অসমীয়া   বাংলা   बोड़ो   डोगरी   ગુજરાતી   ಕನ್ನಡ   كأشُر   कोंकणी   संथाली   মনিপুরি   नेपाली   ଓରିୟା   ਪੰਜਾਬੀ   संस्कृत   தமிழ்  తెలుగు   ردو

বয়ঃসন্ধি

বয়ঃসন্ধি (Puberty) একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি শিশুর শরীর একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে রূপান্তরিত হয় এবং প্রজননের সক্ষমতা লাভ করে। মস্তিষ্ক থেকে গোনাডে (ডিম্বাশয় ও শুক্রাশয়) হরমোন সংকেত যাবার মাধ্যমে এটির সূচনা ঘটে। ফলশ্রুতিতে গোনাড বিভিন্ন ধরনের হরমোন উৎপাদন শুরু করে যার ফলে মস্তিষ্ক, অস্থি, পেশি, ত্বক, স্তন, এবং জনন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহের বৃদ্ধি শুরু হয়। বয়ঃসন্ধির মধ্যভাগে এই বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় এবং বয়ঃসন্ধি শেষ হবার মাধ্যমে এই বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হয়। বয়ঃসন্ধি শুরুর পূর্বে ছেলে ও মেয়ের মধ্যে পার্থক্য প্রায় সম্পূর্ণটাই বলতে গেলে শুধু যৌনাঙ্গের ভেতর সীমাবদ্ধ থাকে। বয়ঃসন্ধির সময়, শরীরের গঠনের আকার-আকৃতি, গুরুত্ব ও কাজে প্রধান পার্থক্যগুলো প্রতীয়মান হয়। এদের মধ্যে খুবই অবশ্যম্ভাবী পরিবর্তনগুলোকে সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্য বলা হয়।

বয়:সন্ধি কেন হয়?

নারী ও পুরুষ উভয়ের জীবনেই বিভিন্ন সময়ে যৌবনের সঞ্চার ঘটে থাকে। তবে যৌবন আগমন উভয়ের ঠিক একই সময়ে ঘটে না- বিভিন্ন সময়ে ঘটে। নারীর যৌবন আগমন ঘটে আগে- পুরুষের ঘটে কিছু পারে। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে পুরুষের যৌবন আগমন ঘটে আঠারো থেকে কুড়ি বছরের মধ্যে। শীতপ্রধান দেশে- অর্থাৎ ভারতীয় উপমহাদেশের বহির্দেশে যুবকদের যৌবন আগমন ঘটে বাইশ থেকে পঁচিশ বছর বয়সে। নারীর যৌবন আগমন ঘটে গ্রীষ্মপ্রধান দেশে চৌদ্দ থেকে ষোল বছর বয়সে- আর শীতপ্রধান দেশে আঠারো থেকে কুড়ির মধ্যে। আর নারী ও পুরুষের যৌবনের আগমনই হলো বয়:সন্ধিকাল।

আক্ষরিক অর্থে বয়ঃসন্ধি বলতে বোঝায় যৌন পরিপক্কতার জন্য শরীরে যেসকল পরিবর্তন আসে সেটাকে। বয়ঃসন্ধিকালের উন্নতিতে মনোসামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা এটার অন্তর্ভুক্ত নয়। বয়ঃসন্ধিকাল হচ্ছে শৈশব ও সাবালকত্বের মধ্যবর্তী একটি মানসিক ও সামাজিক ক্রান্তিকাল। বয়ঃসন্ধিকাল, বয়ঃসন্ধির সময় দ্বারা প্রভাবিত হয় বটে কিন্তু এটা আলোচনার সীমারেখা যথাযথভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায় না। সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালের ব্যাপারে আলোচনার ক্ষেত্রে কৈশোর সময়কার শারীরিক পরিবর্তনের চেয়ে সেই সময়ের মনোসামাজিক ও সাংস্কৃতিক এবং আচার-আচরণের বিকাশকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়।

ছেলে মেয়ের বয়ঃসন্ধির মধ্যে পার্থক্য

ছেলের ও মেয়ের বয়ঃসন্ধির মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্যগুলোর মধ্যে দুটির শুরু হয় বয়ঃসন্ধি শুরুর সাথেই। এবং এতে প্রধান প্রধান যৌন স্টেরয়েডগুলো সংশ্লিষ্ট। শিশুর ও কিশোর-কিশোরীর দৈহিক বৃদ্ধির একটি তূলনামূলক রেখাচিত্র। বয়ঃসন্ধি সবুজ রংয়ে ডানপাশে নির্দেশিত হয়েছে।

1. ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন – FSH
2. ল্যুটিনাইজিং হরমোন – LH
3. প্রজেস্টেরন
4. ইস্ট্রেজেন
5. হাইপোথ্যালামাস
6. পিটুইটারি গ্রন্থি
7. ডিম্বাশয়
8. গর্ভধারণ – hCG (মানুষের কোরিওনিক গোনাড্রোট্রোপিন)
9. টেস্টেস্টেরন
10. শুক্রাশয়
11. ইনসেনটিভ্‌স
12. প্রোল্যাকটিন – PRL

যদিও বয়ঃসন্ধি শুরুর সাধারণ বয়সসীমার মধ্যে ব্যাপক তারতম্য রয়েছে, কিন্তু গড়পড়তা মেয়েদের বয়ঃসন্ধির প্রক্রিয়া ছেলেদের ১-২ বছর আগে শুরু হয় (গড় বয়স: মেয়েদের ৯-১৪ বছর, এবং ছেলেদের ১০-১৭ বছর) এবং অল্পসময়ের মাঝেই সম্পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়। সাধারণত বয়ঃসন্ধির প্রথম লক্ষণ দেখা দেয়ার চার বছরের মধ্যেই মেয়েরা তাদের উচ্চতা ও প্রজনন পরিপূর্ণতা লাভ করে। এক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে ছেলেদের বৃদ্ধিটা হয় একটু ধীরে, কিন্তু সাধারণত বয়ঃসন্ধির পরিবর্তন শুরুর ছয় বছরের মধ্যে তারাও পরিপূর্ণতা লাভ করে।

পুরুষের ক্ষেত্রে, টেস্টোস্টেরনের অ্যান্ড্রোজেন হলো প্রধান যৌন স্টেরয়েড। অল্পসময়ের মধ্যেই টেস্টোস্টেরনের প্রভাবে সকল পুরুষালি বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটে। পুরুষে টেস্টোস্টেরনের রাসায়নিক রূপান্তরের ফলে অন্যতম যে স্টেরয়েড উৎপন্ন হয় তা হলো এস্ট্রাডিওল। যদিও এটার সীমাবৃদ্ধি ঘটে মেয়েদের চেয়ে অনেক ধীরে ও দেরিতে। ছেলেদের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় মেয়েদের তুলনায় আরো পরে, অনেক ধীরে; এবং এপিফিসেস জোড়া না লাগার আগ পর্যন্ত এই বৃদ্ধি বিদ্যমান থাকে। বয়ঃসন্ধি শুরু হবার আগে উচ্চতায় ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় ২ সে.মি. খাটো থাকলেও একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার তুলনায় গড়ে ১৩ সে.মি. (৫.২ ইঞ্চি) খাটো।

মেয়েদের ক্ষেত্রে বৃদ্ধিটা নির্ধারিত হয় এস্ট্রাডিওল ও ইস্ট্রোজেন হরমোন দ্বারা। যেখানে এস্ট্রাডিওল স্তন ও জরায়ুর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটা প্রধান হরমোন যা বয়ঃসন্ধিকালীন বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং এপিফিসিয়াল পরিপক্কতা ঘটায় এবং সম্পূর্ণ করে। ছেলেদের চেয়ে এস্ট্রাডিওল সীমার বৃদ্ধি মেয়েদের বেশি ও আগে হয়।

বয়ঃসন্ধির প্রারম্ভ

বয়ঃসন্ধির শুরু হয় GnRH (জিএনআরএইচ)-এর উচ্চ স্পন্দনের মাধ্যমে, যা যৌন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায়। জিএনআরএইচ বৃদ্ধির কারণ ধারবাহিকভাবে চলতে থাকে। বয়ঃসন্ধি সাধারণত পুরুষের ৫৫ কে.জি. এবং মেয়েদের ৪৭ কে.জি. ওজনে শুরু হয়। শরীরের ওজনের এই পার্থক্যের কারণ জিএনআরএইচ বৃদ্ধি, যা লেপ্টিনের (এক প্রকার প্রোটিন হরমোন) চাহিদা বাড়িয়ে দেয়। এটা জানা যে হাইপোথ্যালামাসে লেপ্টিন গ্রহীতা হিসেবে কাজ করে, যেগুলো জিএনআরএইচ সংশ্লেষ করে। দেখা যায় যাদের লেপ্টিন উদ্দীপ্ত হতে দেরি হয় তাদের বয়ঃসন্ধি শুরু হতেও দেরি হয়। লেপ্টিনের পরিবর্তন বয়ঃসন্ধির প্রারম্ভেই শুরু হয়, এবং প্রাপ্তবয়স্কতাপ্রাপ্তির সাথে সাথে শেষ হয়। যদিও বয়ঃসন্ধির শুরুর সময় বংশানুক্রমিক কারণেও পরিবর্তিত হতে পারে।

