইচআইভি পজিটিভ কিনা পরীক্ষা করে নেওয়া হয়। তাই এ ক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি বিরল।
যদিও শরীরের বাইরে এইচআইভি কিছুক্ষণ বেঁচে থাকে, তবে বাইরে থেকে ছলকে পড়া রক্ত, বীর্য বা দেহনিঃসৃত অন্যান্য তরলের সংস্পর্শে এই সংক্রমণ হয়েছে বলে জানা যায় না। কেউ অল্প পরিমাণ সংক্রামিত রক্তের সংস্পর্শে এলেই যে সংক্রমিত হবে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। বিজ্ঞানীরা একমত যে, বাইরের পরিবেশে এইচআইভি বেশিক্ষণ বাঁচে না। কাজেই বাইরে থেকে এর সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রায় শূন্য।
গবেষণায় দেখা গেছে যে সুন্নত হয়েছে এমন মানুষের যৌনসংসর্গের মাধ্যমে এইচআইভি সংক্রামিত হবার সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ কম। এর কারণ হল, লিঙ্গত্বকের ভেতরের আবরণে এইচআইভি সংক্রমণ হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু, তার মানে এই নয় যে সুন্নত করালে এই সংক্রমণ হবে না, এটি করালে ঝুঁকি কিছুটা কমে যায় মাত্র। সুন্নত হয়েছে এমন ব্যক্তি কিন্তু সুন্নত হয়নি এমন ব্যক্তির মতোই কিন্তু অন্যকে সংক্রামিত করতে পারেন।
যদি আপনার প্রতিষেধক চিকিৎসা চলতে থাকে এবং পরীক্ষায় দেখা যায় আপনার শরীরের সংক্রমণের মাত্রা খুবই কম, তবু এই ভাইরাস পুরোপুরি নির্মূল হয়ে যায় না এবং অন্যকে সংক্রামিত করার সম্ভাবনা রয়েই যায়।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 11/11/2019