প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৫ সালের ৮-ই এপ্রিল, প্রতিশ্রুত ২০,০০০ কোটি টাকার সংকলন ও ৩,০০০ কোটি টাকার প্রতিশ্রুত জমার সংকলন সহ মাইক্রো ইউনিটস্ ডেভলপমেন্ট আ্যন্ড রিফাইন্যান্স এজেন্সী লিমিটেড (মুদ্রা) ব্যাংক চালু করেন। প্রবর্তনটির কার্যকারীতার কথা অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলী তাঁর ১৫-১৬ আর্থিক বছরের বাজেট বক্তৃতায় আগাম ঘোষণা করেন।
অধিকাংশ ব্যাক্তি, বিশেষত যারা ভারতের গ্রামীণ ও অভ্যন্তরীণ অংশে বসবাস করে, তারা বিধিসম্মত ব্যাংকিং প্রথার সুবিাগুলি থেকে বর্হিভূত রয়ে যায়। তাছাড়াও, তারা তাদের স্থাপণা ও তাদের ক্ষু্দ্র ব্যবসার উন্নতিতে কখনই বীমা, আমানত, ঋণ ও অন্যান্য আর্থিক দলিলের সাহায্য উপলব্ধি করতে পারে না। অর্থাৎ, অধিকাংশ লোক আমানতের জন্য স্থানীয় মহাজনদের উপর নির্ভর করে। এই ঋণ চড়া সুদে নেয় এবং প্রায়ই অসহনীয় অবস্থায় উপনীত হয়, যা এইভাবেই গরীব মানুষগুলিকে প্রজন্ম ধরে ঋণ-ফাঁদে ফেলে আসছে। যখন ব্যবসায় ব্যর্থ হয়, তখন ঋণ-গ্রহীতারা, ঋণ-দাতাদের কৌশলী পন্থার দৃঢ়-হস্তে এবং অন্যান্য মানহানিকর ফাঁদে পতিত হয়ে পড়ে।
২০১৩ সালের এন.এস.এস.ও-র নিরীক্ষণ অনুযায়ী, দেশে একক মালিকানার প্রায় ৫.৭৭ কোটির কাছাকাছি ক্ষুদ্র-মাপের ব্যবসায়িক একক রয়েছে, যা ব্যবসায়ীকরণ, উৎপাদন, খুচরো বিক্রেতা ও অন্যান্য ছোট-মাপের কার্যক্রমগুলি গ্রহণ করে। তুলনা করুন যেখানে সংগঠিত ক্ষেত্র ও বৃহৎ সংস্থায় ১.২৫ কোটি ব্যাক্তি চাকরি করেন। স্পষ্টতই, এই ক্ষু্দ্র ব্যবসাগুলির সম্ভাব্য সাজসরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণ হল সুবিশাল এবং এটি সরকার দ্বারা স্বীকৃত। বর্তমানে, এই অংশগুলি অনিয়ন্ত্রিত ও আর্থিক সহায়তা বা সংগঠিত আর্থিক ব্যাংকিং প্রথার আবরণ থেকে বিমুক্ত।
মুদ্রা ব্যাংক আইনতভাবে ঋণ-গ্রহীতাদেরকে তিনটি খন্ডে পর্যায়ভুক্ত করেছে : প্রাথমিক, মধ্য পর্যায়ে অর্থ প্রার্থী ও পরবর্তী পর্যায়ের উন্নত প্রার্থী।
তিনটি খন্ডের মোকাবিলার জন্য, মুদ্রা ব্যাংক তিনটি ঋণ দলিল চালু করেছেন :
শিশু : ৫০,০০০/- টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়।
কিশোর : ৫০,০০০/- টাকার পর থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়।
তরুণ : ৫ লাখ টাকার পর থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়।
প্রাথমিভাবে, কিছু নির্দিষ্ট-ক্ষেত্রের মধ্যে প্রকল্পটি সীমাবদ্ধ করা হবে – “জমি, পরিবহন, গোষ্ঠী-সম্প্রদায়, সমাজ ও ব্যাক্তিগত পরিষেবা, খাদ্য দ্রব্য ও বস্ত্র পণ্য ক্ষেত্র”। পরে আরোও অন্যান্য ক্ষেত্রগুলিকে পরিবেষ্টিত করতে নুতন প্রকল্প চালু করা হবে।
ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তাবিত কিছু পরিকল্পনা :
মুদ্রা সত্যিই কি ভারতের জন্য দফা পরিবর্তনকারী হতে পারে?
