ওবিসি ছাত্রদের জন্য ম্যাট্রিক-পূর্ববর্তী বৃত্তি
উদ্দেশ্য
- স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমাদের দেশে সাক্ষরতার হার এমন কিছু উল্লেখযোগ্য নয়। সাক্ষরতার হারে বেশ পিছিয়ে রয়েছে অনগ্রসর শ্রেণিও। বিশেষ করে এই শ্রেণির অন্তর্গত মহিলারা শিক্ষার হারের দিক দিয়ে উল্লেখযোগ্য ভাবে পিছিয়ে। নানা সময় দেশের সরকার সাক্ষরতার হার বাড়ানোর জন্য নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও কাঙ্খিত মানে পৌঁছতে এখনও কিছুটা সময় লাগবে। দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মানোন্নয়নের জন্য সাক্ষরতার হারের বৃদ্ধি দরকার। সাধারণ নাগরিক ও অনগ্রসর শ্রেণির মধ্যে তুলনামূলক হিসাব নিয়ে দেখা গিয়েছে অনগ্রসর শ্রেণির নাগরিকদের মধ্যে শিক্ষার হার কম থাকায় তারা অর্থনৈতিক দিক দিয়েও পিছিয়ে রয়েছে। তাদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে যাতে তারা জনসংখ্যার বাকি অংশের সঙ্গে সমান তালে পা ফেলতে পারে।
- ওবিসিদের মধ্যে মহিলাদের সাক্ষরতার হার সত্যিকারের চিন্তার বিষয়। মহিলারা পরিবারের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁদের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার শুধুমাত্র যে ক্ষমতায়ন বা স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ, তা-ই নয়, এর ফলে এই সম্প্রদায়ভুক্তদের এবং গোটা দেশের সার্বিক সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে।
- অভিজ্ঞতা বলছে, অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত শিশুদের একটা বড় অংশ স্কুলে যেতে পারে না তার কারণ তাদের বাড়িতে বড়দের কাজে সাহায্য করতে হয় কিংবা অন্য ভাবে রোজগার করে পরিবারকে সাহায্য করতে হয়। যদি এই ধরনের শিশুদের জন্য, বিশেষ করে দুর্বল শ্রেণির কন্যাসন্তানদের জন্য ম্যাট্রিক-পূর্ববর্তী বৃত্তির ব্যবস্থা করা যায় তা হলে তাদের মধ্যে শিক্ষা ছড়িয়ে পড়বে। এই লক্ষ্য মাথায় রেখেই এই প্রকল্প চালু করা হয়।
সুযোগ
ওবিসিদের মধ্যে একটা বড় অংশই দারিদ্র্যসীমার দ্বিগুণ নীচে বাস করে। আসলে ওবিসিদের মধ্যেও আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে নানা ভাগ রয়েছে। তাই শুরুতে ঠিক হয়েছে, দারিদ্র্যসীমার দ্বিগুণ নীচে বাস করা ওবিসি বাবা-মায়েদের স্কুলে পড়া সন্তানরাই এই বৃত্তি পাবে।
যোগ্যতা
যে সব ওবিসি বাবা-মায়েদের রোজগার সব সূত্র মিলিয়ে বছরে ৪৪,৫০০ টাকার বেশি নয়, তাঁদের সন্তানরাই বৃত্তি লাভের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
- টীকা-১— ছাত্র-ছাত্রীর বাবা-মা বেঁচে থাকলে একমাত্র তাদের বার্ষিক রোজগার এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য। বিবাহিতা ছাত্রীর ক্ষেত্রে একমাত্র তার স্বামীর রোজগারই বিবেচনাধীন হবে। পরিবারের অন্য কেউ উপার্জনশীল হলেও তার উপার্জন এ ক্ষেত্রে ধর্তব্য নয়। ফর্মে এর ভিত্তিতেই পারিবারিক রোজগারের উল্লেখ করতে হবে। উপার্জনশীল বাবা-মার মৃত্যু হলে বা বিবাহিতা ছাত্রীর ক্ষেত্রে তার স্বামীর মৃত্যু হলে তবেই পরিবারের যার রোজগারের উপর সে নির্ভরশীল তার বার্ষিক আয় বৃত্তি পাওয়ার নিরিখ হিসাবে বিবেচ্য হবে। রোজগেরে বাবা-মার মধ্যে কোনও এক জনের মৃত্যুতে পারিবারিক রোজগার যদি সিলিংয়ের অন্তর্ভুক্ত হয় তা হলে যে মাসে ওই দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, সেই মাস থেকে ওই ছাত্র বা ছাত্রী বৃত্তি পাওয়ার অধিকারী বলে বিবেচ্য হবে। আবেদন করার শেষ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও মানবিকতার খাতিরে এ ধরনের ছাত্র-ছাত্রীর আবেদন গণ্য করা হবে।