ছেলে মেয়ের শারীরিক পরিবর্তনের লক্ষণসমূহ

ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে সর্বপ্রথম মেয়েদের যৌবন আগমন ঘটে। তবে একটু দেরীতে ছেলেদের যৌবন আগমন ঘটে। নিম্নে ছেলে ও মেয়েদের শারীরিক পরিবর্তনের লক্ষণসমূহ আলোচনা করা হলো :

  • ছেলেদের ক্ষেত্রে শারীরিক পরিবর্তন:

কষ্ঠস্বর ভারী হয়, গোঁফের মধ্যে রেখা স্পষ্ট হয়ে ওঠে, বগলে ও লজ্জাস্থানে লোম দেখা যায়, তাদের দেহের মধ্যে বীর্য্ বা শক্তি সৃষ্টি হয়, মানসিক পরিবর্তন ঘটে।

  • শুক্রাশয়ের আকার, কাজ, এবং সক্ষমতা

ছেলেদের ক্ষেত্রে শুক্রাশয়ের বৃদ্ধি হচ্ছে শারীরিকভাবে প্রতীয়মান হওয়া বয়ঃসন্ধির প্রথম লক্ষণ। একে গোন্যাডার্কি (Gonadarche) বলে। এক বছর বয়স থেকে বয়ঃসন্ধির প্রারম্ভ পর্যন্ত ছেলেদের শুক্রাশয়ের বৃদ্ধি হয় খুবই কম। গড় হিসাব করলে আয়তন হয় ২-৩ সি.সি. (কিউবিক সেন্টিমিটার/ঘন সেন্টিমিটার) এবং দৈর্ঘ্য হয় ১.৫-২ সে.মি.। বয়ঃসন্ধি শুরুর মাধ্যমে শুক্রাশয়ের বৃদ্ধি শুরু হয়, এবং ছয় বছর পরে সর্বোচ্চ পরিপক্ক আকারপ্রাপ্ত হয়।যখন গড় আয়তন হয় ১৮-২০ সি.সি., যদিও সাধারণ জনসংখ্যার মধ্যে এ আয়তনের ব্যাপক পার্থক্য দেখা যায়।

শুক্রাশয়ের দুটি প্রাথমিক কাজ রয়েছে: প্রথমতঃ হরমোন উৎপাদন এবং দ্বিতীয়তঃ শুক্রাণু উৎপাদন। লেডিগ কোষ, টেস্টোস্টেরন (যা নিচে আলোচনা করা হয়েছে) উৎপাদন করে, যা পুরুষের যৌন পরিপক্কতার বেশির ভাগ পরিবর্তনের কারণ। এছাড়া যৌনকামনা নিয়ন্ত্রণ করে। পুরুষের শুক্রাণু উৎপাদন, এবং যৌন-উর্বরতার বিকাশের সময়কাল খুব একটা সুনির্দিষ্ট নয়। বেশিরভাগ ছেলের বয়ঃসন্ধি পরিবর্তন শুরু হওয়ার পরবর্তী বছরেই সকালের প্রস্রাবে শুক্রাণু উপস্থিতি দেখতে পাওয়া যেতে পারে (এবং কারো ক্ষেত্রে আরো আগেই)। ছেলেদের মধ্যে ১৩ বছর বয়সেই প্রচ্ছন্ন উর্বরতা দেখতে পাওয়া যায়, কিন্তু ১৪-১৬ বছরের আগে পুরোপুরি উর্বরতা আসে না। যদিও, কারো ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় অতি দ্রুত, মাত্র এক বছর পরেই।

  • শ্রোণীদেশে লোম (পিউবিক হেয়ার)

শ্রোণীদেশীয় লোম সাধারণত যৌনাঙ্গ বৃদ্ধি শুরু হওয়ার কিছুদিন পরেই দেখা যায়। ছেলেদের পিউবিক হেয়ার সাধারণত সর্বপ্রথম দেখা যায় শিশ্নের গোড়ার দিকে। প্রথম কিছু চুলকে বলা হয় দ্বিতীয় পর্ব। তৃতীয় পর্ব শুরু হয় পরবর্তী ৬-১২ মাসের মধ্যে, যখন চুলের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। চতুর্থ পর্বে, পিউবিক হেয়ার ঘন হয়ে “পিউবিক ট্রায়াঙ্গল” সম্পূর্ণ করে ফেলে। পঞ্চম পর্বে, পিউবিক হেয়ার নিচের দিকে উরুতে এবং উপরের দিকে নাভী পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, যাকে তলপেটের চুল বা অ্যাবডোমিনাল হেয়ার বলা হয়।