হ্যাঁ এটি সম্ভব। বিদ্যমান জনপরিসংখ্যান লক্ষ্য করুন। ভারতীয়দের অধিকাংশই গরীব এবং বেশিরভাগই গ্রামীণ ও অভ্যন্তরীণ অংশে বসবাস করে। তাদের অধিকাংশই প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে যা এমনকি ভারতীয় মানদন্ডে, খুবই মৌলিক বলা যেতে পারে।
অধিকাংশ মানুষেরই কাজ না থাকা সত্ত্বেও কৃষিজমি উপলব্ধ নেই, তাদের নিজেদের খাদ্য গ্রহন ও বেঁচে থকার জন্য কোনও সৃজনশীলতা নেই। তারা অর্থের বিনিময়ে এটা-ওটা কাজ করা বা তাদের সেবা বিনিময়ের উপায় চিন্তা করে। এই মানুষগুলির অধিকাংশই তপশিলী জাতি, তপশিলী উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর সম্প্রদায়ভূক্ত। এটি উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ক্ষুদ্র এন্ট্যারপ্রাইজ, খুচরো বিক্রেতা বা ব্যবসায়ীকরণের কার্যকলাপের অধিকাংশই মহিলাদের দ্বারা প্রবর্তিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়, যেখানে শিক্ষা, আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ বা ব্যাঙ্কিং সমর্থনের কোনরূপ গঠনের উপলব্ধতার কোনও অবকাশ নেই।
এখন দৃষ্টিগোচর করা যাক। যদি ভারত এই এন্ট্যারপ্রাইজের মুক্ত সারমর্মকে সামঞ্জস্য প্রদান করতে পারে এবং জি.ডি.পি-কে সম্ভাব্য তাৎক্ষণিক উর্দ্ধমুখী করতে কিছু নির্দেশিকা, সমর্থন, প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব দিতে পারে, যা সেখানে খুবই দরকার। নরেন্দ্র মোদী এটি উপলব্ধি করেছেন এবং এই অনু্চ্চ ফলাফলের সম্ভাবনা সুস্পষ্ট ছিল।
যদি মুদ্রা, সুবিধাবঞ্চিতদের উপর আলোকপাত করাকে অব্যাহত রাখতে পারে এবং এটির প্রসারণ অন্তস্থলগুলিতেও পৌঁছে দেওয়া যায়, তবে এটি একটি বড় সাফল্যের গল্প হিসাবে বাংলাদেশের গ্রামীণ ব্যাংকের তুলনায় আরোও ভালোভাবে উত্থান করা যেতে পারে।
এখানে একটি পুরনো কথা প্রচলিত আছে যা এই প্রসঙ্গে বলা চলে : “আপনি একদিন একজন মানুষকে একটি মাছ খেতে দিন, তাকে শিখিয়ে দিন মাছ কিভাবে আসবে এবং তিনি আর কখনই ক্ষুধার্ত থাকবেন না”। মুদ্রা ব্যাংক হল সরকারের দ্বারা নেওয়া একটি পদক্ষেপ যা উদ্যোক্তাদের একটি নতুন সঙ্কল্পের জন্ম দিতে একটি দফা পরিবর্তনকারী হতে পারে, যাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন যারা উচ্চ মহিমায় থাকতে পারেন, তারা আজকের দিনে এটিকে কল্পনা করতে পারবেন না। এটি ভর্তুকি প্রদানের তুলনায় অনেক ভালো, প্রথমে স্বাগত হতে পারে, তবে একজন ব্যাক্তির এক উন্নত জীবনের সংগ্রামে একটু কিছু হলেও সাহায্য করবে। মুদ্রা হল সক্রিয়তার একটি অভিনব পথ।
মুদ্রা ব্যাংকের কার্যকারিতার প্রকারতার জায়গা আছে এবং এটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে তহবিলের কাজকর্ম মাইক্রোফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলির দ্বারাই সম্পন্ন করা হবে। যদিও, ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলিকে মুদ্রা ব্যাংকের উপর সম্পূর্ণ তথ্য পেতে এবং কারা কারা ঋণের জন্য যোগ্য তার উপর স্বচ্ছ ধারণা ও এই প্রকল্পের সুবিধা কিভাবে পাবেন, এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
ভারতের ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন ব্যাংক (দ্য স্মল ইন্ড্যাস্ট্রিজ ডেভলোপম্যন্ট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া) – এর সম্পূরক হিসাবে মুদ্রা ব্যাংককে সর্বপ্রথম গড়ে তোলা হবে এবং পরে পার্লামেন্ট বা সংসদের একটি আইনের মাধ্যমে এটিকে একটি পূ্র্ণাঙ্গ ব্যাংকে রূপান্তরিত করা হবে। যেখানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মূখ্য ব্যাক্তি এবং এছাড়াও ভারতের রাষ্ট্রপতি উপস্থিত ছিলেন। যদিও আধিয়া মুদ্রা ব্যাংকের স্থাপণ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে কোনওকিছু প্রকাশ করেন নি, তিনি এটি বলেন যে, প্রধান মন্ত্রী খুব শীঘ্রই এটি চালু করবেন।
মুদ্রা ব্যাংক, ১৯-টি রাজ্য এবং আঞ্চলিক পর্যায়ের সমন্বয়কারী – দের সঙ্গে যৌথভাবে হাত মিলিয়ে রয়েছে, যাদের সীমিত শাখা বর্তমান এবং সাধারণ ব্যাঙ্কিং পদ্ধতি থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সরকারের দ্বারা গৃহীত উদ্যোগটি ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র (মাইক্রো) ব্যাবসার জন্য সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়। এটিও আশা করা হচ্ছে যে, এই ব্যাবসাগুলি চাকরীর চেয়ে ১০ গুণ বেশি সংখ্যায় উৎপাদন করবে যা বর্তমানে সাধারণত বৃহৎ ব্যবসায়িক সংস্থা/ফার্ম-গুলির দ্বারা উৎপাদিত হয়।
সুত্র : বিকাসপিডিয়া কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট টীম
সর্বশেষ সংশোধন করা : 7/11/2020