- টীকা-২—আয়করের ক্ষেত্রে যদি প্রাপ্য বাড়িভাড়া বিবেচ্য না হয় তাহলে রোজগেরে বাবা-মার মোট রোজগার থেকে বাড়ি ভাড়ার অংশটি বাদ দিয়ে বাকি রোজগারকে বিবেচ্য বলে ধরে নিতে হবে।
- টীকা-৩—এক বছরের বেশি মেয়াদি পাঠক্রমের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ভর্তির সময়েই আয়ের শংসাপত্র নেওয়া যাবে।
পাঠক্রমের মেয়াদ
বাড়ি থেকে পড়তে যায় এমন ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণি থেকে এ ধরনের বৃত্তি দেওয়া হবে। হোস্টেলে থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের তৃতীয় শ্রেণি থেকে বৃত্তি পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচনা করতে হবে। দশম শ্রেণির শেষে বৃত্তির মেয়াদ শেষ হবে। এক একটি শিক্ষাবর্ষে দশ মাসের জন্য বৃত্তি দেওয়া হবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
রাজ্য সরকার বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল কর্তৃক স্বীকৃত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরাই বৃত্তি পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
বৃত্তি ও এককালীন অনুদানের পরিমাণ
হোস্টেলের আবাসিকদের জন্য
- হোস্টেলের আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীরা তৃতীয় শ্রেণি থেক দশম শ্রেণি পর্যন্ত বৃত্তি পাবে নিম্নলিখিত হারে—
- তৃতীয় শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি মাসে ২০০টাকা করে বছরে দশ মাস।
- নবম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাসে ২৫০ টাকা হারে বছরে দশ মাস।
ডে স্কলার
বাড়ি থেকে স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করে এমন ছাত্র-ছাত্রীদের প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত হারে বৃত্তি দেওয়া হবে—
- প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ২৫ টাকা প্রতি মাসে হিসাব করে বছরে দশ মাস।
- ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি মাসে ৪০ টাকা হারে বছরে দশ মাস।
- নবম ও দশম শ্রেণিতে প্রতি মাসে ৫০ টাকা হারে প্রতি বছরে দশ মাস।
এককালীন অনুদান
- প্রতি বছর পাঁচশো টাকা হারে ডে স্কলার এবং হোস্টেলে থাকা ছাত্র-ছাত্রীদের এককালীন অনুদান দেওয়া হয়।
- স্কুলে যোগদানের দিন এবং স্কুল ছাড়ার দিন হিসাব করে বছরে ছুটি বাদ দিয়ে দশ মাস স্কুল হয় এই হিসাব করে অ্যাডহক অনুদানের পরিমাণ স্থির করা হয়। যদি ওই ছাত্র বা ছাত্রী শিক্ষাবর্ষের মাঝপথে পড়া ছেড়ে দেয় বা শিক্ষাবর্ষের মাঝপথে স্কুলে ভর্তি হয় তা হলে যে দিন থেকে সে স্কুল ছাড়েছ বা ভর্তি হচ্ছে সেই দিনটিকে ধরেই অনুদানের হিসাব করা হবে।
সুত্র
আরও তথ্যের জন্যঃ— সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক।
সর্বশেষ সংশোধন করা : 1/28/2020
0 রেটিং / মূল্যাঙ্কন এবং 0 মন্তব্য
তারকাগুলির ওপর ঘোরান এবং তারপর মূল্যাঙ্কন করতে ক্লিক করুন.
© C–DAC.All content appearing on the vikaspedia portal is through collaborative effort of vikaspedia and its partners.We encourage you to use and share the content in a respectful and fair manner. Please leave all source links intact and adhere to applicable copyright and intellectual property guidelines and laws.