  • শরীর মুখের লোম

পিউবিক হেয়ার দেখা দেয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই অ্যান্ড্রোজেনের প্রভাবে শরীরের অন্যান্য অংশে ঘন চুলের অস্তিত্ব দেখা যায়। এদেরকে অ্যান্ড্রোজেনিক চুল বলে। চুলগুলো পর্যায়ক্রমে সারা শরীরে আবির্ভূত হয়। এচুল আবির্ভাবের ক্রমটি হলো: বগলের চুল, পায়ুদেশের চুল, গোঁফ, সাইডবার্ন চুল, অ্যারিওলার পার্শ্বদেশের চুল, এবং দাড়ি। এছাড়া বাহু, পা, বুক, তলপেট, এবং পেছনের চুল আরো বেশি ঘন হয়ে ওঠে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের শরীরের একটা বড়ো অংশ জুড়েই চুলের অস্তিত্ব দেখা যায়। তবে এ চুলের বৃদ্ধিকাল এবং পরিমাণ প্রজাতিভেদে বিভিন্নরকম হতে পারে। বয়ঃসন্ধির সময় পুরুষের ফেসিয়াল হেয়ার (মুখের চুল) সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ক্রমে একে একে পরিলক্ষিত হয়। প্রথমে ফেসিয়াল হেয়ার দেখা যায় উপরের ঠোঁটের দুই কোণায়; সাধারণত ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সে। আস্তে আস্তে এই চুল সম্পূর্ণ উপরের ঠোঁটে বিস্তৃতি লাভ করে এবং গোঁফ-এ পরিণত হয়।

  • মেয়েদের ক্ষেত্রে শারীরিক পরিবর্তন:

দেহে নারী-সুলভ কমনীয়তা ফুটে ওঠে, হাত, পা, জঙ্ঘন, নিতম্ব ইত্যাদিতে মেদ জমে ওঠে, স্তন উন্নত হয়ে ওঠে, মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়, কণ্ঠস্বর খুবই মিষ্টি হয়ে ওঠে, ছেলেদের সাথে যৌন মিলনের বাসনা খুব তীব্র হয়ে ওঠে, প্রায় আঠাশ দিন পর পর মাসিক বা ঋতুস্রাব হয়ে থাকে।

  • স্তনবৃদ্ধি

মেয়েদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধির প্রথম লক্ষণ হিসেবে এক বা উভয় স্তনের অ্যারিওলার (Areola) নিচে সাধারণত একটা শক্ত ও কোমল পিণ্ড দেখা যায়। এ ব্যাপারটা গড়ে ১০.৫ বছর বয়সে ঘটে। এটাকে বলা হয় থেলারশে। এটা হচ্ছে স্তনবৃদ্ধির দ্বিতীয় পর্ব যা বয়ঃসন্ধির ট্যানার পর্ব নামেও পরিচিত (বয়ঃসন্ধি পূর্ববর্তী, স্তন সমান থাকাকালীন সময়টা হচ্ছে প্রথম পর্ব)। এরপর ৬-১২ মাসের মধ্যে স্তন উভয় পাশেই ফুলে ও নরম হয়ে ওঠে। তখন অ্যারিওলার প্রান্ত ছাড়িয়ে স্তনের বর্ধিত অংশ দেখা ও অনুভব করা যায়। এটা হচ্ছে স্তনবৃদ্ধির তৃতীয় পর্ব। পরবর্তী ১২ মাসে (চতুর্থ পর্বে) স্তন পরিণত আকার ও আকৃতি পেতে শুরু করে। তখন অ্যারিওলা ও প্যাপিলা একত্রে মধ্যম আকৃতি বিশিষ্ট একটি উঁচু অংশের (Mound) সৃষ্টি করে। (পঞ্চম পর্বে) বেশিরভাগ তরুণীর ক্ষেত্রে এই এই উঁচু অংশটি পরিণত স্তনের গোড়ার দিকের প্রান্তরেখা বা দেহরেখার সাথে মিলিয়ে যায়। অবশ্য এক্ষেত্রে এটা বলা আবশ্যক যে, পরিণত স্তনের আকার ও আকৃতির মধ্যে অনেক পার্থক্য বিদ্যমান তাই চতুর্থ ও পঞ্চম পর্ব সবসময় পৃথকভাবে নির্ণয় করা নাও যেতে পারে।

  • শ্রোণীদেশের কেশ (পিউবিক হেয়ার)

শ্রোণীদেশীয় কেশ বয়ঃসন্ধিতে উপনীত হওয়ার দ্বিতীয় সুস্পষ্ট লক্ষণ, যা থেলারশে শুরু হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই দেখা যায়। এটাকে পিউবার্কি (Pubarche) বলা হয় এবং প্রথমে সাধারণত যোনীর লেবিয়ার আশেপাশেই এই কেশের অস্তিত্ব ফুটে ওঠে। প্রথম উদ্ভিন্ন কয়েকটি কেশ দ্বিতীয় ট্যানার পর্ব হিসেবে অভিহিত করা হয়। ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যেই এটি তৃতীয় পর্বে পৌঁছায়। তখন কেশরাজি পরিমাণে অনেক বৃদ্ধি পায় এবং শ্রোণীমণ্ডপের ওপরেও দেখা যায়। চতুর্থ পর্বে শ্রোণীদেশীয় কেশ খুব ঘনভাবে “ত্রিকোণ শ্রোণীমণ্ডপ‌” ছেয়ে ফেলে। পঞ্চম পর্বে কেশের সীমা নিচের দিকে উরুতে এবং কখনো কখনো ওপরের দিকে অ্যাবডোমিনাল হেয়ার হিসেবে তলপেটে নাভি পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ১৫ শতাংশ মেয়ের স্তন বৃদ্ধির আগেই শ্রোণীদেশীয় কেশরাজির আবির্ভাব পরিলক্ষিত হয়।

