দক্ষতা এবং জ্ঞান যে কোনও দেশের সামাজিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি। যে দেশের উন্নত মানের দক্ষতা রয়েছে তারা কাজের ক্ষেত্রে তত ভালো ভাবে চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে সক্ষম। দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য হল সব ধরনের শ্রমিককে এর আওতায় নিয়ে আসা। যারা প্রথম শ্রমের বাজারে প্রবেশ করেছে তাদের ক্ষেত্রেও (বছরে প্রায় ১ কোটি ২৯ লক্ষ) দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। এ ছাড়া সংগঠিত ক্ষেত্রের ২৬ কোটি এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের প্রায় ৪৩ কোটি (২০০৪-৫ সালের হিসাব অনুযায়ী) শ্রমিককেও এর আওতায় নিয়ে আসা দরকার। ভারতে বর্তমানে দক্ষতাবৃদ্ধি কর্মসূচির আওতায় এসেছে প্রায় ৩০ লক্ষ শ্রমিক। ২০২২ সালের মধ্যে পঞ্চাশ কোটি শ্রমিককে এই প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে।
ব্রত, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
ব্রত
এই নীতি অনুসারে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে নিম্নলিখিত ব্রতকে সামনে রেখে।
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন উদ্যোগ সবাইকে উন্নত দক্ষতা, জ্ঞানের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবে যাতে তাঁরা সুষ্ঠু কাজ পেতে সক্ষম হন এবং বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতায় ভারতের স্থানকে সুদৃঢ করতে পারেন।
লক্ষ্য
জাতীয় দক্ষতা বৃদ্ধি কর্মসূচির লক্ষ্য দ্রুত ও সুসংহত বৃদ্ধি সুনিশ্চিত করা। এর জন্য—
পরিবর্তনশীল কারিগরি কৌশল ও শ্রমের বাজারের সমসাময়িক চাহিদার দিকে নজর রেখে ব্যক্তির কাজ পাওয়ার সুযোগের বৃদ্ধি (মজুরি শ্রম কিংবা স্বনিযুক্তির মাধ্যমে)।
ব্যক্তির উৎপাদনশীলতা ও জীবনযাপনের মানোন্নয়ন করা।
দেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে সুদৃঢ় করা।
দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ নিয়ে আসা।
উদ্দেশ্য
দক্ষতা বৃদ্ধির জাতীয় নীতির উদ্দেশ্য --
প্রত্যেকের জন্য, বিশেষ করে তরুণ সমাজ, মহিলা ও পিছিয়ে পড়া মানুষজনের জন্য সারা জীবন ধরে দক্ষতা বৃদ্ধি শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা।
নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রত্যেককে দৃঢ়প্রত্যয়ী করে তোলা।
চলতি ক্রমবর্ধমান শ্রম বাজারের চাহিদার দিকে তাকিয়ে উন্নত মানের শ্রমিক ও উদ্যোগী তৈরি করা।
যাঁদের এই সুযোগ নেওয়ার প্রয়োজন তাঁদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এই ধরনের শিক্ষা যাতে সহজে পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই ব্যবস্থা সৃষ্টি করা।
সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, কেন্দ্র ও রাজ্যের বিভিন্ন মন্ত্রকের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় গড়ে তোলা।
নীতির এক্তিয়ার
দক্ষতা বৃদ্ধির জাতীয় নীতির আওতায় রয়েছে---
প্রতিষ্ঠানভিত্তিক দক্ষতা বৃদ্ধি, যেমন আইটিআই/আইটিসি/বৃত্তিমূলক শিক্ষার স্কুল/কারিগরি স্কুল/পলিটেকনিক/পেশাদার কলেজ প্রভৃতি।
বিভিন্ন মন্ত্রক ও দফতরের নেওয়া দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ উদ্যোগ।
বিভিন্ন উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক ও ঘরোয়া শিক্ষানবিশি কার্যক্রম।
স্বনিযুক্তি ও স্ব-উদ্যোগের জন্য প্রশিক্ষণ।
বয়স্কদের শিক্ষা, অবসরপ্রাপ্ত বা যারা অবসর নিতে যাচ্ছেন তাঁদের জন্য পুনঃপ্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, সারা জীবন প্রশিক্ষণ পাওয়ার ব্যবস্থা বজায় রাখা।
ঘরোয়া প্রশিক্ষণ (যেমন বিভিন্ন নাগরিক সমাজের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি)।
ই-লার্নিং, ওয়েব নির্ভর প্রশিক্ষণ এবং দূর-প্রশিক্ষণ।
জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নিগম
১৯৫৬ সালের কোম্পানিজ অ্যাক্ট অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত এটি একটি মুনাফাবিহীন প্রতিষ্ঠান যার যথাযথ পরিচালন কাঠামো রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চপদে আসীন দক্ষতাবৃদ্ধি সম্পর্কিত ব্যাপারে একজন সফল/নামী পেশাদার। নিগমের কয়েকটি সেক্টর স্কিলস কাউন্সিল থাকবে যার কাজ হবে --
দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচিতে কোন কোন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, কতটা বিস্তৃত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে, পাঠক্রমের গভীরতা কতটা হবে সেগুলি চিহ্নিত করে ক্যাটালগ তৈরি করা।
বিভাগীয় দক্ষতা বৃদ্ধি উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরি করা এবং স্কিল ইনভেন্টরি গঠন।
দক্ষতা/প্রতিযোগিতার নির্দিষ্ট মান ও শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ণয়।
সংযুক্তিকরণ (অ্যাফিলিয়েশন) ও স্বীকৃতিকরণ (অ্যাক্রিডিটেশন) প্রক্রিয়ার মান নির্ধারণ করা।
সংযুক্তিকরণ, স্বীকৃতিকরণ, পরীক্ষা ও শংসাপত্র প্রদানে অংশগ্রহণ।
প্রশিক্ষকদের পরিকল্পনা ও তা কার্যকর করার জন্য প্রশিক্ষণ।
দক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তুলে ধরা।
বিভাগ নির্ভর সুপরিকাঠামোযুক্ত একটি লেবার মারকেট ইনফরমেশন সিস্টেম (এলএমআইএস) গড়ে তোলা যাতে প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা ও প্রদানে সাহায্য করা যায়।