অনগ্রসর শ্রেণির জন্য জাতীয় কমিশন (এনসিবিসি)
এনসিবিসি কী
- অনগ্রসর শ্রেণির জন্য জাতীয় কমিশন (এনসিবিসি)সুপ্রিম কোর্ট ১৬।১১।১৯৯২-এ ইন্দিরা সাহনি ও অন্যান্য বনাম ভারত সরকার মামলার রিট আবেদনে রায় দিতে গিয়ে বলে, (রিপোর্টেড এসসিসি ২১৭ সাপ্লি-৩ ১৯৯২) কমিশন বা ট্রাইবুনালের ধাঁচে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসনকে কমিশন বা ট্রাইব্যুনালের ধাঁচে একটি স্থায়ী সংগঠন তৈরি করতে হবে যারা সময়ে সময়ে অনগ্রসর শ্রেণি তালিকাভুক্তির বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখে সুপারিশ করবে বা অতিরিক্ত কাউকে তালিকাভুক্ত করা বা না-করার ব্যাপারে অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখতে পারবে।
- সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ভারত সরকার অনগ্রসর শ্রেণি জাতীয় কমিশন আইন ১৯৯৩ প্রণয়ন করে যাতে জাতীয় স্তরে ‘অনগ্রসর শ্রেণি জাতীয় কমিশন’ (ন্যাশনাল কমিশন ফর ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস) নামে একটি স্থায়ী সংস্থা গঠন করা যায়।
- ১৯৯৩-এর ২ এপ্রিল থেকে আইনটি কার্যকর হয়েছে। আইনের ৩নং ধারায় বলা হয়েছে, কমিশনে পাঁচ জন সদস্য থাকবে। এক জন চেয়্যারপারসন থাকবেন যিনি সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের বর্তমান বা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। সদস্য হিসাবে থাকবেন এক জন সমাজ বিজ্ঞানী, দু’জন এমন ব্যক্তি যাঁদের সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে প্রভূত জ্ঞান রয়েছে। থাকবেন একজন সদস্য-সচিব যিনি ভারত সরকারের সচিব পর্যায়ের অফিসার ছিলেন বা সেই পদে রয়েছেন।
সাংগঠনিক কাঠামো
এনসিবিসি আইন ১৯৯৩
- এই আইনকে ন্যাশানাল কমিশন ফর ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস অ্যাক্ট ১৯৯৩ বলা যায়।
- জম্মু ও কাশ্মীর ছাড়া গোটা ভারতের জন্য এই আইন প্রযোজ্য।
- ১৯৯৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এই আইন কার্যকর হয়েছে।
আরও তথ্যের জন্যঃ এনসিবিসি অ্যাক্ট ১৯৯৩।
সাংবিধানিক ব্যবস্থা
বৈষম্যে নিষেধাজ্ঞা
লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ এবং জন্মস্থানের ভিত্তিতে নাগরিকদের বৈষম্য করার বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ
- লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ বা জন্মস্থানের ভিত্তিতে বা এর কোনও একটির ভিত্তিতে রাষ্ট্র কোনও নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করতে পারবে না।
- লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও জন্মস্থানের কারণে কোনও নাগরিকই নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে কোনও রূপ প্রতিবন্ধকতা, দায়বদ্ধতা, বিধিনিষেধ বা শর্তের সম্মুখীন হবেন না। ---
- দোকান, পাবলিক রেস্তোঁরা, হোটেল এবং জনমনোরঞ্জনের জায়গায় যাওয়া বা
- আংশিক বা পুরোপুরি রাষ্ট্রের টাকায় রক্ষণাবেক্ষণ চলে বা জনসাধারণের ব্যবহারের উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত এমন কুয়ো, পুকুর, স্নানের ঘাট, রাস্তা, জনসাধারণের বিশ্রামের জায়গা ব্যবহার করা।
- এই অনুচ্ছেদের কোনও কিছুই রাষ্ট্রকে নারী ও শিশুদের জন্য কিছু বিশেষ ব্যবস্থা করা থেকে বিরত করতে পারবে না। (অর্থাৎ সংবিধান প্রদত্ত উপরোক্ত অধিকারগুলি ছাড়াও নারী ও শিশুদের জন্য রাষ্ট্র বিশেষ ব্যবস্থা নিতে পারবে।)
- সংবিধানের এই অনুচ্ছেদে বা ২৯ নম্বর অনুচ্ছেদের ২ নম্বর ধারায় এমন কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করা নেই যাতে রাষ্ট্র সামাজিক ও শিক্ষাগত ভাবে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য বা তফশিলি জাতি, উপজাতিদের জন্য আলাদা কিছু ব্যবস্থা করতে পারবে না। (অর্থাৎ সংবিধান প্রদত্ত উপরোক্ত অধিকারগুলি ছাড়াও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়, তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য রাষ্ট্র বিশেষ ব্যবস্থা নিতে পারবে।)
- সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ বা ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদের ১ নম্বর ধারার ‘ছ’ উপধারায় এমন কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করা নেই যাতে রাষ্ট্র সামাজিক ও শিক্ষাগত ভাবে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য বা তফশিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত নাগরিকদের জন্য সাহায্যপ্রাপ্ত বা বিনা সাহায্যপ্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বেসরকারি সহ, সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া) যোগদানের ব্যাপারে আলাদা ব্যবস্থা করতে পারবে না। (অনুচ্ছেদ ৩০ ধারা ১ অনুযায়ী উল্লিখিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান)
সরকারি চাকরিতে সমান সুযোগ
- রাষ্ট্রের অধীনস্থ অফিসে চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে সব নাগরিকরা সমান সুযোগ লাভের অধিকারী হবেন।
- শুধুমাত্র লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বংশ, জন্মস্থান ও বাসস্থান বা এর মধ্যে যে কোনও একটির ভিত্তিতে কোনও নাগরিককে রাষ্ট্রের অধীনে সরকারি চাকরি লাভের ক্ষেত্রে অনুপযুক্ত ধরা হবে না বা কোনও নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করা হবে না।
- কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অধীনে কোনও স্থানীয় বা অন্য কর্তৃপক্ষে চাকরি বা নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ বা চাকরির আগেই সংসদ আইন প্রণয়ন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ কোনও বাধা হতে পারবে না।
- রাষ্ট্র যদি মনে করে সরকারি চাকরিতে অনগ্রসর শ্রেণি নাগরিকদের যথেষ্ট প্রতিনিধিত্ব নেই, তা হলে সরকারি পদে তাঁদের নিয়োগের ক্ষেত্রে বা চাকরির ক্ষেত্রে রাষ্ট্র সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ সেখানে বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না।
- ২ (৪ক) --- চাকরিতে সিনিয়রিটি বা পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির নাগরিকদের জন্য রাষ্ট্র সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ কোনও বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না।
- ৪(৪বি)-সংবিধানের অনুচ্ছেদের ধারা ৪ ও ৪এ অনুযায়ী সৃষ্ট এক বছরের সংরক্ষিত চাকরি যদি উপযুক্ত প্রার্থীর অভাবে সেই বছর পূরণ করা সম্ভব না হয় তবে তা পরের বছর পূরণের জন্য আলাদা ভাবে বিবেচিত হবে। আগের বছরের শুন্য প পরের বছরের শূন্যপদের সঙ্গে যুক্ত করে সেই বছরের মোট সংরক্ষিত শূন্যপদের (মোট পঞ্চাশ শতাংশ) তালিকায় স্থান দেওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে সংবিধানের এই অনুচ্ছেদ কোনও বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না।
- কোনও ধর্মীয় সংস্থা বা গোষ্ঠী দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের কাজকর্ম চালানোর উপযুক্ত কোনও পদাধিকারী ব্যক্তি বা ওই প্রতিষ্ঠানের পরিচালন সমিতির কোনও সদস্য কোনও আইন বলে যদি কোনও বিশেষ ধর্মের অনুগামী বা কোনও গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হন তা হলে এই অনুচ্ছেদের কোনও কিছুই সেই আইন প্রয়োগের ব্যাপারে প্রভাব সৃষ্টি করতে পারবে না।
জাতীয় কমিশন
সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে অনগ্রসর শ্রেণির মানুষদের অবস্থা ও তাদের অসুবিধাগুলি অনুসন্ধান করে দেখা এবং সে ব্যাপারে যথাযথ সুপারিশ করার জন্য সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৪০ একটি কমিশন গড়ার কথা বলেছে। সংবিধানের ৩৪০ অনুচ্ছেদটি নিম্নরূপ :
- সংবিধানের ৩৪০ অনুচ্ছেদ মোতাবেক অনগ্রসর শ্রেণির অবস্থা খতিয়ে দেখার জন্য কমিশন গঠন করা ---
- রাষ্ট্রপতি যাঁদের উপযুক্ত বলে বিবেচনা করবেন তাঁদের নিয়ে কমিশন গঠন করতে পারেন। কমিশন ভারতের চৌহদ্দির মধ্যে সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির অবস্থা অনুসন্ধান করে দেখবে এবং শ্রেণিগুলি যে সব অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে তা দূর করার জন্য রাজ্য বা কেন্দ্রকে অবস্থা সাপেক্ষে বরাদ্দকৃত অর্থ মঞ্জুর করার কথা জানাবে। কমিশন গঠনের নির্দেশের মধ্যে এই কমিশন কীভাবে কাজ করবে তা বলা থাকবে।
- যে সব বিষয় কমিশনের দৃষ্টিগোচর করা হবে তারা তা খতিয়ে দেখবে এবং রাষ্ট্রপতির কাছে রিপোর্ট পেশ করে তাদের অনুসন্ধানের ফলাফল জানাবে ও তারা যেটা উপযুক্ত বলে বিবেচনা করে সেই ধরনের পরামর্শও দেবে।
- রাষ্ট্রপতি সেই রিপোর্টের কপি এবং এর ভিত্তিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেই সংক্রান্ত মেমোরান্ডামের কপি সংসদের উভয় কক্ষে পেশ করার ব্যবস্থা করবেন।
- সংবিধানের ৩৩৮(৫) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তফশিলি জাতির জন্য জাতীয় কমিশনের ক্ষমতা :
- এই কমিশন বা অন্য কোনও আইন বা সরকারি কোনও নির্দেশ বলে তফশিলি জাতি ও উপজাতির জন্য যে সব রক্ষাকবচের ব্যবস্থা আছে তা অনুসন্ধান ও নজরদারি এবং তার কাজকর্ম মূল্যায়ন করা
- তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের অধিকার ও রক্ষাকবচ থেকে বঞ্চনার কোনও নির্দিষ্ট অভিযোগ এলে সে ব্যাপারে তদন্ত করা
- তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করা ও পরামর্শ দেওয়া এবং কেন্দ্র ও রাজ্যের সেই সব উন্নয়ন পরিকল্পনার অগ্রগতি মূল্যায়ন করা
- তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য গৃহীত রক্ষাকবচের কাজকর্ম সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে বার্ষিক এবং কমিশন যে সময় উপযুক্ত বলে মনে করবে সেই সময়ে রিপোর্ট পেশ করা
- ওই রক্ষাকবচ কার্যকর ভাবে রূপায়িত করতে এবং তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের সুরক্ষা, কল্যাণ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ব্যাপারে রাষ্ট্র ও রাজ্যগুলি কী ব্যবস্থা নিতে পারে সে সম্পর্কে ওই রিপোর্টে সুপারিশ করা
- তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের সুরক্ষা, কল্যাণ, উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য সংসদের যে কোনও আইন ও তার নির্দিষ্ট বিধি মোতাবেক রাষ্ট্রপতি যা উপযুক্ত বলে বিবেচনা করেন এমন যে কোনও কাজ করা
- ওই অনুচ্ছেদের ১০ নম্বর ধারা অনুসারে ‘তফশিলি জাতি’ শব্দগুচ্ছের মধ্যে অনগ্রসর শ্রেণিকেও ধরতে হবে। ৩৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদের ১০ নম্বর ধারা নিম্নরূপ :
- ধারা ১০ --- এই অনুচ্ছেদে তফশিলি জাতি ও উপজাতির যে উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে সেই সব অনগ্রসর শ্রেণিরও উল্লেখ আছে বলে ধরে নিতে হবে ৩৪০ অনুচ্ছেদের ১ নম্বর ধারা অনুযায়ী গঠিত কমিশনের সুপারিশক্রমে রাষ্ট্রপতি যাদের নির্দিষ্ট করবেন। অ্যাংলো ইন্ডিয়ানরাও অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত হবেন।
সূত্র : অনগ্রসর শ্রেণির জন্য গঠিত জাতীয় কমিশন।
উৎস : পোর্টাল কন্টেন্ট দল
সর্বশেষ সংশোধন করা : 2/14/2020
0 রেটিং / মূল্যাঙ্কন এবং 0 মন্তব্য
তারকাগুলির ওপর ঘোরান এবং তারপর মূল্যাঙ্কন করতে ক্লিক করুন.
© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.