  • যোনি, জরায়ু এবং ডিম্বাশয়

ইস্ট্রোজেন ক্ষরণ বৃদ্ধির ফলশ্রুতিতে যোনির মিউকোসাল পৃষ্ঠের পরিবর্তন হতে থাকে। বয়ঃসন্ধি পূর্ববর্তী উজ্জল লাল ভ্যাজাইনাল মিউকোসার তুলনায় এটি মোটা এবং এর রঙ অনুজ্জল গোলাপী হতে থাকে। ইস্ট্রোজেনের প্রভাবে সাধারণত সাদা রঙের তরল পদার্থও ক্ষরিত হয় (যা সাদাস্রাব হিসেবে পরিচিত)। থেলারশে পরবর্তী দুই বছরে জরায়ু এবং ডিম্বাশয় আকারে বৃদ্ধি পায় এবং ডিম্বাশয়ের ফলিকলগুলো বড়ো আকৃতিপ্রাপ্ত হয়।ডিম্বাশয় সাধারণত ছোটো ফলিকুলার সিস্ট দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে যা আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে বোঝা যায়।

  • ঋতুস্রাব

প্রথম ঋতুস্রাবকে মেনারশে বলে এবং সাধারণত থেলারশে শুরু হওয়ার দুই বছর পরে এটা শুরু হয়। আমেরিকান মেয়েদের মধ্যে মেনারশে শুরু হওয়ার গড় বয়স ১১.৭৫ বছর। প্রথম দুই বছর মেনসেস (মাসিক রক্তস্রাব বা মাসিক) অনিয়মিত হয় অর্থাৎ প্রতি মাসে হয় না। উর্বরতার জন্য ডিম্বক্ষরণ (Ovaluation) জরুরি, কিন্তু প্রথম দিকের মাসিকগুলোতে ডিম্বক্ষরণ ঘটতেও পারে আবার নাও ঘটতে পারে। প্রথম ঋতুস্রাব হওয়ার পরবর্তী প্রথম বছরে (প্রায় ১৩ বছর বয়সে) ৮০% মেয়ের ঋতুস্রাবে একবার ডিম্বক্ষরণ ঘটে, ৫০% মেয়ের তৃতীয় বছরে (প্রায় ১৫ বছর বয়সে) এবং ১০% মেয়ের ষষ্ঠ বছরে (প্রায় ১৮ বছর বয়সে) একবার ডিম্বক্ষরণ ঘটে।

  • দেহের আকার মেদ

মাসিকের সময়, ইস্ট্রোজেন হরমোনের সীমা বৃদ্ধির ফলশ্রুতিতে পেলভিসের অর্ধনিম্নাংশ বা হিপ প্রশস্ত হতে শুরু করে। এর ফলে জন্ম নালি (Birth Canal) আরো বড়ো হয়। মেদ কলার বৃদ্ধি ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের শরীরের বেশি অংশ জুড়ে ঘটে। সাধারণত মেয়েদের শরীরের যেসকল স্থানে মেদ কলার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় তার মধ্যে আছে: দুই স্তন, হিপ, নিতম্ব, উরু, উপরের বাহু, এবং পিউবিস। দশ বছর বয়সে, একটি মেয়ের শরীরে একই বয়সের একটি ছেলের তুলনায় গড় চর্বির পরিমাণ থাকে মাত্র ৫% বেশি, কিন্তু বয়ঃসন্ধির শেষে এসে এই পার্থক্য হয় ৫০%-এর কাছাকাছি।

  • নিউরোহরমোনাল প্রক্রিয়া

হাইপোথ্যালামাস, পিটুইটারি, গোনাড, ও অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি নিয়ে অন্তক্ষরা প্রজননতন্ত্র গঠিত। এছাড়া এর সাথে শরীরের আরো অনেক তন্ত্র জড়িত। সত্যিকারের বয়ঃসন্ধিকে ইংরেজিতে সেন্ট্রাল পিউবার্টি বা কেন্দ্রীয় বয়ঃসন্ধি হিসেবে অভিহিত করা হয়, কারণ কেন্দ্রীয় স্নায়ু তন্ত্রের একটি প্রক্রিয়া হিসেবে এই পরিবর্তন শুরু হয়। হরমোনগত বয়ঃসন্ধির সাধারণ বর্ণনা নিচে দেওয়া হলো:

মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশ জিএনআরএইচ হরমোন ক্ষরণ শুরু করে, পিটুইটারি গ্রন্থির বাহিরের অংশ কাজ করা শুরু করে এবং এলএইচ ও এফএসএইচ হরমোন ক্ষরণ হওয়া শুরু হয়, ও রক্তের মাধ্যমে তা প্রবাহিত হয়, এলএইচ ও এফএসএইচ হরমোনের প্রভাবে যথাক্রমে ডিম্বাশয় ও শুক্রাশয় কাজ করা শুরু করে। সেই সাথে এরা যথাক্রমে এস্ট্রাডিওল ও টেস্টোস্টেরন উৎপন্ন করা শুরু করে, শরীরে এস্ট্রাডিওল ও টেস্টোস্টেরনের বৃদ্ধি ঘটায় মেয়ে ও ছেলের মাঝে বয়ঃসন্ধিকালীন বৈশিষ্টগুলো প্রকাশ পেতে থাকে।

শরীরে শুরু হওয়া নিউরোহরমোনাল প্রক্রিয়ার এই পরিবর্তন দেখতে ১-২ বছর সময় লাগতে পারে।

মাসিক ঋতুস্রাব কী?

নারীর যৌবন আগমনর থেকে যৌবনের সীমা পর্যন্ত এই সময়ে প্রতি আঠাশ দিন অন্তর নারীর যোনি থেকে কিছুটা রক্ত ও শ্লেষ্মা বেরিয়ে আসে। একই বলা হয় মাসিক ঋতুস্রাব। এ ঋতুস্রাব নারীর যৌবন আগমন নিশ্চিত করে। প্রাচীন মতান্তরে, নারীর মাসিক ঋতুস্রাবের মাধ্যমেই তার বিয়ের সময় শুরু হয়। কিন্তু আজকাল এ বিধান মানা হয় না- কারণ বাংলাদেশ সরকার আঠারো বছরের আগে কোনও নারীর বিবাহ নিষিদ্ধ করেছেন।

  • মাসিক ঋতুস্রাবের সময় করণীয়

১.ঋতুর পরই নারীর জরায়ু থাকে নরম ও সংবেদনশীল। ঐ সময় কোন ব্যায়াম, দৌড় ঝাঁপ, ছুটাছুটি, লাফালাফি করা উচিত নয়।
২.ঋতুর সময় নিয়মিতভাবে দৈহিক বিশ্রাম অবশ্য কর্তব্য।
৩.ঋতুর সময় ঋতুস্রাব মুছে ফেলার জন্যে বা রক্ত শুষে নেবার জন্যে অনেকে অত্যন্ত ময়লা কাপড়ের টুকরো ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে এটি যে কত বড় ভুল জিনিস এবং এর জন্যে যে কতটা অনিষ্ট হতে পারে এটি তারা গভীরভাবে দেখবার অবসর পান না।  তাই এ সময়ে স্যানিটারী ন্যাপকিন বা টেম্পুন ব্যবহার করা উত্তম।
৪.ঋতুর সময় কখনও শরীরে ঠান্ডা লাগান উচিত নয়-রাত্রি জাগাও উচিত নয়। ঐ সময় শরীর দুর্বল থাকে। সহজেই ঠাণ্ডা লাগতে পারে। রাত জাগলেও শরীরের ক্ষতি হতে পারে।
৫.ঋতুস্রাব শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোন পুরুষের সঙ্গে যৌন মিলনে ব্রতী হওয়া উচিত নয়। তাতে জরায়ু কোন না কোন ভাবে আহত হতে পারে। তার ফলে নানা ক্ষতি হতে পারে। তাছাড়া ঋতুস্রাবের সময় সঙ্গম ইসলামে নিষিদ্ব।
৬.ঋতু কালীন সময়ে চুলে তেল দেওয়া, গন্ধ দ্রব্য বা সুগন্ধি বস্তু ব্যবহার করা উচিত নয়।

যৌবন সময় কাল

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের তাপমাত্রা বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে।সে অনুযায়ী যৌবন আগমন ও নিরোধনের বয়স তালিকাটি দেয়া হলো :

যৌবন আগমন ও নিরোধন

ছেলে

মেয়ে

শীতপ্রধান দেশে যৌবন আগমন

২২-২৫ বছর

১৮-২০ বছর

শীতপ্রধান দেশে যৌবন নিরোধন

৬৫-৭০ বছর

৫০-৫৫ বছর

গ্রীষ্মপ্রধান দেশে যৌবন আগমন

১৮-২০ বছর

১৪-১৬ বছর

গ্রীষ্মপ্রধান দেশে যৌবন নিরোধন

৫৫-৬০ বছর

৪৫-৫০ বছর

রূপান্তরের চ্যালেঞ্জ

সাধারণত ১০ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তনগুলো দেখা দেয়। ধাপে ধাপে একটি শিশু ক্রমশ পূর্ণবয়স্ক মানুষে পরিণত হয়ে উঠতে থাকে। শারীরিক, আচরণগত এবং জীবনচরজাগত নানা পরিবর্তন দেখা দেয়। এবং এই পরিবর্তন এক এক জনের ক্ষেত্রে এক এক সময়ে আসে।

  • বয়ঃসন্ধিতে নিম্নলিখিত পরিবর্তনগুলি লক্ষ করা যায়-
  • হাত, হাতের তালু, পা, পায়ের পাতা, পশ্চাদ্দেশ ও বুক বড় হয়৷ এই সময় শরীর থেকে নিঃসৃত কয়েক ধরনের হরমোন শরীরকে বলে দেয় কী ভাবে বাড়তে ও বদলাতে হবে৷
  • যৌনাঙ্গগুলি বড় হতে শুরু করে এবং সেগুলি থেকে হরমোন নিঃসরণ শুরু হয়৷
  • ত্বক আরও বেশি তৈলাক্ত হয়ে ওঠে৷
  • বগল, বাহু, পা এবং যৌনাঙ্গে লোম দেখা দেয়৷

বয়ঃসন্ধিতে শরীরের যত্ন

বয়ঃসন্ধিকালে শরীরের যত্ন নেওয়ার কয়েকটি সাধারণ পদ্ধতি-

  • বয়ঃসন্ধির সময় ঘাম বেশি হয়। স্নান করলে শরীর তাজা ও স্নিগ্ধ থাকে।
  • দাঁতের ক্ষয় ও দুর্গন্ধ এড়ানোর জন্য দিনে অন্তত দু’বার দাঁত মাজতে হবে৷
  • বয়ঃসন্ধিতে তৈল-গ্রন্থিগুলি বেশি সেবাম (তৈলাক্ত পদার্থ) নিঃসরণ করে, তাই মুখে ব্রণ হয়৷ বয়ঃসন্ধিতে ব্রণ হওয়া স্বাভাবিক, এদের একেবারে নির্মূল করা সম্ভব নয়৷ ত্বক পরিষ্কার রাখাই সবচেয়ে ভাল উপায়৷
  • এই সময় পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুব জরুরি৷ বেশি মিষ্টি বা ভাজা খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভাল৷
  • সব সময় সদর্থক চিন্তা করতে হবে। কেননা, সুস্বাস্থ্যের জন্য সুস্থ মনও প্রয়োজন ৷

বয়ঃসন্ধিতে বাবা-মায়ের সঙ্গে পথ চলা

বয়ঃসন্ধিতে ভাবনাচিন্তায় পরিবর্তন আসে। এর ফলে বাবা-মার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। ফলে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখা উচিত, তা হল

  • নিজের পরিবার সম্পর্কে গর্ববোধ করা
  • বাবা-মায়ের বিশ্বাস ও মূল্যবোধকে সম্মান জানানো।
  • মনে রাখা দরকার মা-বাবাই সন্তানের সবচেয়ে বেশি ভালো চান।
  • সৎ হওয়া, মা-বাবার সঙ্গে খোলা মনে কথা বলা ।
  • বাবা-মায়ের যত্ন নেওয়া, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।

বয়ঃসন্ধিতে স্বাস্থ্যসমস্যা

 

  • মানসিক স্বাস্থ্য

শৈশবের শেষ দিকে এবং বয়ঃসন্ধির শুরুতে নানা ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যাগুলির মধ্যে রয়েছে অস্থিরতা, আচরণে গণ্ডগোল, দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা, খাওয়া-দাওয়ায় গোলমাল, যৌন আচরণে অসঙ্গতি, মাদক ব্যবহার ইত্যাদি। সমস্যা সমাধানে দক্ষতা, সামাজিক দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস এই মানসিক সমস্যাগুলিকে কিছুটা হলেও দূরে রাখতে পারে। এই ধরনের সমস্যাগুলিকে প্রথম অবস্থায় ধরে প্রয়োজন অনুযায়ী কাউন্সিলিং ও অন্যান্য মানসিক চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের দক্ষতার প্রয়োজন।

  • মাদকের ব্যবহার

আইন করে মাদকদ্রব্য যেমন, মদ, তামাকের বিক্রি সীমাবদ্ধ রেখে সুস্থ বিকাশের পরিবেশ তৈরি করা যায়। পাশাপাশি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে মাদক দ্রব্যের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলে এবং সুস্থ উপায়ে মানসিক চাপ কাটানোর ক্ষমতা বাড়িয়ে এর ব্যবহার থেকে তাদের দূরে রাখা সম্ভব।

  • অনিচ্ছাকৃত আঘাত

সড়ক দুর্ঘটনা কমানো বয়ঃসন্ধিকালীন অনিচ্ছাকৃত আঘাতের ক্ষেত্রে একটি রক্ষাকবচ। এর জন্য গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের মতো বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন।

  • হিংসাত্মক আচরণ

শিশু এবং কিশোরদের মধ্যে জীবনশৈলীর শিক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নমমূলক বিভিন্ন প্রকল্প তাদের হিংসাত্মক আচরণ কমাতে সাহায্য করে। সমস্যা সমাধানে দক্ষতা তৈরি করতে এবং অহিংস আচরণ শেখাতে মা-বাবা এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাকে সাহায্য করলে তা হিংসাত্মক আচরণ কমাতে কার্যকর হতে পারে। বয়ঃসন্ধিকালীন হিংসাত্মক আচরণ কমাতে সংবেদনশীল যত্ন ও চিকিৎসা কার্যকর হতে পারে। এর জন্য চাই সহানুভূতিশীল স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী। ধারাবাহিক সামাজিক ও মানসিক সহযোগিতা কিশোর-কিশোরীদের দীঘর্মেয়াদী মানসিক সমস্যার মোকাবিলায় এবং তাদের অপরাধপ্রবণতা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

শিশু বয়সের অপুষ্টি সারা জীবন জুড়ে নানা শারীরিক এবং সামাজিক সমস্যার কারণ হতে পারে। শিশু বয়সেই এই অপুষ্টি-সমস্যার সমাধান প্রয়োজন। শিশু বয়সেই ভালো খাদ্য পাওয়ার সুযোগ তৈরি করতে পারলে বয়ঃসন্ধিকালে তা উপকারে আসবে। কিশোরীদের প্রধান অপুষ্টিগত সমস্যা হল রক্তাল্পতা। নির্দিষ্ট বয়সের আগে গর্ভধারণ এবং অপুষ্টি প্রতিরোধ করতে পারলে বাচ্চার জন্ম দেওয়ার সময় বাচ্চা এবং মায়ের মৃত্যুর হার কমানো যেতে পারে। বয়ঃসন্ধিতে সঠিক পুষ্টি এবং নিয়মিত ব্যায়াম বড় বয়সে নানা সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করতে পারে।

  • যৌন ও প্রজনন সংক্রান্ত স্বাস্থ্য

যৌন ও প্রজননকালীন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কিশোর-কিশোরীদের সচেতনতা প্রকল্প এবং এই শিক্ষাকে জীবনে প্রয়োগ করতে আগ্রহী করে তোলার কর্মসূচি যৌথ ভাবে চালানো উচিত। পাশাপাশি এর সঙ্গে প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার সহজলভ্যতা সংক্রান্ত প্রকল্পও যুক্ত করে চালানো উচিত। কৈশোরে যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পর্যায়ে লড়াই করা উচিত। এর বিরুদ্ধে করা শাস্তির ব্যবস্থা সহ আইন পাশ, তার প্রয়োগ এবং জনমত গড়ে তুলতে সক্রিয় উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। কাজের জায়গা, স্কুল এবং সমাজের অন্যান্য স্থানে নারীর যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত।

অসময়ে গর্ভধারণ রুখতে বিয়ের ন্যূনতম বয়স সংক্রান্ত আইনগুলির প্রয়োগ প্রয়োজন। পাশাপাশি এক জন কিশোরীকে নারী হয়ে উঠতে দিতে তার পরিবার ও সমাজ যাতে তাকে যথেষ্ঠ সময় দেয় সে ব্যাপারে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।

  • এইচআইভি

বয়ঃসন্ধি যৌন আত্মপ্রকাশ সময়। এ সময়ে এইচআইভি সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রবল। কৈশোরে যৌনসংসর্গ থেকে বিরত থাকা এবং যৌন আচরণে বিলম্ব সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা এইচআইভি প্রতিরোধ কার্যক্রমের অন্যতম লক্ষ্য। এর পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত যৌন সক্রিয় কিশোর-কিশোরীরা সঙ্গীর সংখ্যা কমিয়ে এনে যাতে কন্ডোম জাতীয় সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নেয় সে ব্যাপারে প্রচার করাও এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য।

এইচআইভি আক্রান্ত কিশোর-কিশোরীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা, সহায়তা, ইতিবাচক প্রতিরোধ পরিষেবা প্রয়োজন। তরুণদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রান্ত সমস্ত রকম পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থায় আক্রান্ত তরুণ-তরুণীদের যুক্ত করা উচিত।

তথ্য সংকলন: কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট টিম

সর্বশেষ সংশোধন করা : 6/15/2020



© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.
English to Hindi Transliterate